‘গণরুম’ বিলুপ্তির দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মশাল মিছিল
‘মেধা ও স্বাধীন সত্ত্বা ধ্বংসের আস্তানা, গণরুম ব্যবস্থা নিপাত যাক’ স্লোগানকে সামনে রেখে গণরুম সংস্কৃতির বিরুদ্ধে মশাল মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে শুরু করে উপাচার্যের বাসভবন পর্যন্ত ‘গণরুম’ সংস্কৃতি বিলুপ্তি ও হলগুলোর অব্যবস্থাপনায় ৪দফা দাবিতে এই মশাল মিছিল করেন তারা।
তাদের দাবিগুলো হল- অবিলম্বে গণরুম সংস্কৃতি বিলোপ করে শিক্ষার্থীদের বৈধ সিট নিশ্চিত করতে হবে, অবৈধ শিক্ষার্থীদের অবিলম্বে হল থেকে বহিস্কার করতে হবে, নতুন সব হল চালু করে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে হবে ও পর্যাপ্ত ভর্তুকি দিয়ে ডাইনিং গুলোকে মানসম্মত করতে হবে।
এসময় সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক কনোজ কান্তি রায় বলেন, এই প্রশাসনের শরীরে যেন গন্ডারের চামরা আছে। বার বার এই মেধা বিধ্বংসী গেস্টরুম-গণরুম বিলুপ্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েও প্রশাসন তার প্রতিশ্রুতি রাখেনি। তাদের এই গাদ্দারীর ইতিহাস ভেঙে দিতে হবে। প্রশাসনের কালো হাত ক্ষমতাসীনদের লেজুরবৃত্তির করছে। সাবেক উপাচার্য যে পাপের জন্য পরিতাজ্য হয়েছিলেন, বর্তমান প্রশাসনকেও এই লেজুরবৃত্তির জন্য পরিতাজ্য করতে বাধ্য করা হবে।
আরও পড়ুন: আতঙ্কে গণরুম ছাড়ছেন ইবি শিক্ষার্থীরা
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচি বলেন, গণরুম-গেস্টরুম স্পষ্টতই একটি মেধা বিধ্বংসী ব্যবস্থা। নবীন শিক্ষার্থীদের মেরুদণ্ডকে স্রেফ ভেঙ্গে ফেলার উদ্দেশ্যে বিশেষ রাজনৈতিক কারণেই এই গণরুম ব্যবস্থা জিইয়ে রেখেছে প্রশাসন। প্রশাসনের এই প্রবল স্বৈরাচারী বৃত্তকে ভেঙেচুড়ে, বৈধ শিক্ষার্থীদের বৈধ সিট নিশ্চিতকরণে এবং হল দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে আমাদের দাবি মানতে হবে। নতুন সব হল চালু করতে হবে এবং প্রশাসনকে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের হাতের পুতুলের চরিত্র থেকে বেরিয়ে প্রতিটি হলে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে হবে।
গেস্টরুম কালচারের ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১ ব্যাচের সজীব হাসান বলেন, ক্লাস শুরুর প্রথম দিন থেকে সিনিয়ররা আমাদের নানারকম রেস্ট্রিকশন দিয়ে রেখেছে। সারাদিন যেন ভয়ে ভয়ে থাকি। আমরা ক্যান্টিনে খেতে পারি না, ডাইনিংয়ে খেতে পারি না। এই ভয়ানক পরিস্থিতিতে শিক্ষা গ্রহণের কোন সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। আমরা জেনেছি নতুন হলগুলোর প্রায় ৯৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। আমাদের নবীনদের অবিলম্বে নতুন হলে পূর্ণাঙ্গ আবাসিক সিট নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।
আরও পড়ুন: হাইকোর্টের নির্দেশনার পর ক্যাম্পাস ছাড়লেন অন্তরা-তাবাসসুম
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অমর্ত্য রায় বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীনদের স্বপ্ন ভেঙে যায় তখন, যখন এসে তার মাথা গোজার জায়গা দেখে না,টেবিল চেয়ার দেখে না। এই প্রশাসনের অছাত্রদের উপর কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। তারা থাকছে আয়েশী কক্ষে আর নবীনরা গণরুমে গাঁদাগাদি করছে। গেস্টরুম সংস্কৃতির মাধ্যমে নবীন প্রজন্মদের তৈরি করছে ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক দাস হিসেবে, তৈরি করছে অনুগত কিছু উশৃংখল গুন্ডা ও সন্ত্রাসীগোষ্ঠী।
তিনি আরও বলেন, প্রশাসন গণরুম-গেস্টরুম বিলুপ্তি করতে আজ পর্যন্ত বহুবার আশ্বাস দিয়েছে। তবে প্রশাসনের এই গালভরা বুলিতে কাজ হবে না। মশাল মিছিলের প্রত্যেকটা আগুন আমাদের দহনের আগুন। আজ থেকে আমরা ১৫ দিনের আল্টিমেটাম দিচ্ছি। আমাদের দাবি না মানলে আগামী পহেলা মার্চ রেজিস্ট্রার ভবন অবরোধ করা হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসানের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয় নি।