ছোটগল্পের ক্যানভাসে ক্যাম্পাস জীবন

ফেসবুকভিত্তিক পেজ
ফেসবুকভিত্তিক পেজ  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছোট গল্প (DU short stories) । জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকভিত্তিক একটি পেজ। যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যাপিত জীবনের নানা গল্প, ভাবনা, আর ঘটে যাওয়া প্রায় বিষয়ই উঠে আসে গল্পচ্ছলে। কেউ নাম প্রকাশ করে আবার কেউ কেবল মাত্র বিভাগ, সেশন উল্লেখ করে লিখা পাঠায়। এডমিন প্যানেলের দায়িত্ব থাকা ব্যক্তিরা পাঠানো বার্তাটি একটি নির্দিষ্ট ফরম্যাটে ডিজাইন করে সেটি আপলোড করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ফেনী সরকারি কলেজসহ দেশের অধিকাংশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েরই রয়েছে এমন পেজ। অন্যায় অনিয়মের প্রতিবাদের পাশাপাশি একান্ত ভাবনা কিংবা অনূভুতিগুলোও প্রকাশিত হয় এমন এসব পেজে।

যেমন: ‘প্রত্যেক ভালোবাসায় দুইজন সুখী হলে তৃতীয় একজন অবশ্যই অবশ্যই দুঃখ পাবে।’ পাশাপাশি নিকটজনকে না পাওয়ার অব্যক্ত গল্পগুলোও প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠছে এটি। ‘আপনার না বলা, না শোনানো গল্পগুলো বলা হোক এবার, আমাদের হলুদ কাগজে’ শিরোনামে পরিচালিত হচ্ছে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছোট গল্প’ পেজটি।

‘বন্ধুকে নোট দিয়ে বলেছিলাম, কাউকে দিস না। সে কসম কেটে কথা দিয়েছিল সে কথা দিয়েছিল, সে কাউকেই দিবে না। আজ সে নোটই অন্য আরেকজন আমাকে পাঠিয়ে বলে, কাউকে দিস না। আমিও এককাঠি সরেস। উত্তরে বললাম, সত্যি, বিদ্যা, আল্লাহর কসম কাউকে দিব না। এই মাথায় হাত ছুঁয়ে বললাম।‘

আবার যেকোন অন্যায় কিংবা অনিয়মও গল্পাকারে প্রকাশিত হয় এখানে। যেমন: রাজনীতি করা সিনিয়র আপুরা যখন বলেন, ‘আমি চাইলে যে কাউকেই হল থেকে বের করে দিতে পারি।’ মেধার মূল্য কোথায়?  কিংবা ‘প্রথম বর্ষে গেস্ট-রুম কালচারের বিরুদ্ধে থাকা প্রিয়-বন্ধুগণ জুনিয়রদের কীভাবে গেস্ট-রুমে নিবে তার অনুশীলন করছে।’ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বরাবরই হলে সিট পাওয়া কিংবা হলে নির্যাতনের শিকার হওয়ার বিরুদ্ধে গল্পাকারে প্রতিবাদ করার অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এমন পেজগুলো।

আরও পড়ুন: ডেনমার্কে উচ্চশিক্ষা শেষে চাকরি ও স্থায়ী বসবাসের সুযোগ

স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়-গুলোসহ উচ্চশিক্ষার শিক্ষার্থীদের আবাসন ও ক্যাম্পাসে রাজনীতিসহ নানাবিষয় নিয়ে সবসময়ই আলোচনায় থাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। সে আলোচনায় অনেকটা প্রচার মাধ্যমের ভূমিকায় পাওয়া যায় এসব পেজগুলোকে। পাশাপাশি, চলমান ভাবনা, আবেগ-অনুভূতি, আইডিয়া কিংবা পরিবার ছেড়ে থাকার কষ্টগুলোও উঠে আসে ছোট গল্পের ক্যানভাসে। যেমন: ‘বাবা আমার সাফল্যকে চুমু দেওয়ার আগে যেন মাটিকে চুমু না দেয়(মারা না যায়)’ অথবা ‘জ্বর হলেই একটি ছেলে বুঝতে পারে মায়ের হাতের স্পর্শ কতখানি অমলিন’ পরিবার ছেড়ে থাকার কষ্টগুলো সাময়িক ভোলার চেষ্টা হয়তো গল্প প্রকাশে।

যাপিত জীবন বাস্তবতায় চলতি সম্পর্ক আর প্রেয়সীকে নিয়েও নানা গল্প চলমান থাকে সময়ের সাথে সাথে। ‘কাউকে ভালোবাসা বা বিশ্বাস করা যেমন অপরাধ না, তেমনি ভুলে যাওয়াও অপরাধ না। এই দুনিয়ায় সবাই ভালোবাসার কাঙ্গাল। সম্পর্কে পর্যাপ্ত ভালোবাসা না থাকলে ইতি টানাই ভালো। তাতে দু’পক্ষই ভালো থাকবে। যার প্রতি ঘৃণা কাজ করে, তার জন্য নিজেকে আটকে না রেখে সামনে এগিয়ে যাওয়ার ভাবনাগুলো যাপিত বাস্তবতার বুনো গল্প। প্রেয়সীকে কাছে চাওয়া কিংবা পাওয়ার গল্প তো নিত্যদিনেরই অকুণ্ঠ প্রকাশ। পরা-বাস্তবতার আবহ আর সময়ের হিসেব মেলাতে প্রত্যাশা-প্রাপ্তির মেলবন্ধন হয়তো হবে না। দশক কিংবা শতক পরে এ গল্পগুলোই হয়তো হয়ে উঠবে সময়ের প্রতিচ্ছবি, গল্পের দেয়াল।


সর্বশেষ সংবাদ