কুয়াশার চাদরে ঢাকা রাবি, মোড়ে মোড়ে সুস্বাদু পিঠাপুলির উৎসব

কুয়াশার চাদরে ঢাকা রাবি ক্যাম্পাস
কুয়াশার চাদরে ঢাকা রাবি ক্যাম্পাস  © টিডিসি ফটো

দেশের তুলনামূলক উষ্ণ জেলা রাজশাহী। তবে এখন দেখে তা বোঝার উপায় নেই। ঘন কুয়াশাই আচ্ছন্ন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) পুরো ক্যাম্পাস। দেখা মিলছে না সূর্যের। বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) সকাল থেকে কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বত্র। বছরের এ সময়ে এমন আবহাওয়ায় পিঠাপুলির উৎসব বসছে ক্যাম্পাসে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এতদিন শীত অনুভূত হলেও কুয়াশার দেখা মেলেনি। গতকাল মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) রাত থেকে তীব্র কুয়াশা পড়তে দেখা যাচ্ছে ক্যাম্পাসে। সঙ্গে শীতের তীব্রতাও বেড়েছে আগের থেকে অনেক বেশি। ফলে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে কাঠ-খড়ি পুড়িয়ে আগুনের উঞ্চ তাপ নিতেও দেখা যায়।

সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, ক্যাম্পাসের টুকিটাকি চত্বর, প্যারিস রোড, বুদ্ধিজীবী চত্বর, আমতলাসহ পুরো ক্যাম্পাস তীব্র কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রান্তে তীব্র কুয়াশা পড়ায় এক আবাসিক হল থেকে অন্য আবাসিক হল ও একাডেমিক ভবন থেকে অন্য একাডেমিক ভবন দেখা যাচ্ছে না। কিছু দুর গেলেই কোনো মানুষকে চোখে পড়ে না। গাছের পাতায় ও ঘাসের ডগায় ডগায় শিশির জমে আছে।

এদিকে শীত কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে লোগো ও নাম সংবলিত হুডি বানানোর ধুম। শীত আগমনীতে ক্যাম্পাসের রঙ-বেরঙের ফুল যেন সবার মন কাঁড়ে। গোলাপ, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, কসমস, অ্যাস্টার, সিলভিয়া, জিনিয়া, গাঁদাসহ নানান প্রজাতির ফুলের সৌরভে মুখরিত হয় ক্যাম্পাস ও আবাসিক হলের প্রতিটি অঙ্গন।

আবার বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলেই বাহারি পিঠায় জমে উঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি। শীতের এই পিঠার স্বাদ নিতে সারাক্ষণ দোকানগুলোয় ভিড় করে থাকেন শিক্ষার্থীরা। কেউবা দাঁড়িয়ে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। পিঠা খাওয়া নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে চলে খুঁনসুঁটি। কে কয়টা পিঠা খেতে পারে তা নিয়েও হয়ে যায় ছোট-খাটো প্রতিযোগিতা। তখন পরিবার ছেড়ে শত শত মাইল দূরের ক্যাম্পাসই যেন হয়ে ওঠে আরেকটা পরিবার।

আরো পড়ুন: শিক্ষার্থীদের চাকরি দেবে ঢাবি, বেতন মাসে এক হাজার টাকা

তবে একটা সময় প্রচণ্ড শীতে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় ব্যাঘাত ঘটে। হাড় কাঁপানো শীতের মাঝে উষ্ণ বিছানা ছেড়ে যেতে হয় ক্লাস করতে, পরীক্ষা দিতে। সকালে তীব্র কুয়াশার মাঝেও হাটতে বের হোন আসাদুল্লাহ গালিব নামের এক শিক্ষার্থী। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, রাজশাহীতে শীতের মাত্রা বেড়েছে। কালকে রাত থেকে বেশি শীত পড়েছে বলে আমি মনে করছি। আজ রাতে কাঁথা কম্বল ছাড়া ঘুমানো সম্ভব হয়নি। কিছু দূরত্বেই কাউকে দেখা যাচ্ছে না। যাত্রীবাহী গাড়িগুলো যেন আস্তে ধীরে গাড়ি চালায় সেদিকে লক্ষ রাখার আহবান জানান তিনি।

প্রতিদিন সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাবুর হোটেলে কাজে যোগদান করেন মনিরুল ইসলাম (মনা)। তবে আজকের সকালটা তার কাছে ভিন্ন মনে হয়েছে। তিনি বলেন, আজকে সকালে এতো কুয়াশা পড়েছে যার ফলে আমাকে দোকান পর্যন্ত পৌঁছাতে দিগুণ সময় লেগেছে। মাঠঘাট কুয়াশায় পরিপূর্ণ। চারপাশ অন্ধকার মনে হচ্ছে।  অনেকের জন্য শীত মাসটি ভালো হলেও আমাদের জন্য খুব দুঃখের।

রিকশাচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, আজ সকাল থেকে বিগত দিনের তুলনায় বেশি শীত এবং কালো কুয়াশা হওয়ায় বাইরে মানুষের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। আমরা যাত্রী পাচ্ছি না। বাইরে অনেক শীত পড়েছে তাই গরম কাপড় পরে বের হয়েছি।

শহীদ জিয়াউর রহমান হলের এক কর্মচারি জানান, শীত অনেকের কাছে উপভোগের সময় হলেও অনেকের কাছে আবার কষ্টের। আমি প্রতিদিন রাতে ডিউটি করি। অন্যদিনের তুলনায় আজকে ঠান্ডা পড়েছে বেশি এবং কুয়াশায় কাউকেই দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা বুঝতে পারছি রাজশাহীতে শীতের মাত্রা বাড়তে শুরু করেছে।


সর্বশেষ সংবাদ