টাক করলে টক খেলে বা বেশি গোসলে কী গরম কমে?

গরমে শিশুদের টাক করে দেওয়ার প্রবনতা রয়েছে দেশে
গরমে শিশুদের টাক করে দেওয়ার প্রবনতা রয়েছে দেশে  © বিবিসি বাংলা

গ্রীষ্মের প্রখর খরতাপে অতিষ্ঠ জনজীবন। গরম থেকে বাঁচতে এসি বা ফ্যানের ব্যবহার যেমন দেখা যায়, পাশাপাশি কিছু প্রচলিত কলাকৌশলের শরণাপন্নও হতে দেখা যায় অনেককে। কিন্তু সেসব কতটা কাজে দেয়? গরমের হাত থেকে রেহাই পেতে এসব বিষয়ে চিকিৎসকরাই বা কী বলছেন?

মাথা ন্যাড়া করলে কী লাভ?
ছোটবেলায় গরমের ছুটিতে শিশুদের মাথার চুল কামিয়ে ন্যাড়া বা টাক করে দেয়ার স্মৃতি আছে অনেকের। এ চর্চা কেবল বাংলাদেশ নয়, ভারত-পাকিস্তান-নেপালসহ অনেক দেশেই আছে। এতে মাথায় বাতাস লাগে, তেমন ঘামে না, বলছিলেন একজন অভিভাবক। এ সময় কিৎসকরাও চুল ছোট রাখার পরামর্শ দেন।

তবে সে জন্য একদম ন্যাড়া হয়ে যাওয়ার প্রয়োজন নেই বলে তারা বলছেন। ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালের ডার্মাটোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. রুবাইয়া আলী বলেন, ‘চুল ছোট থাকলে কিছুটা আরাম পাওয়া যায়। তবে, এর বাড়তি কোনো স্বাস্থ্যগত সুবিধা নেই। 

যাদের পক্ষে চুলের যত্ন নেয়া সম্ভব হয় না, তাদের চুল ‘ট্রিম’ করে রাখতে পারেন। মাথায় সরাসরি সূর্যালোক যাতে না পড়ে, সেজন্য রোদে বের হলে ক্যাপ বা ছাতা ব্যবহার করতে বলেন তিনি।

টক খেলে গরম কমে?
কাঁচা আম আসতে শুরু করেছে বাজারে। এর জুসের প্রতি আগ্রহ থাকে অনেকের। এছাড়া তেতুল ও লেবুর শরবতের মতো পানীয়েরও বেশ কাটতি থাকে গরমে। রাস্তাঘাটে এসব শরবতের বিক্রিও অনেক বেড়ে যায়। সাধারণ মানুষের মূল খাবারে ভাতের সঙ্গে টক ডালের বা আচারের উপস্থিতিও বাড়ে।

প্রচলিত ধারণা আছে, টক খেলে গরম কমে। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, টক জাতীয় খাবার গ্রহণের সঙ্গে শরীরের তাপের হ্রাসবৃদ্ধির সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের চিকিৎসক মোহাম্মদ সালেহ মাহমুদ তুষার বলেন, টক জাতীয় খাবার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। সে কারণে সাময়িক স্বস্তি বোধ করেন অনেকে। তবে এ ধরনের খাবার গ্রহণ করলেই গরম কম লাগবে, এমন নিশ্চয়তা নেই।

চা খেলে গরম কমে?
চা পানীয় হিসেবে এতো জনপ্রিয় যে, প্রচণ্ড গরমেও চায়ের দোকানগুলোতে ভিড় চোখে পড়ার মতো। কেউ কেউ এমন ধারণাও করেন যে, গরম চা খেলে বাইরের গরম কম অনুভূত হবে। এটা একেবারেই ভুল ধারণা বলে অভিমত চিকিৎসকদের। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের এক প্রকাশনা থেকে জানা যাচ্ছে, মানব শরীরে ক্যাফেইন খুব দ্রুত শোষিত হয়। গ্রহণের মাত্র ৪৫ মিনিটের মধ্যেই ৯৯ শতাংশ শোষিত হয়ে যায়।

চা বা কফির ক্যাফেইন দেহকে পানিশূন্য করে ফেলে এবং তাপমাত্রা বাড়িয়ে তোলে। এতে অল্প সময়েই শরীরের তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যেতে পারে। অল্প সময়ে শরীরের তাপমাত্রার পরিবর্তন গরমের সবচেয়ে বড় আতঙ্ক ‘হিটস্ট্রোক’র ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে বলে জানান কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ ও গবেষক ডা. শেখ মইনুল খোকন।

চা-কফি পানের পর পাকস্থলীতে গরম পানির বাড়তি তাপ শরীরের ভেতরটাকেও গরম করে তোলে। তাই এ সময়ে চা-কফি, অ্যালকোহল, নিকোটিন সবই এড়িয়ে চলতে বলছেন ডা. সালেহ মোহাম্মদ তুষার। তবে অনেকে আছেন যাদের সকালে বা বিকেলে এক কাপ চা না খেলে চলে না। তাদের চা খাওয়ার আগে খানিকটা পানি পান করে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এতে তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় থাকবে।

স্যালাইন কতটা কাজের?
গরমের সময় স্যালাইন খাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ কেউ উপদেশ দিচ্ছেন, যারা বাইরে হবেন তারা যেন সঙ্গে স্যালাইন রাখেন। পানিশূন্যতা রোধে স্যালাইনের পাশাপাশি ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয়ও গ্রহণ করেন অনেকে।

‘বাইরে যারা কাজ করছেন, তারা যদি বেশি ঘেমে যান, স্যালাইনটা তখন তাদের জন্য বেশি জরুরি’, বলছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক ডা. তুষার। অন্যথায় কেবল গরম লাগলেই স্যালাইন খাওয়ার প্রয়োজন নেই। অতিরিক্ত স্যালাইন বা ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয় গ্রহণের ঝুঁকি সম্পর্কেও সতর্ক করেন চিকিৎসকরা।

তবে যাদের ডায়াবেটিস বা কিডনি জটিলতা আছে তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতিরেকে স্যালাইন না খাওয়াই ভালো। কারণ, তাতে জটিলতা বাড়তে পারে।

বারবার গোসল করলে কোনো অসুবিধা আছে?
নদীমাতৃক বাংলাদেশের কোনো নদ-নদীতে কিশোরদের দাপাদাপি বা দুরন্তপনার দৃশ্য দেখা যায় স্থানীয় গণমাধ্যমে। গরমের দিনে পানিতে নেমে গোসল বা শরীর ভিজিয়ে বসে থাকার জন্য জলাশয় দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়ার আকাঙ্ক্ষা তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক নয়।

তবে ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ বা এনএইচএস বলছে, কোথাও পুকুর বা জলাশয় দেখলেই নিজেকে ঠান্ডা করার জন্য নেমে পড়বেন না। কারণে তাতে আরো বেশি বিপদ হতে পারে, যা হয়তো আপাতত চোখে পড়ছে না।
এভারকেয়ার হাসপাতালে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রুবাইয়া আলী বলেন, অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা কোনোটাই ত্বকের জন্য ভালো নয়। ঠান্ডা পানিতে ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। ত্বকের জন্য উপকারী ব্যাকটেরিয়ার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। এতে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

আরো পড়ুন: আজ থেকে আরও বাড়বে তাপমাত্রা

ডা. তুষারের মতে, একাধিকবার গোসল করলেও বারবার মাথা না ভেজানোই ভালো। তাতে ঠান্ডাজনিত অসুস্থতা দেখা দিতে পারে। ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ বা এনএইচএস ত্বক ঠান্ডা রাখতে কিছু পরামর্শ দেয়। যেমন শরীরে ঠান্ডা পানি ছিটিয়ে দেওয়া কিংবা স্পঞ্জ করে গা মুছে দেওয়া। ঘাড়ে এবং বগলের নিচে বরফের প্যাকেট রেখেও শরীর ঠান্ডা রাখা যেতে পারে।

ঠান্ডা পানি খেলে কী হয়?
তীব্র দাবদাহের একটু প্রশান্তির খোঁজে ঠান্ডা পানির গ্লাস হাতে তুলে নেন অনেকেই। তবে, বেশি ঠান্ডা পানি খেতে বারণ করেন চিকিৎসকরা। এতে ঠান্ডাজনিত সমস্যা প্রকট হতে পারে। শরীরে তাপমাত্রায় ভারসাম্যহীনতাও দেখা দিতে পারে। ফলে, জ্বর, সর্দি, কাশিতে ভুগতে হতে পারে বলে সতর্ক করেন ডা. তুষার। 

পাকস্থলীতে হঠাৎ করে ঠান্ডা পানি প্রবেশ করলে হজমেও ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এসব সমস্যা এড়াতে স্বাভাবিকের চেয়ে অল্প ঠান্ডা পানি পানের পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। খোলা স্থানে বরফ মেশানো পানি বা শরবত খেলে অন্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি থাকে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা।


সর্বশেষ সংবাদ