সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য কাজ করতে চান ডা. লামিয়া
- তানভীর আহম্মেদ, গবি
- প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২২, ০৫:১৩ PM , আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২২, ০৬:১৫ PM
ছোট বেলায় পাইলট হবার স্বপ্ন ছিল। একটু বড় হওয়ার পর মনে হতে লাগলো পৃথিবী থেকে স্বার্থপরের মতো শুধু নিয়েই যাব কিন্তু কিছু দিব না। তাই এমন কিছু করতে চাইতাম যাতে করে খুব কাছ থেকে মানুষের জন্য কিছু করা যায়। বলছি ডা. ইসরাত জাহান লামিয়ার কথা।
লামিয়া বেড়ে উঠেছেন পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায়। বাউফল আদর্শ উচ্চ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় থেকে ২০০৮ সালে এসএসসি, ২০১০ সালে বাউফল মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেছেন। তারপর ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন সাভারের গণস্বাস্থ্য সমাজ ভিত্তিক মেডিকেল কলেজে।
আরও পড়ুন: মুরগি আগে না ডিম? যুগ যুগ ধরে চলা রহস্যের সমাধান গবেষণায়
মেডিকেলে ভর্তির প্রথমদিন একজন শিক্ষক জিজ্ঞেস করেছিলেন কেন তুমি ডাক্তার হতে চাও? সবাই তো বলে মানুষের সেবা করার জন্য, এটা একটা মিথ্যা কথা আসলে সবাই টাকা ইনকামের জন্য ডাক্তার হতে চায় তাই না? সেদিন স্যার কে বলেছিলাম আমি সবসময় এমন কিছু হতে চাইতাম যাতে করে স্বাবলম্বী হবার পাশাপাশি খুব কাছ থেকে মানুষের জন্য কিছু করতে পারব। একজন স্বাবলম্বী নারী হবার স্বপ্নটা খুব ছোট বেলা থেকেই ছিল। সেই সাথে মানুষের জন্য কিছু করার স্বপ্ন আর এই দুটি থেকেই ডাক্তার হবার স্বপ্ন দেখি।
সামাজিক কাজের প্রতি প্রবল আগ্রহ থেকে মেডিকেলে ভর্তির পর সন্ধানীর মাধ্যমেই সামাজিক কাজের সাথে প্রথম যুক্ত হওয়া। যদিও অনেক আগে থেকে এরকম কাজের সাথে যুক্ত হবার ইচ্ছে ছিল কিন্তু সুযোগ হয়নি। এরপর আরও বেশ কিছু সংগঠনের সাথে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। তাদের সাথে যুক্ত হয়ে কয়েক জায়গাতে ফ্রী মেডিকেল ক্যাম্পে গিয়েছি। কাজ করতে গিয়ে দেশের বেশ কিছু জেলাতে ঘুরা হয়েছে। একদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আমাদের মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ‘অ আ ক খ’ স্কুলের পোস্ট দেখে খুব আগ্রহ হলো। তারপর একদিন একাই স্কুলে চলে গেলাম আর গিয়ে তো মুগ্ধ হয়ে যাই বাচ্চাগুলো আর স্বেচ্ছাসেবকদের কাজকর্ম দেখে।
আরও পড়ুন: মানবিক ঘর তৈরি করে মর্যাদাপূর্ণ সন পদক পেলেন বাংলাদেশি স্থপতি
খুব ইচ্ছে হলো ওদের সাথে কাজ করার। এরপর স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ডা. নাজমুল ভাইয়ার সাথে যোগাযোগ করি, তারপর থেকে প্রায়ই যেতে শুরু করি স্কুলে এভাবেই স্কুলের সাথে একটা অদ্ভুত বন্ধন তৈরী হয়। ভাইয়া খুশি হয়েই বললেন তাহলে ক্লাস নিতে এসো। তারপর থেকে সময় পেলেই চলে যেতাম ক্লাস নিতে। এভাবেই স্কুলের সাথে কাজ শুরু করা। আর এখনতো মনে হয় স্কুলটা আত্মার সাথে মিশে গেছে। কোন কারণে খুব বেশি মন খারাপ থাকলে স্কুলে গেলেই মন ভালো হয়ে যায়। স্কুলের সঙ্গে সম্পর্কটা প্রায় ৫ বছর হয়ে গেছে। লামিয়া স্কুলের পরিচালক হিসাবে দায়িত্বও পালন করছেন।
পরে ইন্টারশীপ শেষ করে গণস্বাস্থ্য সমাজ ভিত্তিক মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালের শিশু বিভাগের মেডিকেল অফিসার হিসাবে কাজ করছেন। ২০১৮ সালে প্রথমবারের মত আয়োজিত জনস্বাস্থ্য বিষয়ক ছবি প্রতিযোগিতায় দৃক গ্যালারি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ড. শহীদুল আলমের কাছ থেকে পেয়েছেন পুরস্কার।
আরও পড়ুন: বজ্রপাত থেকে বাঁচাবে স্কুল ছাত্রের তৈরি ছাতা
স্কুলের সাবেক এই পরিচালক বলেন, ‘অ আ ক খ’ স্কুলের সাভার শাখায় ৯৪ জন শিক্ষার্থী আছে। ছাত্রছাত্রীদের সমাজের আর দশটা সম্ভ্রান্ত স্কুলের মতো আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। স্কুলে সব জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস পালন, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, বার্ষিক বনভোজন ইত্যাদি উৎসবের আয়োজন করে থাকি।
কাজের উৎসাহ পেয়েছি আমার মায়ের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি। এছাড়া আমার বড় আপু এবং ছোট ভাইয়া সবসময় পাশে থাকেন। অবসরে বাসায় ফিরে যতটুকু সময় পাই পড়াশুনা করার চেষ্টা করি। তাছাড়া আম্মুর সাথে গল্প, টিভি দেখে, কিছু গাছ আছে সেগুলো পরিচর্যা করি। শিক্ষা আর অর্থনৈতিক মুক্তিই নারীদেরকে এগিয়ে নিতে পারে বলে মনে করেন তিনি। লামিয়া স্বপ্ন দেখেন সুবিধাবঞ্চিত এই বাচ্চাগুলো যেন সমাজের সচেতন আর স্বাবলম্বী নাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে একদিন। তবেই দেশ এগিয়ে যাবে অনেক দূর।