বাকি খেয়ে টাকা দেননি ছাত্ররা, নিঃস্ব হয়ে চবি ছাড়লেন অলিম

হোটেল মালিক ওলি আহমেদ
হোটেল মালিক ওলি আহমেদ  © টিডিসি ফটো

চৌত্রিশ বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শাহজালাল হলের সামনে অবস্থিত প্রয়াস হোটেলের মালিক বরিশালের অলিম আহমদ। জমি বেচে দেড় লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে আসেন তিনি।

কিন্তু শিক্ষার্থীদের হলের ডাইনিংই নয় বাকি খেয়ে টাকা না দেওয়ার সংস্কৃতি এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে এবার হোটেল ছাড়তে বাধ্য হলেন মালিক অলিম আহমদ। প্রায় তিন যুগ ধরে কোনো রকম টিকে ছিলেন। কিন্তু করোনার ধাক্কা সামলাতে না পেরে সবকিছু গুটিয়ে গতকাল রবিবার (১৩ নভেম্বর) সপরিবারে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন তিনি।

অলিম আহমদ জানান, গত পাঁচ ছয় বছরে তার হোটেলে প্রায় চার থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা শুধু বাকিই পড়েছে। যে টাকা দেওয়ার কোন নাম-গন্ধও নেই। যার কারণে তিনি ব্যবসায় অনেক বড় রকমের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তাই তার কাছে দোকান ছেড়ে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না।

তিনি বলেন, ছাত্রদের আর বাকিতে খাওয়ানো আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। আমার বিকাশ নাম্বারটা দিয়ে গেলাম। যারা আমার হোটেল থেকে বাকিতে খেয়েছেন তারা প্রত্যেকেই জানেন, কে কত খেয়েছেন। সুতরাং আখিরাতের কথা চিন্তা করে হলেও তারা আমার টাকাগুলো দিয়ে দিক।

আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয় খেকে ইংরেজিতে এমএ, সংসার চলে মুদি দোকান চালিয়ে।

আইন বিভাগের অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, ক্ষুধার্ত আপনাকে অলি আহমেদ নিজের অর্থ খরচ করে রান্না করে খাইয়েছেন। আপনার বকেয়া পরিশোধ করে সর্বস্বান্ত অলি আহমেদের পাশে দাঁড়ানো আপনার আইনগত, নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব। অন্যথায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় পাস করলেও মনুষ্যত্বের পরীক্ষায় আপনি চূড়ান্তভাবে অকৃতকার্য।

চবির সাবেক শিক্ষার্থী চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফ বলেন, কি নিষ্ঠুর আমাদের ছাত্রদের মন। এত কষ্ট করে বাজার করে রান্না করে যারা খাওয়াচ্ছে আমরা তাদের প্রাপ্য টাকাটা পর্যন্ত দিই না! অনেকে অলি ভাই কিংবা হলের ক্যান্টিনের মালিকের জন্য মন খারাপ করছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে মন আমারও খারাপ।


সর্বশেষ সংবাদ