ফ্রিল্যান্সিং করে মাসে লাখ টাকা আয় ড্যাফোডিল শিক্ষার্থী আবেদের

আবেদ সরকার
আবেদ সরকার  © ফাইল ছবি

আবেদ সরকার (২২)। লেখাপড়া করেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মাল্টিমিডিয়া অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি বিভাগে। কলেজে পড়ালেখার সময়ই শুরু করেছিলেন ফ্রিল্যান্সিং। এখন মাসে আয় করছেন লাখ টাকারও বেশি। পাশাপাশি অন্যদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন অনলাইনে কাজ করে উপার্জন করার। 

আবেদ সরকারের বাড়ি নরসিংদীর শিবপুর উপজেলায়। উপজেলার আবুল সরকারের ছেলে তিনি। এক বোন ও দুই ভাইয়ের সংসারে আবেদ দ্বিতীয়। আবেদনের বয়স যখন সতেরো পার হয়নি তখন থেকেই ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেন তিনি।

আবেদ জানান, বর্তমানে চাকরি পাওয়া খুবেই কঠিন বিষয় হয়ে পড়েছে। হাজার হাজার বেকার ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অনলাইনে প্রচুর কাজ রয়েছে। এখান থেকে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। তাই চাকরির পেছনে না ঘুরে একটা কোর্স করে অনলাইনে কাজ করেও স্বাবলম্বী হওয়া যায়। 

আবেদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ছোটবেলা থেকেই তার ইচ্ছা ছিল ফ্রিল্যান্সার হওয়ার। তিনি অনলাইনে আয়ের বিষয়ে বেশ আগ্রহী ছিলেন তিনি। নিজের অদম্য ইচ্ছা থেকেই ২০১৭ সালে ইন্টারনেটে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেন। শুরুর অভিজ্ঞতাটা খুব ভালো ছিল না তার। নেননি কোনো প্রশিক্ষণও। শুধুমাত্র কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ইন্টারনেটের বিভিন্ন লেখা পড়ে এবং ইউটিউবে ভিডিও দেখে ফ্রিল্যান্সিং শেখেন তিনি। আর এই কঠোর পরিশ্রমের কারণে ধীরে ধীরে সফলতার দেখা পেতে শুরু করেন। এক সময় তার আয়ও বাড়তে থাকে। পরবর্তীতে নিজের নামে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করেন। শুরুতে প্রশিক্ষণার্থী সংখ্যা ছিল মাত্র দশজন। নেটওয়ার্ক সমস্যা আর প্রশিক্ষণার্থী সংখ্যা কম থাকায় কিছুটা হোচট খেতে হয় তাকে। তবে হাল ছাড়নেনি তিনি। পড়ালেখাসহ ব্যক্তিগত কারণে পরের বছরই শহরে পা রাখেন আবেদ। এরপর আর তাকে ফিরে তাকাতে হয়নি। দীর্ঘ পাঁচ বছরের কঠোর পরিশ্রম করে এখন তিনি সফল।

আবেদ বলেন,‘পরিবারে আমরা দুই ভাই ও এক বোন। এরমধ্যে আমার দায়িত্ব একটু বেশি। পড়ালেখার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং থেকে আমার আয়ের পথ খুলেছে। এখন মাসে আয় হয় লাখ টাকার কাছাকাছি। বছর শেষে প্রায় আট-দশ লাখ আয় করছি। ফ্রিল্যান্সিংয়ের আয় থেকে পরিবারের দেখভাল ও ছোট ভাইয়ের পড়ালেখার খরচ চালাচ্ছি।’

বেকারত্ব দূরীকরণে ভূমিকা রাখার আগ্রহের কথা জানিয়ে এই তরুণ বলেন,‘বেকারত্ব একটা অভিশাপ। আমি চাই এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা ফ্রিল্যান্সিং শিখে নিজেদের আয়ের ব্যবস্থা নিজেরাই করুক। বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে ডিজিটালাইজ করার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সেই উদ্যোগে উদ্যোগী হয়ে আমি কাজ করে যাচ্ছি। পড়ালেখার পাশাপাশি নিজেরা কিছু করতে চাইলে ফ্রিল্যান্সিং সুবিধা নেওয়া উচিত। প্রতিদিন আট-দশ ঘণ্টা ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে কাজ করতে পারলে বেকারত্ব দূর করা সম্ভব।’

আবেদ নরসিংদী নগরীতে স্বাধীন উদ্যোক্তা নামে গড়ে তুলেছেন একটি ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এখান থেকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, এসইও (সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন), লিড জেনারেশন, সিপিএ মার্কেটিং, কন্টেন্ট মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংসহ আউটসোর্সিংয়ে বিভিন্ন মাধ্যম সম্পর্কে তরুণ-তরুণীদের কাজ শেখাচ্ছেন।

বর্তমানে স্বাধীন উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানে অর্ধশত শিক্ষার্থী ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোসিং এর ওপর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। আবেদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ শুরু করেছেন দেড় হাজেরের বেশি তরুণ-তরুণী। 

ফ্রিল্যান্সিং পেশা বিষয়ে সফল ফ্রিল্যান্সার মো. ইসমাইল আহমেদ বলেন, ‘আউটসোর্সিং বা ফ্রিল্যান্সিং পেশাটি বাংলাদেশের দক্ষজনশক্তি তৈরি করার একটি বড় খাত হিসেবে আগমীতে বিবেচিত হবে। তাই এই খাতকে সঠিকভাবে মূল্যায়িত করে দখল করা জরুরি। এই পেশার কারণে দেশে শিক্ষিত বেকার যুবকের হার কমবে ও আবেদের মতো হাজারো মানুষ স্বাধীনভাবে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র পাবে। এই পেশাটিকে সামাজিকভাবে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া দরকার।’


সর্বশেষ সংবাদ