রোজা ফরজ নয় যাদের জন্য
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৫, ০৫:৫০ PM , আপডেট: ০২ মার্চ ২০২৫, ০৬:৪৫ PM

রমজান মাসে সবার জন্য রোজা ফরজ হলেও কিছু বিশেষ শর্তে ইসলামে রোজা না রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এটি কোনো শিথিলতা নয় বরং ইসলামি শরিয়তেরই অন্যতম সৌন্দর্য—মানবিকতা ও সহনশীলতা। এমন কিছু পরিস্থিতি রয়েছে, যেখানে রোজা পালন করা শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। ইসলাম এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে কিছু মানুষকে রোজা না রাখার অনুমতি দিয়েছে। তবে এর পরিবর্তে কী করণীয়, সেটাও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। চলুন, জেনে নেওয়া যাক—কাদের জন্য রোজা না রাখা বৈধ এবং তাদের কী করণীয়।
১. অসুস্থতা: শরীরের সুস্থতার জন্য ছাড়
যদি কোনো ব্যক্তি এমন অসুস্থ হন যে রোজা রাখলে তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটবে, অসুস্থতা দীর্ঘায়িত হবে বা আরোগ্য লাভ বিলম্বিত হবে, তবে তার জন্য রোজা না রাখার অনুমতি রয়েছে। ইসলাম কঠোরতার পরিবর্তে সহজ ও সহনশীলতার পথ দেখিয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন—
“...তোমাদের কেউ অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় এ রোজাগুলো পূরণ করুক...” (সূরা বাকারা: ১৮৫)
এই অনুমোদন ইসলামের অনন্য দৃষ্টান্ত, যেখানে কষ্টের পরিবর্তে সহজীকরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে পরবর্তীতে সুস্থ হয়ে গেলে কাজা আদায় করতে হবে।
আরও পড়ুন: পবিত্র রমজানকে ‘ইবাদতের বসন্তকাল’ বললেন শায়খ আহমাদুল্লাহ, স্ট্যাটাস ভাইরাল
২. সফর: দীর্ঘ পথযাত্রায় রোজার বিকল্প
রমজানে কেউ যদি সফরে থাকেন, তবে তার জন্য রোজা রাখা বাধ্যতামূলক নয়। সে রোজা রাখতে বা না রাখতে স্বাধীন। তবে পরে কাজা করে নিতে হবে। ইসলামে সফরের দূরত্ব নির্ধারিত হয়েছে ৮০ কিলোমিটার। অর্থাৎ, কেউ যদি ৮০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে ভ্রমণে থাকেন, তবে তিনি মুসাফির হিসেবে রোজা না রাখার অনুমতি পাবেন।
গাড়িচালক, পাইলট কিংবা যেসব ব্যক্তি পেশাগত কারণে নিয়মিত ভ্রমণ করেন, তারাও এই সুবিধার অন্তর্ভুক্ত। তবে সফর শেষে স্থায়ীভাবে কোথাও অবস্থান করলে রোজা রাখা বাধ্যতামূলক হয়ে যাবে।
৩. হায়েজ ও নেফাস: নারীদের জন্য বিশেষ বিধান
ঋতুস্রাব (হায়েজ) ও সন্তান জন্মের পর রক্তস্রাব (নেফাস) চলাকালীন নারীদের জন্য রোজা রাখা হারাম। তারা এই সময় রোজা পালন করতে পারবেন না, তবে পরবর্তী সময়ে ছুটে যাওয়া রোজাগুলো কাজা করে নিতে হবে।
হাদিসে আয়েশা (রা.) বলেন,
“আমাদের (নারীদের) রোজার কাজা আদায় করতে বলা হয়েছে, কিন্তু নামাজের কাজা করতে বলা হয়নি।” (বুখারি: ৩২১)
এই বিধান ইসলামের ন্যায়বিচার ও সহজীকরণের নিদর্শন। শরীর দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কায় তাদের জন্য এই বিশেষ সুবিধা রাখা হয়েছে।
৪. দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা: বিকল্প ব্যবস্থা
যেসব ব্যক্তি এমন কোনো দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত, যেখান থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা নেই, তারা রোজা রাখার পরিবর্তে প্রতিদিন একজন গরিব মানুষকে খাবার দান করবেন। যেমন—ক্যান্সার, কিডনি সমস্যা বা দুর্বলতা যাদের স্থায়ী হয়ে গেছে। তাদের জন্য রোজার কাজা নয়, বরং ফিদিয়া (একজন দরিদ্রকে খাবার দেওয়া) নির্ধারিত হয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“আর যারা রোজা রাখতে অক্ষম, তারা একজন মিসকিনকে খাবার দেবে।” (সূরা বাকারা: ১৮৪)
আরও পড়ুন: সাহরিতে আজানের সময় পানি খেলে রোজা হবে?
৫. বার্ধক্য: শারীরিক সামর্থ্যের অভাব
অত্যন্ত বৃদ্ধ বা শারীরিকভাবে খুব দুর্বল, যারা রোজা রাখার শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন, তাদের জন্য রোজা রাখা আবশ্যক নয়। তাদের ক্ষেত্রেও প্রতিদিন একজন গরিবকে খাবার দেওয়ার বিধান রয়েছে।
এ ক্ষেত্রে ইসলাম শুধু শরীরের সামর্থ্যকেই নয়, বরং মানসিক ও শারীরিক দুর্বলতাকে বিবেচনায় নিয়েছে। যদি বৃদ্ধ ব্যক্তি চেতনা হারিয়ে ফেলেন, তবে তার কোনো বিধানই প্রযোজ্য হবে না।
৬. গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মা: নিজেদের ও সন্তানের সুরক্ষা
গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মা যদি মনে করেন যে রোজা রাখলে তাদের নিজের বা তাদের সন্তানের ক্ষতি হতে পারে, তবে তারা রোজা না রাখার অনুমতি পাবেন। তবে পরে কাজা আদায় করতে হবে।
কিন্তু যদি কোনো নারী শুধুমাত্র সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কায় রোজা না রাখেন, তবে তাকে কাজার পাশাপাশি প্রতিদিন একজন গরিব মানুষকে খাবার দান করতে হবে।
ইসলামের সহজীকরণ নীতি: ভারসাম্যপূর্ণ বিধান
ইসলামে প্রতিটি বিধানের পেছনে যুক্তি ও মানবিকতা রয়েছে। শরীরের ক্ষতি না করে, সুস্থ ও সক্ষম ব্যক্তির জন্য রোজা পালন বাধ্যতামূলক, আবার অসুস্থ বা অক্ষম ব্যক্তির জন্য বিকল্প ব্যবস্থাও রয়েছে।
রমজান কেবল উপবাসের মাস নয়, বরং আত্মশুদ্ধি, সহানুভূতি ও দায়িত্ববোধের মাস। তাই শরিয়ত প্রদত্ত এই ছাড়কে অবহেলা না করে যথাযথভাবে কাজে লাগানোই হবে প্রকৃত মু’মিনের কাজ।