সরকার ভুল পথে গেলে পথ হারাবে বাংলাদেশ
- সাইদুর রহমান
- প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৪ PM , আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৬ PM
অন্তরে ফ্যাসিবাদ প্রেম আর দেহে বিপ্লবের আগুন থাকলে যে কোন গণঅভ্যুত্থান পর বিশৃঙ্খলা দেখা দিবে-এটাই স্বাভাবিক। ফ্যাসিবাদের মধ্যে থেকে যারা যারা বিপ্লব করেছে তাদের ফ্যাসিবাদ প্রেম পেয়ে বসেছে। অন্তরের মধ্যে ফ্যাসিবাদ প্রেম থাকলে যে কোনো বিপ্লব বেহাতের সম্ভাবনা থাকে।
এই প্রেম আছে কাদের জানেন যারা ফ্যাসিবাদের সাথে মিশে ছিল এবং শেষ পর্যায়ে গণ-আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিলেন এবং সরকারে আছেন তাদের কারোর কারোর। কিন্তু বিগত ১৫ বছর যারা রাজপথে যুদ্ধ করেছে তাদের কিন্তু ফ্যাসিবাদের প্রতি ন্যূনতম প্রেম নেই। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো তাদেরকে দেশ পরিচালনায় রাখা হয়নি। এজন্য সরকার পরিচালনায় সম্পৃক্তদের ফ্যাসিবাদ প্রেম রোগ থেকে বের করা সম্ভব হচ্ছে না।
সাড়ে তিন মাস বয়সী সরকার সারাদেশে ফ্যাসিবাদ নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে কিছু কিছু জায়গায় প্রতিষ্ঠা করেছে। ফ্যাসিবাদ শক্তিকে বিপ্লবী জনতার সাথে মিশে যেতে সহযোগিতা করা হয়েছে। জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার হত্যাকারীদের চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। প্রতি থানায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে হত্যা মামলা করা হয়নি। অপশাসনে জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়নি। বরং আর্থিকভাবে শক্তিশালী ফ্যাসিবাদ দোসররা বিপ্লবী জনতা হয়ে বিশৃঙ্খলায় জড়িয়ে পড়েছে।
গণঅভ্যুত্থান সফল হয়েছে বিগত ১৫ বছরের দুঃশাসনের চূড়ান্ত পরিণতির কারণে। সেই অপশাসনে অসংখ্য মানুষ গুম, খুন, হত্যার শিকার হয়েছে। জনগণ মুক্তির পথ খুঁজছিলো। ছাত্রলীগ করবার পরও হাসনাত, সারজিসদের দেখে কেউ আন্দোলনে আসেনি, জনগণ আন্দোলনে এসেছিলো কুশাসন থেকে মুক্তিলাভের জন্য। সেই হাসনাত বা সারজিসরা জনগণের পার্লস না বুঝে অগ্রসর হলে সমস্যা সৃষ্টি হবে-এটাই কাম্য।
গণঅভ্যুত্থানের জন্য কোন রাজনৈতিক দর্শন লাগে না কিন্তু গণবিপ্লব করতে দর্শন লাগে। এই দর্শনের ঘাটতি আছে বর্তমান সরকারের। তাদেরকে বুঝতে হবে দেশে স্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য দরকার রাজনৈতিক ঐক্য। সংস্কারের মুলা ঝুলিয়ে জনগণকে বোকা বানানোর চেষ্টা আর করবেন। ছাত্রদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে দীর্ঘ মেয়াদি দেশ পরিচালনায় পরিকল্পনা বুমেরাং হবে।
বর্তমান সরকারের দীর্ঘ মেয়াদে দেশ পরিচালনা করতে চাইলে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দিতে হবে। অনির্বাচিত সরকার দীর্ঘমেয়াদে দেশ পরিচালনা করলে শান্তির পরিবর্তে অশান্তির সৃষ্টি হয়। সেটির প্রতিফলন শুরু হয়েছে। আরো একটি বিষয় মনে রাখতে হবে যে, সরকারে থেকে কিংস পার্টি গঠনকে জনগণ ভালোভাবে গ্রহণ করে না। সেদিকে অগ্রসর হবে এই সরকারের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। আজ পর্যন্ত যারাই কিংস পার্টি গঠন করেছে তাদের পরিণতি কখনোই ভাল হয়নি।
এই মুহূর্তে যে-সব বিশৃঙ্খলা উঁকি দিচ্ছে তা শক্ত হাতে প্রতিরোধ করা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কঠোরহস্তে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে আরো সক্রিয় করতে হবে। এই গোয়েন্দা সংস্থায় বিগত সময় প্রচুর ফ্যাসিবাদকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার নিষ্ক্রিয়তা সরকারকে ভোগাচ্ছে। মুক্তিকামী ছাত্র-জনতা ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের কোনো বিকল্প নাই।
সরকার যদি ভুল পথে অগ্রসর হতে থাকে তাহলে তার মাশুল গুনতে হবে মুক্তিকামী জনতার। যারা দেশে একটু মিশরীয় স্টাইলে সিসি সরকার চায় তারা মূলত সরকারকে ভুলপথে নিয়ে যাচ্ছে। এই সরকার ভুল করলে স্থায়ীভাবে পথ হারাবে বাংলাদেশ।
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। আপনাদের উচিত হবে দ্রুত নির্বাচনের পথে হাঁটুন। অবিলম্বে সব রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে সংলাপে বসে করণীয় ঠিক করুন। কীভাবে ফ্যাসিবাদ নির্মূল করে দেশে গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু করা যায় সেই পরিকল্পনায় অগ্রসর হতে হবে এখনই। নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে দ্রুত। ভোটার তালিকা প্রণয়ন, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে স্বল্প সময়ের মধ্যে দেশে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। মেসেজ লাউড এন্ড ক্লিয়ার সরকার পরিচালনায় এই মুহূর্তে দরকার নির্বাচিত সরকার।
লেখক: রাজনীতি ও নির্বাচন কমিশন বিষয়ক সম্পাদক, দৈনিক ইত্তেফাক।