বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা: কত ঘণ্টা পড়ব?
- শাবিব মো. সাদাকাতুল বারী
- প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২২, ০৬:৩১ PM , আপডেট: ০৩ জুন ২০২২, ০৬:৩১ PM
একবার ভাবলাম এডমিশন নিয়ে কথা বলে বড়ভাই সাজব না, ব্যক্তিগতভাবে আমি যখন পরীক্ষার্থী ছিলাম তখন আমার তাদের বিরক্ত লাগত। কিন্তু যেহেতু অনেকে যোগাযোগ করছো, তখন এডমিশনের আগে-পরে আমার অনুভূতির ভিত্তিতে কিছু আলোচনা করা যাক।
**পাবলিক নাকি প্রাইভেট?
বহুল প্রচলিত একটি ডিবেট যেখানে সাধারণত পাবলিক ভার্সিটির পাল্লা ভারি হয়! আমরা সেই ডিবেটে না ঢুকে দেখি চলো পাবলিক প্রাইভেটের সুবিধা অসুবিধাগুলো কি কি!
পাবলিক ভার্সিটি (সুবিধা)
১. তোমার সার্বিক খরচ প্রাইভেটের থেকে অনেক কম পড়বে।
২. পাবলিকে পড়ে যে সম্মানটা হয়তো নিজের পরিবার বা আত্মীয়স্বজন থেকে পাবে সেটা প্রাইভেটে পাবে না।
পাবলিক ভার্সিটি (অসুবিধা)
১. সেশনজট: সব সাবজেক্টে নয় তবে অনেক ভার্সিটির বেশ কিছু ডিপার্টমেন্টের মূল সমস্যা এই। অনেকগুলো সময় কেটে নিবে তোমার জীবন থেকে।
২. গেস্টরুম কালচার ও Ragging: কেউ কথা বলবে না কিন্তু বেশিরভাগ পাবলিক ভার্সিটির অন্যতম প্রধান সমস্যা এটাই। তবে হল বা গণরুমে না থাকলে তুমি নেকটাই এই সমস্যা এড়িয়ে যেতে পারো।
৩. ছাত্র রাজনীতি: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্ররাজনীতি চর্চার অন্যতম কেন্দ্র। রাজনীতি মানেই বিভিন্ন মতাদর্শের সমাগম, আর ভিন্নমত মানে সংঘর্ষ হতেই পারে। যারা রাজনৈতিক পরিবেশ পছন্দ করোনা, তাদের জন্য হয়তো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নয়। তবে পূর্বের তুলনায় এখন প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ অনেক ভালো।
আরও পড়ুন : জাবির কোন ইউনিটে কত আসন?
প্রাইভেট ভার্সিটি (সুবিধা)
১. সবচেয়ে বড় কথা তোমার সময় বাঁচবে। কোনো সেশনজট নেই, ঠিক চারবছর বা তার আগেই তুমি গ্র্যাজুয়েট।
২. ভার্সিটি তোমাকে স্কিল ডেভেলপমেন্টে অনেকটা এগিয়ে দেবে। ফলে গ্র্যাজুয়েট হবার পরে কর্পোরেট লাইফের জন্য তুমি মোটামুটি উপযুক্ত।
৩. প্রাইভেট ভার্সিটিতে গেস্টরুম বা Ragging-এর মতো বিষয়গুলো ততো শোনা যায় না এবং ছাত্ররাজনীতি ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ।
প্রাইভেট ভার্সিটি (অসুবিধা)
১. অনেকগুলো টাকা তোমার বেরিয়ে যাবে। তবে মাথায় রেখো এটা অপচয় নয়, Investment!
২. অনেক প্রাইভেট ভার্সিটিতে হয়তো ক্যাম্পাসটা পাবে না, আমার মতো গ্রামগঞ্জ থেকে এলে Adjustment ইস্যু কাজ করতে পারে। But believe me এটা পাবলিকেও হয়, তবে প্রাইভেটে হতো একটু বেশি। ঠিক হয়ে যাবে একটা সময় পর..
ব্যক্তিগত পরামর্শ:
১. ঢাবি, বুয়েট, সাস্টসহ প্রথম সারির পাবলিক ভার্সিটিগুলোতে চান্স পেলে আলহামদুলিল্লাহ অথবা মধ্যম সারির ভার্সিটির প্রথম দিকের সাবজেক্টগুলো পেলেও আলহামদুলিল্লাহ। তবে ভর্তির আগে খেয়াল রাখবে CSE, EEE, Pharmacy এর মতো সাবজেক্টগুলোতে ল্যাব ফ্যাসিলিটি কেমন।
২. নিচের দিকের বা তুলনামূলক নতুন পাবলিক ভার্সিটিতে ভর্তির চেয়ে যেকোনো মধ্যম সারির প্রাইভেট ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়াও বেটার বলে মনে করি।
৩. প্রাইভেট-পাবলিক ডিবেটে না গিয়ে মধ্যপন্থা অবলম্বন করব। ব্র্যাক, NSU-এর মতো ভার্সিটিগুলো অনেক পাবলিক ভার্সিটি থেকে বেটার ও দেশের শীর্ষ ১০ এ অবস্থান করা বিশ্ববিদ্যালয়। তাই বাপের টাকা থাকলে চোখবন্ধ করে ফর্ম তুলে ফেলো। ক্যাম্পাসে ঢুকলে বুঝবা ক্যাম্পাস ম্যাটার করে না, ultimately তোমার ক্যারিয়ার তোমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি: ১০ দিনে আবেদন ৩ লাখ ৮৯ হাজার
কোন কোন ভার্সিটিতে ফর্ম তুলব?
ভাইয়া, চট্টগ্রাম তো অনেকদূর!
GST-তে এক্সাম দিব না!
অমুক ভার্সিটির ফর্ম তুলব না!
এসব ভাবনা ঝেড়ে ফেলে যদি সামর্থ্য থাকে সব ভার্সিটির ফর্ম তোল, পারলে যেসব ইউনিটে Eligible সব ইউনিটেই। আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফর্ম অবশ্যই তুলবে, প্রশ্ন মোটামুটি সহজই হয়, ওয়েটিং অনেকদূর যায়। মনে রেখো, এডমিশন টেস্ট একটা যুদ্ধ এবং লম্বা একটা জার্নি। পথে কোনো অঘটন যে ঘটবে না তা কেউ বলতে পারে না।
হয়তো এমনও হতে পারে তুমি যেখানে এক্সাম দিবে না দিবে না করে ফর্ম তুলেছ, সেখানেই তোমার হয়েছে। আর এই ভার্সিটি অনেক দূর, থাকতে পারব না, বাড়ির কথা মনে পড়বে তাদের জন্য বলি-ঘরের দুলাল আমিও ছিলাম| চার- পাঁচ মাস আগে ভাবতাম ঢাকা শহরে কেমনে মানুষ থাকে, এখন দিব্যি আছি। মনে রেখো পড়তে গেলে কষ্ট করতেই হবে, এক সময় এসে সব এডজাস্ট হয়ে যাবে।
কত ঘণ্টা পড়ব:
১। ১৬-১৭ ঘণ্টা monotony নিয়ে পড়ার থেকে ৮-৯ ঘণ্টা ব্রেক নিয়ে নিয়ে টেকনিক্যালি পড়া অনেক বেটার। তবে মনে রেখো, পড়তে হবে, একটু বেশি সময়ই পড়তে হবে।
২। এক বিষয় দীর্ঘসময় না পড়ে, অল্প অল্প করে কয়েকটা বিষয় পড়, তাহলে একঘেয়েমি আসবে না।
৩। ফোন, ফেসবুক একটু রেস্ট্রিকটেড করলে ভালো হয়, একটু ভেবে দেখো তো যদি ফেসবুকিং ইউটুবিং কম করে বেশি করে পড়লে যদি বাবা মাকে খুশি করতে পারো, কেমন হয়?
৪। প্রচুর পানি পান করতে হবে।
৫। যারা সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস রাখো, এই সময়টাতে অন্তত নিজ নিজ ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করো। এতে করে যে জিনিসটা হবে- একটা প্যাটার্ন আসবে, প্রতিদিন একটু গোছালো হবে আর মনে একটা সাহস পাবে।
লেখক: শাবিব মো. সাদাকাতুল বারী
ডিপার্টমেন্ট অব জাপানিজ স্টাডিজ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।