সেশনজটে নাকাল রাবির ৫৬ বিভাগ, চাপে দরিদ্র শিক্ষার্থীরা
- মারুফ হোসেন মিশন, রাবি
- প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯:০৬ AM , আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯:০৬ AM
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) সেশনজটে আটকা পড়ে দীর্ঘতর হচ্ছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন। প্রতিটি অনুষদের সেশনজট হওয়া অনেকে স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষকদের উদাসীনতা, শিক্ষক সংকট, কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে সংশ্লিষ্টদের কার্যকরী পদক্ষেপ না থাকাসহ নানা কারণকে এ জন্য দায়ী করছেন শিক্ষার্থীরা। এভাবে শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে নষ্ট হচ্ছে বছরের পর বছর। তাদের দাবি, সেশনজটের অভিশাপ মুক্তি দিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২টি অনুষদের অধীনে মোট বিভাগ রয়েছে ৬১টি। এর মধ্যে সেশনজটমুক্ত মাত্র পাঁচটি বিভাগ। বাকি ৫৬টি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা তিন বছর পার করেও এখনো তৃতীয় বর্ষেই উঠতে পারেননি।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সেশনজট তাদের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে সংশ্লিষ্টদের কার্যকরী পদক্ষেপ না থাকায় এ সেশনজটের সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও বিষয়টি স্বীকার করছেন। বিভাগ সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতার ঘাটতির পাশাপাশি নিয়োগ কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় সৃষ্ট শিক্ষক সংকটকে দায়ী করছেন তারা।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের তৃতীয় বর্ষের ক্লাস শুরু হয়েছে আগস্ট মাস থেকে। গণিত বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ক্লাস শুরু হয়েছে ৩০ অক্টোবর, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ১৩ নভেম্বর, ফলিত গণিত বিভাগের ১০ নভেম্বর এবং প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের ৮ ডিসেম্বর থেকে।
অন্যদিকে, বাকি বিভাগগুলো অধিকাংশ বিভাগের ২০১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের এখনো দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাস চলছে। কয়েকটি বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা চলছে। কয়েকটিতে চূড়ান্ত পরীক্ষা শিগগিরই শুরু হবে। এছাড়া এমনও বিভাগ রয়েছে যেখানে ২০১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাস এখনও শুরু হয়নি। এ অবস্থায় চরম হতাশা প্রকাশ করেছেন সেশনজটে ভোগা শিক্ষার্থীরা।
সেশনজটমুক্ত ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সোহান ইসলাম নাহিদ বলেন, আমাদের বিভাগে সেশনজট না থাকার কারণ হচ্ছে বিভাগের সভাপতিসহ শিক্ষকদের আন্তরিকতা এবং সময়মতো ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়া। এছাড়া করোনাকালীন ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবং বিভাগকে গতিশীল রাখতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক সহযোগিতা বিভাগে সেশনজট না থাকার বড় একটা কারণ।
অন্যদিকে সেশনজটে আটকে থাকা অর্থনীতি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, কোভিড-১৯ এর কারণে দীর্ঘ দেড় বছরের যে সেশনজট সৃষ্টি হয়েছে, তা কমিয়ে আনার বিষয়ে প্রশাসনের তেমন কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছি না। এখনও প্রতিটি সেমিস্টার শেষ করতে ছয় মাস বা তারও বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ক্লাস শুরু করে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এসে তৃতীয় সেমিস্টার এক্সাম দিচ্ছি। অর্থাৎ তিন বছরে শেষ হচ্ছে মাত্র তিন সেমিস্টার। আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য এটি অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরো পড়ুন: ফারদিনের আত্মহত্যা যে কারণে, জানালেন ডিবি প্রধান
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশকিছু বিভাগে সেশনজট আছে, এটা সত্য। একটা সময় ছিল যখন চার বছরের প্রোগ্রাম শেষ হতে সাত-আট বছর লেগে যেত। সে তুলনায় এখন সেশনজট অনেক কমেছে। বর্তমানে পাঁচ বছরের প্রোগ্রাম শেষ হতে আনুমানিক ছয়-সাড়ে ছয় বছর লেগে যায়।
সেশনজটের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেশনজট সৃষ্টির অনেকগুলো কারণ আছে। কোভিড-১৯ এর কারণে আমরা অনেকটা পিছিয়ে পড়েছি। আবার নিয়োগ কার্যক্রমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা থাকায় বর্তমানে কিছুটা শিক্ষক সংকটও রয়েছে। আমরা প্রশাসনিকভাবে সেশনজট কামিয়ে আনার চেষ্টা করছি। তবে রাতারাতি এটাকে জিরো লেভেলে আনা সম্ভব না।
পাঁচটি বিভাগ অন্যান্য বিভাগের তুলনায় সেশনজটমুক্ত কিভাবে? জানতে চাইলে অধ্যাপক হুমায়ুন বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্ত্বশাসিত হওয়ায় সেটির প্রভাবও কিছুটা রয়েছে এখানে। যে বিভাগগুলো এগিয়ে গেছে তাদের হয়তো চেষ্টা ও আন্তরিকতা ছিল বা তাদের অন্যান্য জটিলতা নেই। আর অন্যান্য বিভাগগুলো পিছিয়ে পড়ার পিছনে শিক্ষক স্বল্পতাও একটা কারণ হতে পারে।