দ্রুত ওজন কমায় ভেষজ জিরা পানি

 জিরা পানি
জিরা পানি  © সংগৃহীত

ওজন কমানো সহজ নয়। খাওয়াদাওয়া নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে ব্যায়াম- অনেক কিছুই করতে হয় ওজন কমানোর জন্য। এদিকে গবেষণা বলছে, সুশৃঙ্খল জীবনযাপনের সঙ্গে জিরা পানি খেলে শরীরের বাড়তি ওজন কমবে। জিরাতে থাকে থাইমল নামক একটি পদার্থ, যা শরীরে গেলে বেশি পরিমাণ বাইল তৈরিতে সাহায্য করে। বাইল হলো এমন একটি হরমোন, যা হজমে সাহায্য করে। বিশেষ করে কার্বোহাইড্রেট আর ফ্যাট ভালো হজম হয় বাইলের সাহায্যে। জিরার গন্ধ শরীরে গেলে বেশি পরিমাণ এনজাইম তৈরি হয়। তার প্রভাবেও হজমপ্রক্রিয়া গতি পায়। হজমশক্তি বাড়লে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সুবিধা হয়।

এক চিমটি পরিমাণ জিরার গুঁড়া আপনার বাড়তি ওজন কমাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। নতুন এক গবেষণায় বলা হয়েছে, জিরার গুঁড়া দ্রুত শরীরের ওজন কমায়, শরীরের চর্বি কমায় এবং প্রাকৃতিকভাবে শরীরের অস্বাস্থ্যকর কোলোস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে। বিশেষ করে জিরার পানি স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে বেশি উপকারী। প্রতিদিন এক গ্লাস জিরার পানি পান স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ উপকারী হতে পারে। সকালে খালি পেটে জিরা পানি পানে যেসব স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়-

দ্রুত ওজন কমাতে সহায়ক: জিরা পানি ভালো হজমে সহায়তা করে এবং দেহ থেকে টক্সিন বের করতে পারে। পরিপাকক্রিয়া ঠিক থাকলে, শরীর থেকে টক্সিন সহজেই পরিষ্কার হয়, ফলে ওজন হ্রাস এবং ফ্যাট কমে। তাই নিয়মিত জিরা পানে দ্রুত ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে: খালি পেটে জিরা পানি পান ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। জিরা শরীরের ইনসুলিন উৎপাদনকে উদ্দীপিত করে। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: জিরা পটাশিয়াম, আয়রন এবং ফাইবারের একটি চমৎকার উৎস। নিয়মিত জিরা পানি পান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে সহায়তা করে। এটি বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার পাশাপাশি, ঘনঘন অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনাকেও কম করতে সহায়তা করে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে: জিরা পানিতে উচ্চ পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে। পটাশিয়াম একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ, যা শরীরের সঠিক কর্মকাণ্ড বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া, এটি লবণের নেতিবাচক প্রভাবগুলির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।

লিভারের জন্য উপকারী: জিরাতে লিভারের ডিটক্সিফিকেশন বৈশিষ্ট্য বর্তমান। তাই জিরা পানি পান লিভারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত উপকারী। এটি ডাইজেস্টিভ এনজাইম উৎপাদন বাড়ায়। নিয়মিত জিরার পানি পানে শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেওয়ার পাশাপাশি, পিত্ত উৎপাদনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আরও পড়ুন: রক্তে প্লাটিলেট বাড়াতে যা খাবেন

রক্তাস্বল্পতা নিরাময়ে সাহায্য করে: আয়রন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খনিজগুলির মধ্যে একটি। এটি শরীরের সঠিক ক্রিয়াকলাপ বজায় রাখতে মূল ভূমিকা পালন করে। এছাড়া, রক্তে হিমোগ্লোবিন গঠনের জন্যও আয়রন প্রয়োজনীয়। এটি রক্তাল্পতা নিরাময়ে সাহায্য করে। আয়রনের ঘাটতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে, নিয়মিত জিরা পানি পান করতে পারেন।

ক্যানসারের ঝুঁকি হ্রাস করে: জিরার পানিতে অ্যান্টি-কার্সিনোজেনিক বৈশিষ্ট্য বর্তমান। এটি বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করতে অত্যন্ত কার্যকরী।

হৃদরোগের জন্য উপকারী: জিরার পানি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি, ট্রাইগ্লিসারাইড এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতেও অত্যন্ত উপকারী। নিয়মিত জিরা পানি পানে হৃদরোগজনিত নানা জটিলতা কমে।

ত্বক ও চুলের উপকারী: জিরার পানিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য বর্তমান। এটি শরীরকে ডিটক্স করতে সহায়তা করে। এর ফলে ত্বক স্বাস্থ্যজ্জ্বল এবং উজ্জ্বল থাকে। এছাড়াও, জিরা পানি ব্রণের সমস্যা দূর করে এবং সংক্রমণ থেকে ত্বককে রক্ষা করে। জিরার পানি চুলের ক্ষেত্রেও অত্যন্ত উপকারী। এটি চুলের গোড়া শক্তিশালী করে তোলার পাশাপাশি, চুল পড়া প্রতিরোধ করা, খুশকি দূর করা এবং অকালে চুল পেকে যাওয়ার সমস্যা দূর করতেও অত্যন্ত সহায়ক।

গর্ভবতী নারীর উপকারী: গর্ভবতী নারীর শরীর ঠিক রাখতে জিরা বেশ উপকারী। এই সময় হবু মায়েদের কনস্টিপেশন এবং হজমের সমস্যা হয়ে থাকে। জিরা এই সমস্যা কমাতে দারুন উপকারে লাগে। গর্ভাবস্থা সম্পর্কিত আরও সব লক্ষণ কমাতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়। সেই কারণেই তো হবু মায়েদের প্রতিদিন ১ গ্লাস গরম দুধে হাফ চামচ জিরা এবং ১ চামচ মধু মিশিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

ঘুমে সাহায্য করে: যাদের রাতের বেলা ভাল করে ঘুম আসে না, তারা প্রতিদিন ঘুমনোর আগে ১ চামচ চটকানো কলার সঙ্গে হাফ চামচ জিরা পাউডার মিশিয়ে খাওয়া শুরু করুন। ওষুধটি খেলে ঘুমের আর কোনও সমস্যা হবে না। মস্তিষ্কে মেলাটোনিন নামক এক ধরনের হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। যা ঘুম আসার ক্ষেত্রে দারুণ ভাবে সাহায্য করে।

ডায়েটে জিরা পানি যেভাবে তৈরি করবেন:

জিরার বীজে থাইমল এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তেল রয়েছে। এসব উপাদান লালা গ্রন্থিদের উদ্দীপ্ত করে হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। তাছাড়া, দুর্বল পাচনতন্ত্রকে শক্তিশালী করে। বদহজমের সমস্যা থাকলে জিরার চা পান করতে পারেন। কলার সঙ্গে জিরার গুঁড়ার মিশ্রণ খেলেও ওজন কমে।

পদ্ধতি-১: দুই চা চামচ জিরা সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে পানি সিদ্ধ করে সকালের চা হিসেবে পান করুন। ভেজানো জিরা চাবান। নিয়মিত এটি পান করলে আপনার শরীর থেকে চর্বি বের করে দিতে সহায়তা করবে।

পদ্ধতি-২: প্রথম পদ্ধতিটি কাজ না করলে দ্বিতীয় উপায়টি বেছে নিন। খাবারে জিরার পরিমাণ বাড়িয়ে নিন। এক চামচ জিরার গুঁড়ার সঙ্গে পাঁচ গ্রাম দই মিশিয়ে নিন। এটি নিয়মিত খেলে আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করবে।

পদ্ধতি-৩: তিন গ্রাম জিরার গুঁড়ার সঙ্গে কয়েক ফোঁটা পানি এবং মধু মিশিয়ে নিন। নিয়মিত এটি পান করুন। সবজির স্যুপ বা বাদামি চালের সঙ্গে এক চামচ জিরার গুঁড়া মিশিয়ে খেতে পারেন। এটি আপনার ওজন কমাবে।

সমাধান-৪: রসুন এবং লেবু উভয়ই শরীর থেকে অতিরিক্ত চর্বি ঝরাতে সাহায্য করে। গাজর এবং অন্যান্য সবজি সেদ্ধ করে নিন। রসুন কুচি কুচি করে কেটে এরমধ্যে দিন এবং লেবুর রস মিশিয়ে নিন। কিছু জিরার গুঁড়া উপরে ছিটিয়ে দিন।

প্রতিরাতে খাবারটি খান। উপরোক্ত পদ্ধতিগুলো অন্তত ১৫ দিন পরীক্ষা করে দেখুন। আপনার শরীরে জাদুকরী পরিবর্তনটা আপনি নিজেই টের পাবেন।


সর্বশেষ সংবাদ