ত্বকের যত্নে তুলসি পাতা

ত্বক পরিচর্যায় তুলসি পাতার ব্যবহার
ত্বক পরিচর্যায় তুলসি পাতার ব্যবহার  © সংগৃহীত

আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে তুলসির ব্যবহার বহু প্রাচীন। সর্দি, কাশি থেকে জ্বর-জ্বালায় মধু এবং তুলসি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে শুধু রোগ নিরাময়ে নয়, আয়ুর্বেদে চুল এবং ত্বকের যত্নেও তুলসির ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রাচীন আয়ুর্বেদ অনুসারে, ব্রন সারাতে, ত্বকের প্রদাহ কমাতে এবং চুল বাড়াতে সাহায্য করে তুলসি।

ত্বক পরিচর্যায় তুলসি পাতাকে কাজে লাগালে একাধিক উপকার পাওয়া যায়। তুলসি পাতা কীভাবে ত্বক ভালো রাখতে পারে সেটাই দেখে নেওয়া যাক একনজরে।

তুলসি পাতার গুণ: তুলসি পাতায় থাকে ১.৩ গ্রাম প্রোটিন। সেইসঙ্গে আছে উপকারী কার্বোহাইড্রেট। এছাড়াও এই পাতায় আছে ক্যালসিয়াম, আয়রন, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস ও একাধিক ভিটামিন। তুলসি পাতায় আছে ভিটামিন এ, সি, ই, কে এবং বি৬। এসব উপাদান ত্বকের যত্নে ভীষণ উপকারী।

ব্রন নিরাময়ে: অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যের কারণে ব্রন নিরাময়ে কার্যকরী ভূমিকা নেয় তুলসি। ত্বকের লোমকূপগুলি বুজে গেলে এবং ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হলে ব্রন হয়। তুলসির মতো অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান এই ব্রন নিরাময়ে সাহায্য করে। ২০১৪ লিটারেচর রিভিউ-তে লেখা হয়েছে, ‘যদিও কোন মানব ট্রায়াল প্রকাশিত হয়নি, তবে পরীক্ষামূলক প্রমাণ রয়েছে যে তুলসি বিভিন্ন মানব ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে… ব্রন সহ’। তবে এটা নিশ্চিত করার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন।

ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে: ২০১৯ সালে করা একটি সমীক্ষায় দেখে গিয়েছে, ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে তুলসি। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্রি র‍্যাডিক্যাল উৎপাদন হ্রাস করে ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখে। ফ্রি র‍্যাডিক্যাল অক্সিডেটিভ স্ট্রেস তৈরি করে। এটা ত্বকের কোষের মারাত্মক ক্ষতি করে। যার ফলে দাগ এবং বলিরেখা তৈরি হয়।

পিগমেন্টেশন: তুলসির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট পিগমেন্টেশন মোকাবিলাতেও সাহায্য করে। তবে এর কোনও মেডিক্যাল প্রমাণ নেই। তবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি ফ্রি র‍্যাডিকেল উৎপাদন হ্রাস করে এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করে। ফলে পিগমেন্টেশন কমে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ উপাদানগুলি সূর্যের ক্ষতিকর ইউভি রশ্মি এবং দূষণের বিরুদ্ধেও লড়াই করে। এই দুটিই পিগমেন্টেশনের প্রধান কারণ।

আরও পড়ুন: ওজন কমাতে ও ত্বক ভাল রাখতে মিষ্টি কুমড়ার গুণাগুণ

একজিমা: শুষ্ক ত্বকের একজিমা নিরাময়েও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে তুলসি। যদিও এর কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ মেলেনি। তবে এর প্রদাহ বিরোধী উপাদান জ্বালা, লালভাব, ফোলাভাব এবং চুলকানি কমাতে সাহায্য করে।

চুল পড়া এবং ঘন চুল: আয়ুর্বেদে চুল পড়া বা পাতলা হওয়া রোধ করতে এবং চুলের ঘনত্ব বাড়াতে তুলসির ব্যবহার করা হয়ে। মনে করা হয় যে তুলসীর প্রদাহ-বিরোধী উপাদান মাথার ত্বককে উদ্দীপিত করতে পারে। ২০১১ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, অ্যালোপেসিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিরা তুলসির ব্যবহার করে আশাতীত ফল পেয়েছেন। যদিও এই ব্যাপারে নিশ্চিত হতে আরও গবেষণা প্রয়োজন।

টোনার: তুলসি পাতা ভালো করে জলে ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে টোনার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

প্যাক: তুলসি পাতার পেস্ট, নিমপাতার পেস্ট, মুলতানি মাটি, চন্দন, লবঙ্গ ও সামান্য কর্পূর মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে সেটি মুখে ২০-২৫ মিনিট রাখার পর ধুয়ে ফেলতে হবে।

স্বাভাবিক ত্বক: কাঁচা হলুদের পেস্ট, তুলসি পাতার রস ও বেসন মিলিয়ে মিশ্রণটি ১৫ মিনিট রেখে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

তৈলাক্ত ত্বক: তুলসি পাতার রস এবং ঝিঙের রস একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগাতে হবে। শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা জলের ঝাপটা দিয়ে ধুতে হবে মুখ। এতে তেলতেলে ভাব কমবে এবং ত্বক ঝকঝকে হয়ে উঠবে।

মিশ্র ত্বক: এক চা চামচ কাঁচা হলুদ, দুই চা চামচ তুলসি পাতা, দুই চামচ পুদিনা পাতা একসঙ্গে পেস্ট করে এক চা চামচ ওটমিল মিশিয়ে মিশ্রণটি ১৫ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখতে হবে। এরপর ধুয়ে ফেলতে হবে ঠান্ডা জলে।


সর্বশেষ সংবাদ