হাজারো স্বপ্ন ও আবেগের আরেক নাম লাল বাস

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাল বাস
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাল বাস  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাল বাস। দেখতে একটি সাধারণ পরিবহন মনে হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং ভবিষ্যতে এখানে পড়ার স্বপ্ন লালন করা প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীর কাছে এটি একটি পরম আবেগের এবং অনুপ্রেরণার নাম।

মহাসড়কের মধ্য দিয়ে চরম দাপুটে ভাবে এগিয়ে চলা এই বাহনের মধ্যে আরোহন করার এক তীব্র আকাঙ্খাই যেন এখানে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের প্রেরণা দিয়ে থাকে। ঢাবি শিক্ষার্থীদের শত আবেগ, ভালোবাসা এবং স্মৃতি গন্ধে ভরপুর এই বাস। সকালে ঘুম থেকে উঠে দৌঁড়ে গিয়ে বাস ধরার চেষ্টা থেকে শুরু করে সারাদিনের ক্লাস শেষে ক্লান্তি জর্জরিত শরীর নিয়ে বিকেলে প্রায় স্তিমিত সূর্যকে সঙ্গী করে বন্ধুদের সাথে যাত্রার সাক্ষী এই বাস।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ঝঞ্জাট বিহীন ক্লাসে উপস্থিতির জন্য ১৯৮০ সাল থেকে যাতায়াত ব্যবস্থা চালু করে।প্রথমে ৭টি বাস দিয়ে পরিবহণ শাখা শুরু হয়। বর্তমানে ৫০টিরও বেশি সংখ্যক বাস ঢাকা এবং এর আশেপাশের ১৯টি রুটে চলাচল করে আসছে।চৈতালী, শ্রাবণ, কিঞ্চিৎ, বৈশাখী, আনন্দ, হেমন্ত, ফাল্গুনী, ইশা খাঁ, তরঙ্গ, উল্লাস, মৈত্রী, উয়ারী-বটেশ্বরসহ হরেক নামের এই বাসগুলো ঢাকা শহরের বিভিন্ন রুটে কয়েকবার আপ এবং ডাউন ট্রিপের মাধ্যমে  শিক্ষার্থীদের তাদের গন্তব্যে পৌছাতে ভূমিকা রেখে আসছে। প্রায় ৫০ শতাংশেরও বেশি শিক্ষার্থী নিয়মিত তাদের যাতায়াতের জন্য এই বাস ব্যবহার করে আসছে।

বাসগুলো ব্যবহারের সুবিধার জন্য রয়েছে ঢাবি শিক্ষার্থীদের তৈরী ‘লাল বাস’ নামক একটি এ্যাপ এবং "মামাবট" নামক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংবলিত স্বয়ংক্রিয় একটি মেসেঞ্জার এ্যাপ যার মাধ্যমে বাস ব্যবহারকারী শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই বাসের রুট, চলাচলের সময় এবং বাসের অবস্থানসহ বিভিন্ন তথ্য রয়েছে। "মামাবট" মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসের সময়সূচি জানার ‘চ্যাটবট’। বার্তা পাঠালে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে সঙ্গে সঙ্গে এটি আপনাকে ফিরতি বার্তা পাঠাবে। এটি এমন ভাবে বার্তা পাঠিয়ে থাকে যা দেখে মনে হয় যেন সত্যিই কোনো মানুষের সাথে আপনি কথা বলছেন। ‘লাল বাস’ এ্যাপটিও কোন বাসের অবস্থান জানতে সাহায্য করে থাকে কিন্তু এর ব্যবহারের ধরণ কিছুটা ভিন্ন। তাৎক্ষণিকভাবে জানতে হলে ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজন পড়বে। তবে বাসের সময়সূচী এবং রুট অফলাইনেই দেখা যাবে। এছাড়া রাস্তার ট্রাফিকের অবস্থাও দেখা যাবে অ্যাপে। প্রতিটি বাসের রুট এনিমেশনের মাধ্যমে ম্যাপে দেখা যাবে এতে।অ্যাপটিতে দুটি মোড আছে। এডমিন মোড ও ইউজার মোড। বাসে থাকা এডমিনের মোবাইল থেকে ডাটা সংগ্রহ করে ব্যবহারকীরেদেরকে বাসটির অবস্থান দেখাবে লাল বাস অ্যাপ। 

ডাউন ট্রিপের বাসগুলো মল চত্বর এবং কার্জন হল থেকে শিক্ষার্থীদের নিয়ে নিজ গন্তব্যের জন্য রওনা হয় এর মধ্যে মল চত্বর থেকে ছেড়ে আসা বাস গুলো ভিসি চত্বর থেকে হাকিম চত্বর হয়ে সোজা শহীদ মিনারের সামনে থেকে কার্জন হল পর্যন্ত ঘুরে বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষার্থীদের নিয়ে যাত্রা শুরু করে।অন্যদিকে কার্জন হল থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলো শহীদ মিনার হয়ে রোকেয়া হলের সামনে থেকে ভিসি চত্বর পর্যন্ত ঘুরে শিক্ষার্থীদের নিয়ে থাকে।

এছাড়াও নারী শিক্ষার্থীদের জন্য কবি সুফিয়া কামাল হল, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল এবং বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী  হলগুলো মূল ক্যাম্পাস থেকে কিছুটা দূরবর্তী হওয়ায় এই তিনটি হল শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসের উল্লেখিত স্থানগুলোতে শিক্ষার্থীদের হল বাসের মাধ্যমে পৌছে দিয়ে থাকে।


সর্বশেষ সংবাদ