ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতায় এশিয়ায় প্রথম ইউআইইউ

ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতায় এশিয়ায় প্রথম ইউআইইউ
ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জ প্রতিযোগিতায় এশিয়ায় প্রথম ইউআইইউ  © টিডিসি ফটো

ইউনিভার্সিটি রোভার চ্যালেঞ্জ (ইউআরসি) ২০২৩-এ এশিয়ার সবগুলো দলকে হারিয়ে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মার্স রোভার টিম। মার্স রোভার টিম দ্বারা নির্মিত ইউআইইউর এ দলের নাম রাখা হয়েছে টেলস। বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক আকিব জামান এই টিমের নেতৃত্বে দিচ্ছেন।

জানা যায়, ইউআরসি নামের এ প্রতিযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণের সুযোগ পান। এই বছর, ১৫টি বিভিন্ন দেশের ১০৪টি দল আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। যার চূড়ান্ত পর্বটি ১ থেকে ৩ জুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উটাহের হ্যাঙ্কসভিলে মার্স ডেজার্ট রিসার্চ স্টেশনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখান সবাইকে হারিয়ে প্রথম হয়েছেন ইউআইইউর মার্স রোভার টিম।

পরপর দ্বিতীয়বারের মতো প্রথম হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেছে ইউআইইউ। বিশ্ববিদ্যালয়টির তৈরিকৃত মেভেন (Maven) মঙ্গলযান ও ইউআরসি (URC) গেল বছরও এশিয়ান দেশগুলোর মধ্যে প্রথমস্থান অর্জন করেছিল।

মহাকাশবিজ্ঞানীদের একটি অংশ মনে করেন, ভবিষ্যতে মঙ্গল গ্রহের বুকে গড়ে উঠবে মানববসতি। দিন-রাত কাজ করে চলেছেন নানা দেশের বড় বড় বিজ্ঞানী। তবে এই লক্ষ্য অর্জন করতে চাই অত্যাধুনিক সরঞ্জাম। চাই এমন সব আধুনিক রোভার, যেগুলো মঙ্গলপৃষ্ঠে মানুষের বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ যাচাই করবে। এরকম রোভার তৈরির চ্যালেঞ্জ নিয়েই একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্রের দি মার্স সোসাইটি।

যেভাবে হয় এ প্রতিযোগিতা
প্রাথমিক রাউন্ডে দলটিকে একটি সিস্টেম অ্যাকসেপ্টেন্স রিভিউ (এসএআর) ভিডিও জমা দিতে হয়েছিল। যা বিভিন্ন মিশন যেমন বিজ্ঞান অনুসন্ধান (Science Mission), স্বায়ত্তশাসিত নেভিগেশন (Autonomous navigation), এক্সট্রিম ডেলিভারি (Extreme delivery) এবং সরঞ্জাম পরিষেবা (Equipment servicing) সম্পাদনে রোভারের সক্ষমতা তুলে ধরে।

টেলস সম্ভাব্য জীবনের লক্ষণ শনাক্ত করতে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা পরিচালনা, মাটি এবং শিলা নমুনা বিশ্লেষণে তার দক্ষতা প্রদর্শন করেছে। এসএআর ভিডিওটি টেলস-এর মূল ইলেকট্রনিক এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা, সেসঙ্গে পরীক্ষা এবং অপারেশনে এর দৃঢ়তাকে সূক্ষ্মভাবে উপস্থাপন করেছে।

আরও পড়ুন: ডাকসুর উদ্যোগে ঢাবিতে শহীদ স্মৃতি ভলিবল প্রতিযোগিতা

টেলস চূড়ান্ত রাউন্ডে পৌঁছানোর আগে বিশ্বব্যাপী অসংখ্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কঠোর প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হয়েছিল। বাংলাদেশের প্রতিপক্ষদের ছাড়িয়ে, টেলস ১০০-এর মধ্যে ৯৩.০৬-এর একটি অসাধারণ এসএআর স্কোর অর্জন করেছে। যা সারা বিশ্ব থেকে ৩৭ ফাইনালিস্টের মধ্যে তাদের অবস্থান নিশ্চিত করেছে।

ফাইনাল রাউন্ডে, অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে একজন বিশেষজ্ঞ বিচারকদের সামনে চারটি চ্যালেঞ্জিং মিশনের মাধ্যমে তাদের দক্ষতা প্রদর্শন করতে হবে। এই মিশনে বিজ্ঞান অনুসন্ধান (Science Mission), স্বায়ত্তশাসিত নেভিগেশন (Autonomous navigation), এক্সট্রিম ডেলিভারি(Extreme delivery) এবং সরঞ্জাম পরিষেবা (Equipment servicing) অন্তর্ভুক্ত ছিল।

ইউআইইউ মার্স রোভার দল ৩৭ ফাইনালিস্টের মধ্যে তাদের অবস্থান দখল করেছে। তাদের রোভার ব্যবহার করে মঙ্গলগ্রহের অনুকরণে তৈরি পরিবেশে ৩ দিনের প্রদর্শনের পর ইউআইইউ দল বিশ্বব্যাপী ৯ম স্থান অর্জন করেছে। এছাড়া সমগ্র এশিয়াতে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। দলটি প্রতিযোগিতার ‘এক্সট্রিম ডেলিভারি’ বিভাগে বিশ্বব্যাপী ২য় স্থান অধিকার করেছে, যেখানে পশ্চিম ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ১ম স্থান অধিকার করেছে।

ইউআইইউ মার্স রোভার দলে কম্পিউটার বিজ্ঞান, বৈদ্যুতিক বিজ্ঞান এবং ব্যবসাসহ বিভিন্ন শাখার ২৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। রোভার ডিজাইনিংয়ের বিভিন্ন ক্ষেত্র সম্পর্কিত ছয়টি সাব-টিমে বিভক্ত দলের সদস্যদের রোবোটিক্স এবং অটোমেশনের পাশাপাশি থ্রিডি সিমুলেশন, মহাকাশে জীবন শনাক্তকরণ, ড্রোন এবং স্বায়ত্তশাসিত নেভিগেশনের মতো ক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা রয়েছে।

ইউআইইউ কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক আকিব জামান বলেন, এই কৃতিত্বটি দলের জন্য অত্যন্ত গর্বের উৎস। কারণ এটি তাদের বিশ্বমঞ্চে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ক্ষমতা প্রদর্শন করেছে। শিক্ষার্থীদের এমন অর্জন ভবিষ্যত প্রজন্মকে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিতে ক্যারিয়ার গড়তে অনুপ্রাণিত করবে। তাদের মধ্যে এই বিশ্বাস জাগিয়ে তুলবে যে তারা নিষ্ঠা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে মহান জিনিস অর্জন করতে পারে।


সর্বশেষ সংবাদ