নখের যত্নে সতর্ক হোন
- অনির্বান গোস্বামী
- প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২২, ০৪:৩২ PM , আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২২, ০৪:৩২ PM
অনেক সময় শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের যত্ন নিলেও নখের যত্ন খুব বেশি নেয়া হয়ে উঠে না। কিন্তু স্বাস্থ্য কোনো ক্ষতিকর অবস্থায় থাকলে তা নখে প্রকাশ পায়। বিশেষ করে নখ নীল রঙ ধারণ করার মাধ্যমে অপর্যাপ্ত রক্ত সঞ্চালন ও অক্সিজেনের অভাব এবং ফ্যাকাসে রূপ নখের অ্যানিমিয়া কিংবা চরম শুষ্কতার কথা বলে। এমনকি নখ পাতলা ও ভঙ্গুর হলে বুঝতে হবে দেহে ভিটামিন, খনিজ এবং প্রোটিনের অভাব রয়েছে। তাই নখ শরীরের অন্যতম এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।
বিশেষজ্ঞদের তথ্যমতে, নখের নান্দনিক মানই শুধু নয়, স্বাস্থ্য সম্পর্কেও অনেক কিছু প্রকাশ করতে পারে। আপনার নখ কেরাটিন নামে পরিচিত একটি প্রোটিন দিয়ে গঠিত। একটি সুস্থ নখ মসৃণ, হালকা গোলাপী এবং এতে কোনো খাঁজ বা গর্ত থাকে না। এমনকি এ নখ সহজে যেমন ফাটে না, তেমনি ভেঙ্গেও যায় না।
আরও পড়ুন: রসুনের স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অপকারিতা
মূলত নেইল প্লেট থেকে নখের উৎপত্তি হয়। যা কয়েক মিলিমিটার বৃ্দ্ধি পেয়ে একটি অংশ আঙুলের ডগার উপরিভাগে দৃশ্যমান হয়। জানা যায়, একটি পূর্ণ নখ বৃদ্ধির জন্য প্রায় ৯ মাস সময় লাগে। এটি শরীরের অন্য অঙ্গের মতোই গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। তাই নিয়মিত নখের যত্ন নেয়া প্রয়োজন।
নখের যত্নে করণীয়
বিভিন্ন কারণেই নখের আকার কিংবা রূপের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। অনেক সময় নখের কোণে গর্ত হয়। আবার নখ নীল কিংবা ফ্যাকাসে রূপ ধারণ করতেও দেখা যায়। এমনকি অনেক সময় নখ পাতলা ও ভঙ্গুর হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন কাজ করার ফলে নখে কালো রঙের ছাপ পড়ে। তাই নখের যেকোনও সমস্যা বিশেষ করে নখে দাগ, অতিরিক্ত হলুদভাব, খুব তাড়াতাড়ি নখ ভেঙ্গে যাওয়া, নখের ঘা বা পচে যাওয়া প্রভৃতি দেখে দিলে অবশ্যই ডাক্তারের চিকিৎসা নেয়ার পাশাপাশি নিম্নোক্ত কিছু কাজ করা যেতে পারে-
* রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে নখে অলিভ অয়েল ও ভেসলিন লাগানো। এতে নখ শক্ত হওয়ার পাশাপাশি নখের হলুদ ভাব দূর হয়।
* অনেক সময় সবজি কাটতে গিয়ে হাতে কালো দাগ হয়। সেক্ষেত্রে কাটা লেবু ঘষেলে তা পরিষ্কার হবে।
* শীত হোক বা গ্রীষ্ম। হাত সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। তাই ধপধপে সাদা নখ পেতে নিয়মিত মইশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।
* অনেক সময় নখের চারপাশের চামড়া কুঁচকে থাকে এবং কিউটিকল উঠে যেতে থাকে। এমন হলেই কিউটিকলগুলো পুরো অপসারণ করা যাবে না। এতে নখের ভালোর চেয়ে মন্দই হবে বেশি। তাই কিউটিকলে অয়েল বা পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে পুশার দিয়ে পেছনের দিকে ঠেলে দেয়া যেতে পারে।
আরও পড়ুন: ডাবের পানির স্বাস্থ্য উপকারিতা
* দাঁত দিয়ে নখ কাটার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। কারণ এতে নখের আকার পরিবর্তন হয়। যা দেখতে খারাপ দেখায়। এমনকি অনেক সময় চামড়া ছিঁড়ে ইনফেকশন হতে পারে।
* অসমৃণ নখের জন্য নিয়মিত কিউটিকল অয়েল ব্যবহার করতে হবে৷ প্রতিদিন ঘুমানোর আগে কয়েক ফোঁটা কিউটিকল কিংবা অলিভ অয়েলের সঙ্গে একটুখানি পেট্রোলিয়াম জেলি মিশিয়ে ম্যাসাজ করলে দিন দিন নখ মসৃণ হয়ে ওঠে।
* বাজারের সস্তা নেইলপলিশ ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এতে সিসা-জাতীয় পদার্থ বেশি থাকায় তা ব্যবহারে নখ শুষ্ক হয়ে যায়। এমনকি নখের জন্য নেইলপলিশ না ব্যবহার করাই ভালো। কেননা এটা নখের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা নষ্ট করে দেয়।
* শুধু বাহির থেকেই যত্ন নিলে হবে না বরং খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পুষ্টি না দিলে নখের তেমন কোন উপকার হবে না। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন এ এবং ক্যালসিয়ামযুক্ত খবার রাখতে হবে। বিশেষ করে পালংশাক, মিষ্টি আলু, গাজর, ডিম, মিষ্টিকুমড়া, ব্রকলি ও গাজর ইত্যাদি রাখা যেতে পারে।
আরও পড়ুন: এলাচের পুষ্টি উপাদান ও উপকারিতা
অনেকের ধারণা, নখের যত্ন মানে শুধু বাহারি রং লাগানো। ফলে অল্পেই দ্রুত ভেঙে যায় নখ। তবে নখের যত্ন নিতে নামী-দামি প্রসাধনীর বদলে ঘরোয়া উপায়েই নখের যত্ন নেওয়া সম্ভব।
পাতিলেবুর রস
নখ ভালো রাখতে সপ্তাহে অন্তত তিনদিন লেবুর রস ব্যবহার করা যেতে পারে। কেননা লেবুর রসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, যা নখের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাই একটি তুলোতে লেবুর রস ভিজিয়ে নখের উপরের অংশে ভাল করে লাগিয়ে ভালোভাবে শুকতে হবে। তারপর গরম জল দিয়ে ধুয়ে নিলেই কাজ শেষ।
কমলার রস
নখের কোলাজেন নামক প্রোটিন বাড়াতে কমলার রস দারুণ কার্যকরী। কোলাজেন নখ শক্তিশালী করে। এমনকি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ কমলালেবুর রস নখের সংক্রমণ দূর করে। তাই একটি বাটিতে কিছুটা কমলার রস নিয়ে কিছু ক্ষণ তাতে নখ ডুবিয়ে রাখতে হবে। কিছু ক্ষণ পর হালকা গরম পানি দিয়ে নখ ধুয়ে নিন। সপ্তাহে ২-৩ দিন এটা করতে পারেন। সহজে নখ ভাঙবে না।
নারকেল তেল
নখের যত্নে নারকেল তেল বেশ উপকারি। কারণ এতে থাকা ভিটামিন ই ও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট উপাদান নখকে ভালো রাখতে সহায়তা করে। তাই রাতে ঘুমনোর আগে গরম নারকেল তেল নখে লাগিয়ে নিলে নখ ভাল থাকবে।