দাবি আদায়ে অনড় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা, যা জানাল পেনশন কর্তৃপক্ষ 

পেনশন স্কিম প্রত্যাহার

শিক্ষকরা আন্দোলন করছেন
শিক্ষকরা আন্দোলন করছেন  © ফাইল ফটো

নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের জন্য চালু হওয়া সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ বাতিলের দাবিতে অনড় রয়েছেন দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তাদের দাবি, নতুন এই স্কিম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করবে। গত দু’মাস ধরে বিবৃতি, সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধনের পরও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের উদ্যোগ না নেওয়ায় কঠোর আন্দোলনের দিকে যাচ্ছেন তারা।

চলতি মাসের শুরুতে প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে কর্মবিরতি কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছেন শিক্ষকরা। যদিও সরকারের পেনশন কর্তৃপক্ষ বলছে, শিক্ষকদের দাবিগুলো এখনো অফিসিয়ালি আসেনি। যদি আসে তারপর পেনশন কর্তৃপক্ষ সরকারকে বিষয়টি জানাতে পারবে।

সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আগের চারটি স্কিমের সঙ্গে ‘প্রত্যয় স্কিম’ নামের একটি প্যাকেজ চালু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে সব ধরনের স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীনস্থ অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ২০২৪ সালের ১ জুলাই পরবর্তী সময়ে যোগ দেওয়া কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনায় অন্তর্ভুক্ত হবেন।

জানা যায়, গত ৪ জুন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে অবস্থান কর্মসূচি করেন সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। শিক্ষকদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে কর্মসূচিতে অংশ নেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। এতে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়ে। প্রত্যয় স্কিম বাতিল না করা হলে আগামী ১ জুলাই থেকে টানা কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতারা।

শিক্ষক নেতারা বলছেন, ‘প্রত্যয়’ নামে নতুন যে স্কিম ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ স্কিমে অবসরের পর এককালীন অর্থ পাওয়া যাবে না। এজন্য তারা এ স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হতে চান না। আগের নিয়মে পেনশন পেতে চান।

তবে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘প্রত্যয়’ স্কিমের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবসরের পর মাসিক ভাতা পাবেন। আগে প্রভিডেন্ট ফান্ডে সংস্থার দেওয়া অর্থ কর্মচারীর ‘কন্ট্রিবিউশন’—এর চেয়ে কম হলেও প্রত্যয় স্কিমে প্রতিষ্ঠানকে কর্মীর সমপরিমাণ টাকা জমা দিতে হবে। এমন শর্ত থাকায় পেনশনার আরও বেশি লাভবান হবেন।

চলতি বছরের মার্চে সর্বজনীন পেনশনে নতুন ‘প্রত্যয় স্কিম’ যুক্ত করে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে দুটি পৃথক প্রজ্ঞাপনে প্রত্যয় স্কিমের রূপরেখা ঘোষণা করা হয়। ২০ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নতুন এ স্কিমের বিষয়ে বিস্তারিত জানায়। এরপর থেকেই মূলত আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছেন শিক্ষকরা। কোনোভাবেই শিক্ষকরা এ পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হতে চান না। তাই পেনশন স্কিমের আওতার বাইরে থাকতে আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষকরা।

আগামী ১ জুলাই থেকে বাংলাদেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকরা সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। আগামী ২৪ জুনের মধ্যে সর্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহার এবং পূর্বের পেনশন স্কিম চালু রাখা, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তন কার্যকর করা না হলে তারা এই কর্মবিরতিতে যাবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন। গত ৪ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কলা ভবনে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ।

প্রত্যয় স্কিম নিয়ে জারি করা প্রজ্ঞাপন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তির তথ্যানুযায়ী— আগামী ১ জুলাই বা তার পরে স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থার চাকরিতে যারা যোগদান করবেন, তাদের বাধ্যতামূলকভাবে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় প্রত্যয় স্কিমে যুক্ত করা হবে। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এর অন্তর্ভুক্ত হবে। এছাড়াও ২০২৫ সাল থেকে সরকারি কর্মকর্তারা এ পেনশনের অন্তর্ভূক্ত থাকবে। 

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহসাচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নিজামুল হক ভুইঁয়া দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, একটা শ্রেণি শিক্ষকদের সুবিধা কমানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। যদি শিক্ষকদের সুবিধা কমানো হয়, তাহলে মেধাবীরা এ পেশায় আর আসবে না। প্রত্যয় স্কিম যতদিন বাতিল হবে না ততদিন এ আন্দোলন চলবে।  

শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, জাতির কারিগর শিক্ষকরা। সেই শিক্ষকদের সুবিধা কমিয়ে দিয়ে জাতিকে বঞ্চিত করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। আর যারা এ পেনশন প্রণয়ন করেছে তারা কিন্তু পেনশন তাদের জন্য আওতাভুক্ত করছে না। তাহলে বিষয়টা কি দাঁড়ালো। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো।    

সরকারের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘মূল বেতনের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বা সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা– এ দুয়ের মধ্যে যেটি কম, সংশ্লিষ্ট সংস্থা তা চাকরিজীবীর বেতন থেকে কেটে রাখবে এবং সমপরিমাণ অর্থ সংস্থা দেবে। দুই অঙ্ক একত্রে চাকরিজীবীর পেনশন আইডির (পরিচয় নম্বর) বিপরীতে সর্বজনীন পেনশন তহবিলে জমা করবে। যেদিন প্রতি মাসের বেতন দেওয়া হয়, তার পরের কর্মদিবসের মধ্যেই কাজটি করতে হবে। এ জমা অর্থের পরিমাণ ও মেয়াদের ভিত্তিতে অবসরকালীন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী পেনশন ভোগ করবেন।’ তবে নতুন এ সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়েছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তারা বলছেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সব মিলিয়ে শিক্ষক রয়েছেন প্রায় ১৬ হাজার। কর্মকর্তা মিলিয়ে এ সংখ্যা ৩০ হাজারের বেশি। কর্মচারী ধরলে সব মিলিয়ে এ সংখ্যা চার লাখে দাঁড়াবে। অথচ সরকারি অন্যান্য চাকরিজীবীর সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি। তবে তাদের ক্ষেত্রে আগের নিয়মেই পেনশন ব্যবস্থা চালু রাখা হয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য গোলাম মোস্তফা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শিক্ষকদের দাবি অফিসিয়ালি এখনো আসেনি। আসলে আমরাও মতামত দিব সরকারকে। আর অফিসিয়ালি আসলে সরকার অবশ্যই একটা সিদ্ধান্ত দিবে। পেনশন কর্তৃপক্ষ এখানে কিছুনা। আমরা সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করি। সরকার যে সিদ্ধান্ত নেয় আমরা শুধু সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করি।

শিক্ষকদের বিভিন্ন দাবির বিষয়ে জানানো হলে তিনি বলেন, প্রত্যয় স্কিমের এনরোলমেন্ট এখনো শুরু হয়নি। সরকারকে জানালে সরকারি সিদ্ধান্তে এটা যে কোনো সময় নতুন সিদ্ধান্ত আসলে এটা যুক্ত হবে। আমরা সরকারের কাজ করি। শিক্ষকরাও সরকারের সাথে কাজ করে। আমরা কেউই সরকারের বাহিরের না। 

প্রত্যয় স্কিম নিয়ে মূল্যায়ন রিপোর্ট প্রকাশ ঢাবি শিক্ষক সমিতির
সর্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে তা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য একটি বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা বলে মনে করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নেতারা। একইসঙ্গে বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে প্রত্যয় স্কিমে অন্তর্ভুক্তকরণ বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে অবনমন করার একটি অপচেষ্টা বলে মনে করেছেন তারা। 

সম্প্রতি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূইয়া ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা স্বাক্ষরিত এক মূল্যায়ন রিপোর্টে সর্বজনীন পেনশন কেন বৈষম্যমূলক তার তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে।

মূল্যায়ন রিপোর্টে বলা হয়, প্রথমেই আমরা পরিমাণবাচক তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে প্রত্যয় স্কিম কেন গ্রহণযোগ্য নয় তার উপর আলোকপাত করছি। এক্ষেত্রে আমাদের অনুমিত শর্ত হলো ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বর্তমান প্রজন্ম হতে আরো অধিক সুবিধাপ্রাপ্ত হবে। দ্বিতীয়ত, নতুন পদ্ধতি অবশ্যই প্রচলিত পদ্ধতি হতে অধিকতর সমান সুবিধা প্রদানে সমর্থ হবে। তৃতীয়, নতুন পদ্ধতি অর্থাৎ প্রত্যয় স্কিম যদি প্রচলিত সুবিধার চেয়ে কম সুবিধাদি প্রদান করে তাহলে প্রচলিত পেনশন স্কিম চালু রাখা। শুরুতে পরিমাণবাচক তথ্য উপস্থাপনের জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপককে বিবেচনা করতে পারি। একজন অধ্যাপক অবসরে গেলে বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায় কি কি সুবিধা পান তা উপস্থাপন করা হলো। 

একইসঙ্গে প্রস্তাবিত ও আদেশ জারিকৃত প্রত্যয় স্কিম' কি কি সুবিধাদি প্রদান করবে তাও উপস্থাপন করা হলো। তুলনামূলক চিত্র হতে আমরা সহজেই অনুমান করতে পারব প্রত্যয় স্কিম বিদ্যমান পেনশন স্কিমের তুলনায় স্বাভাবিক না নিকৃষ্ট—

১) বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক যখন অবসরে যান অবসর সময়কালীন তার মূল বেতন থাকে ৭৮ হাজার টাকা। বিদ্যমান পেনশনে তার বেতন হতে পেনশন বাবদ কোন অর্থ কর্তন করা হয় না। প্রত্যয় স্কিমে মূল বেতনের ১০ শতাংশ কর্তন করা হবে। সমপরিমাণ প্রতিষ্ঠান দিবে। অর্থাৎ, মাসিক পেনশন হিসাবে প্রত্যয় স্কিম হতে অবসরকালীন যা পাবেন তার অর্ধেক আপনার নিজের কিন্তু বিদ্যমান পেনশনে অবসরকালীন যা পাবেন তার পুরোটাই সরকারের। অঙ্ক কষলে বুঝা যাবে 'প্রত্যয় স্কিমে' সরকারি অংশটুকু কত। 

২) একজন ছাত্র পাশ করার পর ৩০ বছরেও যদি শিক্ষকতায় যোগদান করে তার চাকরিকাল দাঁড়ায় ৩৫ বছর। ধরে নিলাম সে মাসিক ৫ হাজার টাকা মূল বেতন হতে কর্তন করে বাকি ৩৫ বছরের জন্য। সে হিসাবে মোট কর্তনের পরিমাণ দাঁড়ায় ২১ লাখ টাকা। বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায় মোট কর্তনের পরিমাণ শূন্য । 

ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ২৫, ২৬ ও ২৭ জুন অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করবেন শিক্ষকরা। এছাড়াও, ৩০ জুন শিক্ষকরা পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করবেন। তবে, পরীক্ষাসমূহ কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে। এরপরও দাবি আদায় না হলে আগামী ১ জুলাই থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালিত হবে বলে জানান বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতারা।

৩) বর্তমানে একজন অধ্যাপক বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায় এককালীন আনুতোষিক পান ৮০ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় বা প্রত্যয় স্কিমে এককালীন আনুতোষিকের পরিমাণ শূন্য।

৪) মাসিক পেনশন ও অন্যান্য ভাতাদি যুক্ত করলে একজন অধ্যাপক মাসিক ৪৫ হাজার ৭৯০ টাকা পান বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায়। প্রত্যয় স্কিমে যুক্ত হলে ৩০ বছর পর পাবেন মাসিক ১ লাখ ২৪ হাজার ৬৬০ টাকা, যার অর্ধেক অর্থাৎ ৬২ হাজার ৩৩০ টাকা নিজের বেতন হতে কর্তনের জন্য। 

৫) বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায় এককালীন আনুতোষিক যদি ১০ শতাংশ হারে পেনশন ফান্ডে অথবা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে তাহলে মাসিক পেনশন দাঁড়ায় ১ লাখ ১৩ হাজার ৬৫ টাকা (৬৭,২৭৫+৪৫,৭৯০)। অর্থাৎ, বিদ্যমান প্রচলিত সুবিধা অর্ধেক করার প্রত্যয় স্কিম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর চালু করার নীরব ষড়যন্ত্র চলছে। 

৬) বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায় পেনশনার ও নমিনি আজীবন পেনশন প্রাপ্ত হন। কিন্তু প্রত্যয় স্কিমে পেনশনার যদিও আজীবন পেনশন প্রাপ্ত হবেন। কিন্তু, পেনশনারের যদি কোন কারণে মৃত্যু হয় তবে নমিনি পেনশনারের বয়স ৭৫ বৎসর পূর্তি পর্যন্ত পেনশন প্রাপ্ত হবেন। এক্ষেত্রে নমিনি বৃদ্ধ বয়সে একটা ঝুঁকির মধ্যে পড়বেন। আবার নমিনিও যদি পেনশনার হন, তাহলে উনি কি ডাবল বেনিফিট পাবেন কি না তা নিশ্চিত নয়। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় ধরে নিতে পারি এক সময় সকল বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ সর্বজনীন পেনশনে থাকবেন। 

৭) বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায় নিট পেনশনের উপর ৫ শতাংশ হারে বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট দেয়া হয়। কিন্তু প্রত্যয় স্কিমে বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট শূন্য যা বাস্তবিক নয়। পেনশনারের ক্রয়ক্ষমতাকে বিবেচনায় না নিয়ে প্যাকেজসমূহ তৈরি কোনোভাবেই বাস্তবিক নয় এবং এক্ষেত্রে বিদ্যমান পেনশন স্কিমের সাথে প্রত্যয় স্কিম সাংঘর্ষিক। 

৮) বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায় বর্তমানে একজন অধ্যাপক কমপক্ষে ১ লাখ ১৩ হাজার ৬৫ টাকার মাসিক সুবিধা ভোগ করতে পারেন। কিন্তু প্রত্যয় স্কিমে ভবিষ্যতে যে সুবিধার কথা বলা হয়েছে তা বর্তমান পেনশন গ্রহীতার তুলনায় অতি নগণ্য। এ যে কারণে প্রত্যয় স্কিম বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের কাছে গ্রহণযোগ্য নয় । 

৯) বিদ্যমান পেনশনে অর্জিত ছুটি অবসরকালীন জমা থাকলে তার পরিবর্তে অর্থ প্রদানের ব্যবস্থা থাকলেও প্রত্যয় স্কিমে এ বিষয়ে কোন উল্লেখ নেই। অতএব বিদ্যমান ব্যবস্থার সাথে তুলনা করলে প্রত্যয় স্কিম বিশ্ববিদ্যালয় সমাজের সাথে বৈষম্যপূর্ণ আচরণ করছে বলে প্রতীয়মান হয়। 

১০) বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায় একজন এলপিআর সুবিধা প্রাপ্ত হন। কিন্তু প্রত্যয় স্কিমে এ বিষয়ে কোন দিক নির্দেশনা নেই। এলপিআরের অর্থ বিবেচনায় নিলে বিদ্যমান পেনশন স্কিম হতে প্রাপ্ত সুবিধা প্রত্যয় স্কিমের তুলনায় আরো অনেক বেশি বলে প্রতীয়মান হয়। 

১১) বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদকাল ৬৫ বছর, কর্মকর্তাদের ৬২ বছর এবং কর্মচারীদের ৬০ বৎসর পর্যন্ত। প্রত্যয় স্কিমে অবসরকালীন বয়স স্থির ধরা হয়েছে ৬০ বছর। এক্ষেত্রে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের বয়সসীমা কত হবে বা প্রত্যয় স্কিমে কীভাবে সামঞ্জস্য আনা হবে এ ব্যাপারে কোন দিক নির্দেশনা নেই। এতে প্রতীয়মান হয় বিশদ বিশ্লেষণ ছাড়া প্রত্যয় স্কিম চালু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

১২) বিদ্যমান পেনশন স্কিমে মাসিক পেনশনের সাথে মাসিক চিকিৎসা ভাতা, বছরে দু’টি উৎসব ভাতা ও ১টি বৈশাখী ভাতা প্রদান করা হয় যা অর্থমূল্যে অনেক। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় প্রত্যয় স্কিম প্রকল্পে এসব কোন কিছুই বিবেচনায় নেয়া হয়নি। প্রত্যয় স্কিম অন্যান্য স্কিমের মতই বিবেচনা করা হয়েছে। যার ফলে এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। 

১৩) প্রচলিত পেনশন ব্যবস্থায় পিএফ থেকে ১০ শতাংশ কর্তন করা হয় কিন্তু পেনশন বাবদ কোন অর্থ কর্তন করা হয় না। বর্তমান সুবিধা অব্যাহত রাখতে হলে ১০ শতাংশ হারে পিএফ চালু রাখতে হবে এবং ১০ শতাংশ হারে বা ৫ হাজার টাকা যা কম তা কর্তনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। অর্থাৎ, চাকরির শুরুর দিকে ২০ শতাংশ কর্তন চাকরিজীবীদের জন্য বোঝা হয়ে যায় কিনা তা ভাবনার বিষয়। এ থেকেই প্রতীয়মান প্রত্যয় স্কিম প্রচলিত পেনশন স্কিমের তুলনায় ভবিষ্যৎ কর্মজীবীদের অবসরোত্তর জীবন যাত্রায় কতটুকু ভূমিকা রাখবে।


সর্বশেষ সংবাদ