তিন সপ্তাহ হেঁটে ২২ জেলা ভ্রমণ, লক্ষ্য ৬৪
প্রায় ৩ সপ্তাহ পায়ে হেঁটে ২২টি জেলা ভ্রমণ করে নতুন রেকর্ড গড়েছেন হাঁটাবাবা খ্যাত সাইফুল ইসলাম। তার ডাকনাম শান্ত। লম্বা দূরত্ব হাঁটেন (লং ডিসটেন্স হাইকিং) বলে সাইফুলকে এই নামেই ডাকেন পরিচিতজনরা। তবে তার উদ্দেশ্য দেশের ৬৪টি জেলা হেঁটে সম্পন্ন করা।
বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত সাইফুল মোট ১ হাজার কিলোমিটার হেঁটে ২২টি জেলা অতিক্রম করেছেন। এখন তিনি ঠাকুরগাঁও জেলায় অবস্থান করছেন। এরপর আবার বেড়িয়ে পড়বেন ৬৪ জেলার উদ্দেশ্যে।
আরও পড়ুন: ক্ষুদা, দারিদ্র ও অবহেলার সাথে লড়ে শিউলি ফুটলো ডাক্তার হয়ে
সাইফুল ইসলামের জন্ম ১৯৯৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর। তার বাবার নাম সিরাজুল ইসলাম এবং মায়ের নাম করুণা বেগম। তাদের তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে সাইফুল মেজো সন্তান। তিনি ঢাকার দনিয়া কলেজ থেকে ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন।
জানা যায়, চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে হাঁটাবাবা হাঁটা শুরু করেন। মাঝে বৃষ্টির কারণে তিনি দুই দিন হাঁটতে পারেননি। জামালপুর থেকে উত্তরবঙ্গে যাবার সময় নৌকায় করে ব্রহ্মপুত্র নদ পার হয়েছেন। এছাড়া প্রায় ১ হাজার কিলোমিটারের পুরোটাই তিনি হেঁটেছেন। যেসব জেলা তিনি পায়ে হেঁটেছেন তার মধ্যে রয়েছে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, জামালপুর, শেরপুর, গাইবান্ধা, রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, পঞ্চগড় এবং ঠাকুরগাঁও জেলা।
প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৪২ কিলোমিটার হাঁটেন। কিন্তু তিনি ৮ ফেব্রুয়ারি হেঁটেছেন ৬০ কিলোমিটার। সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি সাইফুল প্রতিটি জেলার মাটি সংগ্রহ করছেন। সাইফুলের এই অ্যাডভেঞ্চারে পৃষ্ঠপোষকতা করছে ষড়জ অ্যাডভেঞ্চার। তার এই পথযাত্রা মনিটরে সহায়তা করছেন হাইকার সোসাইটি অব বাংলাদেশ। মাত্র তিন মাসে অর্থাৎ এবছরের এপ্রিলের শেষ নাগাদ তিনি ৬৪ জেলায় হাঁটা সম্পন্ন করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন সাইফুল। এ পথের মোট দূরত্ব হবে কমপক্ষে ৩ থেকে ৪ হাজার কিলোমিটার।
আরও পড়ুন: এইচএসসির ফল কবে জানালেন শিক্ষামন্ত্রী
তিনি ভোর থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাঁটেন। এ বিষয়ে হাঁটাবাবা জানান, ‘বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে পরিচিত মানুষের বাসায় থাকি। আবার কখনো ডাকবাংলো বা হোটেলে থাকি।’ সাইফুল বলেন, ‘একা একাই হাঁটি। শুরু করার সময় স্থানীয় লোকজন এগিয়ে দেন। আর দিনের গন্তব্যে পৌঁছানোর সময় স্থানীয় সাইক্লিস্ট ও রানার গ্রুপগুলোর সদস্যরা এগিয়ে আসেন।’
সচেতনতা তৈরির জন্য তিনি কিছু বিষয়ের উপর জোর দিয়েছেন। এগুলোর মধ্যে জীবন বাঁচাতে রক্তদান, প্লাস্টিক ব্যবহারে সতর্কতা এবং বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা অন্যতম। স্কুল-কলেজে গিয়ে এসব নিয়ে কথা বলার জন্য তার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে এখন স্কুল-কলেজ বন্ধ। তাই বিভিন্ন ক্লাবে বা জনসমাগমের জায়গায় গিয়ে কথা বলতে হচ্ছে। যেখানেই যাচ্ছেন, সবাই খুব আন্তরিক ব্যবহার করছেন বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, সাইফুল এর আগে ২০২০ সালের ২০ নভেম্বর ঢাকার জিরো পয়েন্ট থেকে কুমিল্লার দেবীদ্বার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার পথ হেঁটে গিয়েছিলেন। এতে তার সময় লেগেছিল ২২ ঘণ্টা। এটা বাংলাদেশে এক দিনের হাঁটার ক্ষেত্রে একটা রেকর্ড।