খালেদা জিয়ার কিছু হলে প্রধানমন্ত্রীও দায়ী হবেন: ইউট্যাব 

ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ
ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ  © লোগো

বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কিছু হলে সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়ী থাকবেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)। 

শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) ইউট্যাবের মহাসচিব অধ্যাপক ড. মো. মোর্শেদ হাসান খান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা গুরুতর হওয়া সত্ত্বেও তাকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ না দেওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করতে গিয়ে এমন কথা জানায় সংগঠনটি।  

বিবৃতিতে ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মো. মোর্শেদ হাসান খান বলেন, এদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং আপোসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে অত্যন্ত অসুস্থ। প্রবীণ এই নারী বর্তমানে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের কেবিনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড একাধিকবার পরামর্শ দিয়েছে যে, খালেদা জিয়ার অবস্থা জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। দেশে তাকে চিকিৎসা দেওয়ার মতো আর কিছু বাকী নেই। কেননা তার চিকিৎসার জন্য যে ধরনের যন্ত্রপাতি দরকার সেসব বাংলাদেশে নেই। ফলে খালেদা জিয়াকে বাঁচাতে হলে বিদেশে অ্যাডভান্সড্ সেন্টারে নিয়ে ট্রিটমেন্ট অতি জরুরি। 

বিবৃতিতে বলা হয়, খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হলেও সরকার বার বার আইনের দোহাই দিয়ে তাকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা নিতে দিচ্ছে না। যা সত্যিই অনাকাক্সিক্ষত, বেদনাদায়ক ও অমানবিক। এভাবে পরিকল্পিতভাবে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। অথচ এই সরকারের আমলে খুনের চিহ্নিত আসামি ও সন্ত্রাসীরা ছাড়া পেয়ে যায়। সুতরাং আমরা সরকারকে বলছি- রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ দিন। দলীয় সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রতিহিংসাপরায়ণ মনোভাব পরিহার করে গণতান্ত্রিক পথে চলার আহ্বান করছি। অন্যথায় খালেদা জিয়ার কিছু হলে সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়ী থাকবে। তাকেও মামলার প্রধান আসামি করা হবে। কারণ সরকার প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা এর দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না।

বিবৃতিতে ইউট্যাবের শীর্ষ দুই নেতা বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বয়স এখন ৭৯ বছর। শর্ত সাপেক্ষে নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেলেও প্রবীণ বয়সেও তিনি কার্যত কারাবন্দি এবং দীর্ঘদিন ধরে নানা রোগে আক্রান্ত। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সুস্থ অবস্থায় কারাগারে যাওয়ার পর তার শারীরিক জটিলতা ও অসুস্থতা আরও বেড়েছে। দীর্ঘ প্রায় চার বছর তার যথাযথ কোনো চিকিৎসা হয়নি। কারাগারে অমানবিক ও স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে তিনি অনেক নতুন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। হার্ট, লিভার, কিডনি ও চোখের সমস্যা ছাড়াও পুরনো আর্থ্রাইটিস এবং কোভিড-১৯ আক্রান্ত ও কোভিড পরবর্তী জটিলতায় তার শারীরিক অবস্থা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। খালেদা জিয়ার চিকিৎসক দল তার অসুস্থতার যে বিবরণ দিয়েছেন, তা খুবই উদ্বেগজনক। আমরা মনে করি, দেশের একজন শীর্ষ রাজনীতিক, একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক, একজন নারী হিসেবে উপরন্তু একজন জেলবন্দি ব্যক্তির যথাযথ সুচিকিৎসা পাওয়া ন্যূনতম মানবাধিকারের অংশ। তার মৌলিক অধিকার ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা জাতি হিসেবে আমাদেরও দায়িত্ব এবং কর্তব্য। আমরা সরকারকে আহ্বান জানাবো- খালেদা জিয়াকে জামিনে স্থায়ী মুক্তি দিয়ে বিদেশে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ দিন। অন্যথায় তার কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সম্পূর্ণরুপে দায়ী থাকবে আওয়ামী লীগ সরকার ও তার প্রধান।

তারা আরও বলেন, খালেদা জিয়া দেশের তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপির মতো জনপ্রিয় ও বৃহৎ রাজনৈতিক দলের চেয়ারপারসন। তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি এদেশের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। খালেদা জিয়া দেশ ও জনগণের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে অন্যায়ের সঙ্গে কখনো আপোস করেননি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও বহুদলীয় গণতন্ত্র রক্ষা এবং বিচার বিভাগ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং এদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নে খালেদা জিয়ার অসামান্য অবদান রয়েছে। এজন্যই তাকে কানাডার মানবাধিকার সংগঠন ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ খেতাব দিয়েছে। ১৯৯১ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় এসে তিনি দেশের নাজুক অর্থনীতিকে কাঠামোগত নানা পরিবর্তন ও সংস্কারের মাধ্যমে চাঙ্গা করেছেন। অর্থনীতির উদারীকরণ ছাড়াও খালেদা জিয়ার আমলে নারীর ক্ষমতায়ন এবং শিক্ষা বিস্তারে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়। বিশেষ করে মেয়েদের অবৈতনিক শিক্ষা ও উপবৃত্তি দেওয়ার যুগান্তকারী প্রকল্প তিনি সূচনা করেন। দেশের অবহেলিত এলাকায় অসংখ্য রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট তৈরি এবং মানুষকে স্বনির্ভর করে তুলতে নানা ধরনের আত্মকর্মসংস্থানমূলক প্রকল্পও তিনি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেন।

এ ছাড়াও বিবৃতিতে বলা হয়, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে বিভিন্ন পদক্ষেপ যেমন- মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা এবং রায়েরবাজারে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ তার শাসনামলেই নির্মিত হয়েছে। এভাবে তার অবদান একে একে বিবরণ দিয়ে বর্ণনা করা অসম্ভব। তাই এমন একজন দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদের সামগ্রিক অবদান এবং তার বার্ধক্যের এ কঠিন সময়ের কথা বিবেচনা করে সরকার রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে খালেদা জিয়ার প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ প্রদর্শন করবে এবং বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানোর পদক্ষেপ নিবে বলে আমরা প্রত্যাশা রাখি।


সর্বশেষ সংবাদ