কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত

উপচে পড়া ভিড়, বাসে ও সাগর তীরেই রাত কাটাচ্ছেন পর্যটকরা

সৈকতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়
সৈকতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়  © সংগৃহীত

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে দেখা গেছে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। এদের আতিথেয়তা দিতে পর্যটনকেন্দ্রের হোটেলগুলো হিমশিম খাচ্ছে। এতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসা ভ্রমণার্থীরা পড়েছেন বেকায়দায়। অনেকে হোটেলে রুম না পেয়ে সৈকত পাড়ে ও বাসে রাত্রি যাপন করছেন।

সোমবারের (১৩ ডিসেম্বর) পর থেকে টানা ছুটির কারণে কক্সবাজারে বিপুল পরিমাণ পর্যটকের সমাগম ঘটে। এতে পর্যটন এলাকায় শতাধিক হোটেল-মোটেলে চড়া দামেও রুম পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে সৈকতের বালিয়াড়িতে রাত যাপন করছেন বেশিরভাগ পর্যটক। আবার যারা নিজেরা বাস রিজার্ভ করে ভ্রমণে এসেছেন তারা রাত কাটাচ্ছেন বাসের ভেতরেই। সেখানেও একশ্রেণীর লাঠিয়াল বাহিনী গাড়ী পার্কিংয়ের নামেও টাকা করে আদায় করছে বলে জানা গেছে।

আরও পড়ুন: কাল বান্দরবানের সব পর্যটন কেন্দ্রে বিনা মূল্যে প্রবেশ

এদিকে, সৈকতে পর্যটকদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারে পর্যটকদের নিয়ে গলাকাটা বাণিজ্য করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। হোটেল-মোটেল ছাড়াও পরিবহণ ভাড়াও বাড়তি দিতে হচ্ছে পর্যটকদের। শহরের অটো বাইক, রিক্সাচালক ও রেষ্টুরেন্ট সবখানে এসব বাণিজ্য চলছে। এতে করে দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকরা হয়রানি ও প্রতারিত হচ্ছে। হোটেলে রুম না পাওয়ার সুযোগে খাবার হোটেলগুলোও বাড়িয়ে দিয়েছে খাবারের দাম। পাশাপাশি পর্যটন এলাকায় রাস্তা মেরামতের কাজ চলমান থাকায় যানজটসহ নানা সংকট ও দুর্ভোগে পড়েছে পর্যটকরা। অনেক ভ্রমণকারী রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন রাত কাটানোর একটি কক্ষের জন্য। অবশ্য, এসব অভিযোগ প্রমাণিত হলে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন পুলিশ ও জেলা প্রশাসন।

এদিকে, ঢাকা থেকে আসা আতাউর রহমান নামের এক পর্যটক জানান, ছুটিতে প্রথমবার কক্সবাজার সৈকত ভ্রমণে এসেছি। কিন্তু, এখনকার অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে ঢাকার মতো মানুষের ভিড়। বৃহস্পতিবার কক্সবাজার আসলেও এক রাত সৈকতে ঘুরাঘুরিতে কাটিয়েছি। শুক্রবার সকালে চড়া দামে হোটেলে রুম পেয়েছি। আমার মনে হয় মৌসুমে কক্সবাজার না এসে অফ-সিজনে আসা উচিত।

কক্সবাজার ঘুরতে আসা শাহিন দম্পতি জানিয়েছেন, এই প্রথমবার এসে কক্সবাজারকে দেখলাম। একসাথে এতো বিপুল সংখ্যক মানুষ আর দেখিনি। সৈকতে এতো বেশি মানুষ দেখে মনে হচ্ছে এটা ঢেউয়ের সাগর নয়, যেন মানুষের সাগর।

আরও পড়ুন: কক্সবাজার বেড়াতে যেতে না দেয়ায় এসএসসি পরীক্ষার্থীর আত্মহত্যা

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, হোটেলগুলো স্বাভাবিক ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত রুম ভাড়া আদায় করছে। প্রতিটি হোটেলে প্রকাশ্যে এসব ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। আগে যে রুম ভাড়া ১ থেকে ২ হাজার টাকা ছিল, তা বেড়ে এক লাফে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করছে। একইভাবে পরিবহণ, খাবারের দোকান ও রেষ্টুরেন্ট অস্বাভাবিক দামে পর্যটকদের ঠকাচ্ছে। বিশেষ করে শহরের কলাতলী মোড় থেকে সুগন্ধা পয়েন্ট পর্যন্ত ইজিবাইক ও রিক্সা ভাড়া জনপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা। যদি কেউ প্রাইভেটে আসে তাহলে ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া আদায় করার বিধান রয়েছে।

কিন্তু, রিক্সা ও ইজিবাইক চালকরা এতে আদায় করছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। বিশেষ করে এক শ্রেণীর ইজিবাইক চালকরা পর্যটক দেখলেই দ্রুত পাশে গিয়ে কৌশলে গাড়িতে উঠায়। পরে পথ অনেক দূর আছে, এমন মিথ্যা অজুহাত দিয়ে ভিন্ন পথে নিয়ে আদায় করছে অতিরিক্ত ভাড়া। এতে করে কক্সবাজার পর্যটন শিল্প নিয়ে পর্যটকদের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু কোরাল রেস্টুরেন্ট বা কয়লা রেস্টুরেন্ট নয়, কক্সবাজার হোটেল, মোটেল, জোন, বিচ এলাকা, ইনানীসহ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বিভিন্ন স্থানে যে চার শতাধিক রেস্টুরেন্ট রয়েছে এর মধ্যে বেশির ভাগ রেস্টুরেন্টে চলছে গলাকাটা বাণিজ্য। এতে হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন কক্সবাজার ভ্রমণে আসা পর্যটকরা।

হোটেলগুলোতে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার কথা স্বীকার করে কক্সবাজার হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম বলেছেন, ভরা মৌসুমে হোটেলের রুম ভাড়া একটু বেশী। তবে যে হোটেল মালিক ভাড়া বেশী আদায় করে আমরা তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। এতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযানও চলছে। কিছু হোটেল আর রেস্তোরাকে ইতোমধ্যে জরিমানা করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: ৬৪ জেলা ঘুরে ঢাবি ছাত্রের দৃষ্টি এখন বিশ্বভ্রমণে

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান জানিয়েছেন, ছুটিতে কয়েক লাখ পর্যটক কক্সবাজারে অবস্থান নিয়েছে। এসব পর্যটকদের উপস্থিতি দেখে ট্যুরিস্ট পুলিশ আগের চেয়ে দ্বিগুণ নিরাপত্তা জোরদার করেছে। কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ও হোটেল এলাকাগুলোতে তারা দায়িত্ব পালন করছে। কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মোতায়েন করা হয়েছে সাদা পোশাকে বিশেষ পুলিশ। সৈকতে তিল ধারণের জায়গাও নেই। গেল কয়েক বছর সময়েও এক সঙ্গে এতো ভিড় হয়নি।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট (পর্যটন সেল) আবু সুফিয়ান বলেন, আগত পর্যটকদের হয়রানি করা কোনোভাবেই মেনে নেয়া হবে না। যেখানেই অভিযোগ পাওয়া যাবে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে গিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আশা করি, পর্যটকরা নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দে কক্সবাজার সৈকত ও অন্যান্য পর্যটন স্পটগুলো উপভোগ করতে পারবেন। এজন্য কাজ করছে আমাদের একাধিক টিম।

এদিকে, মহান বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে টানা তিনদিনের ছুটিতে থাকা লক্ষাধিক পর্যটক এখন কক্সবাজার অবস্থান করছেন। ঘুরে বেড়াচ্ছেন কক্সবাজারের আকর্ষনীয় স্থানগুলো। এতে সেখানকার জীবনযাত্রায় কিছু প্রভাব পড়েছে। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে  কিছু অসাধু লোক কক্সবাজারের হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও পরিবহণে মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। এতে দূর-দূরান্ত থেকে ভ্রমণে আসা পর্যটকরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এমন অবস্থা চলতে থাকলে বিশ্বের দীর্ঘতম সমদ্র সৈকতের গৌরব বহনকারী এ পর্যটন শিল্পের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।


সর্বশেষ সংবাদ