বিবাহিত-অছাত্র-শিবির দিয়ে ছাত্রদলের কমিটি, ক্ষোভে একজনের পদত্যাগ

মেহেদী হাসান রুয়েল, সাজ্জাদ হোসাইন চৌধুরী, সাঈদুর রহমান সাঈদ, বদিউজ্জামাল বিপ্লব (বাঁ থেকে)
মেহেদী হাসান রুয়েল, সাজ্জাদ হোসাইন চৌধুরী, সাঈদুর রহমান সাঈদ, বদিউজ্জামাল বিপ্লব (বাঁ থেকে)  © টিডিসি ফটো

ঢাকা মহানগর উত্তর, ঢাকা মহানগর পশ্চিম, ঢাকা কলেজ, সরকারী তিতুমীর কলেজ, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কবি নজরুল সরকারী কলেজ, সরকারী বাংলা কলেজ ও তেঁজগাও কলেজ ছাত্রদলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।

সবকটি ইউনিট নিয়ে অভিযোগ না থাকলে মহানগর উত্তর-পশ্চিম, ঢাকা কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের কমিটি নিয়ে বেশকিছু অভিযোগ ওঠেছে। এছাড়া ঘোষিত কমিটিতে অঞ্চলের আধিপত্য নিয়েও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। তবে সংগঠনটির প্রায় সবাই তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

অভিযোগ রয়েছে, ঢাকা মহানগর পশ্চিম ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল হাসান রাজ প্রায় এক যুগ আগে ২০১২ সালের ১০ নভেম্বর তানিয়া আক্তারকে নাম একজনকে বিয়ে করেছেন। স্ত্রী তানিয়াও পরিচয়পত্রসহ সব কিছুতে জুয়েলের নাম ব্যবহার করেন। জুয়েলের সাথে তানিয়ার বেশ কিছু একান্ত ছবিও রয়েছে।

একই অভিযোগ ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের সভাপতি মেহিদী হাসান রুয়েলের বিরুদ্ধে। তিনি ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক শরীফ উদ্দিন জুয়েলের খালাতো বোনকে বিয়ে করেছেন। তাদের দুজনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তথ্য বলছে, তাদের এ প্রেমের সম্পর্কের বিয়ে পরিবার এখনো মেনে নেয়নি। অভিযোগের বিষয়ে জানতে রুয়েলের সঙ্গে একাধিকার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। তবে তার মুঠোফোনের সংযোগ পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন: ছাত্রদলে নিয়মিত শিক্ষার্থী নেই একজনও

অছাত্র দিয়েও এ কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। খোদ সুপারফাইভের নেতৃত্বে কলেজের ছাত্র নয় এমন একজনকে ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক পদে পদায়ন করা হয়েছে। তার নাম সাজ্জাদ হোসাইন চৌধুরী। তিনি কলেজের ৯-১০ সেশনের বাংলা ডিপার্টমেন্টের ছাত্র দাবি করলেও ঢাকা কলেজে তার ছাত্রত্ব নেই বলেই অভিযোগ। এ বিষয়ে জানতে সাজ্জাদ হোসাইন চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

এদিকে, কলেজ শাখা ছাত্রদলের শীর্ষ পদে বহিরাগতসহ অন্যান্য অনিয়মের অভিযোগ তুলে ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মেসকাত হোসেন তনয় পদত্যাগ করেছেন। কমিটি ঘোষণার পর গত ১২ মে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক বরাবরে পদত্যাগ পত্র পাঠান মেসকাত।

ছাত্রদলের ঘোষিত কমিটিতে সরকারি তিতুমীর কলেজ শাখার সিনিয়র সহ সভাপতির পদ পেয়েছেন মাহাফুজুর রহমান লিপকন। কমিটি ঘোষণার দিন লিপকন সংগঠনের জন্য তাদের ত্যাগের বিচারে সংগঠন তাদের বিরুদ্ধে অবিচার করেছে অভিযোগ করে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষোভ করেছেন। তিনি কলেজ শাখার সভাপতি প্রার্থী ছিলেন।

লিপকন বলেন, ‘‘নতুন কমিটিতে যাকে সভাপতি করা হয়েছে সে রাজনৈতিকভাবে কমপক্ষে আমার ১০ বছরের জুনিয়র। এছাড়া সংগঠনের প্রতি আমাদের যে ত্যাগ ছিল- সবকিছু ভুলে গিয়ে এ কমিটি হয়েছে। এভাবে অভিযোগ ওঠা প্রত্যেক ইউনিটের নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। ত্যাগীদের জায়গা না দিয়ে বিতর্কিতদের দিয়ে এ কমিটি করা হয়েছে।’’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংগঠনটির ঢাকা মহানগরীর এক নেতা অভিযোগ করে বলেন, ঘোষিত কমিটিতে এভাবে ত্যাগীদের বঞ্চিত করে বিতর্কিতদের পদায়ন করা হলে তাদের হাতে সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে। নবগঠিত কমিটির মধ্যে বিবাহিত, অছাত্র ও মাদক সংশ্লিষ্টদের সামনে নিয়ে আসা হয়েছে। এতে আঞ্চলিকতার প্রধান্যও দেখা গেছে। সংগঠনের দুঃসময়ে বিতর্কিতদের নিয়ে এরকম একটি কমিটি আমরা চাইনি।

আরও পড়ুন: সাবেক ছাত্রনেতাদের কদর বাড়ছে বিএনপিতে

এছাড়া ছাত্রদলের নব গঠিত কমিটিতে ছাত্র শিবিরের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে কবি নজরুল সরকারী কলেজ শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সাঈদুর রহমান সাঈদের বিরুদ্ধে। তিনি নিয়মিত সংগঠনটিতে মাসিক চাদা দিয়ে আসছিলেন। এছাড়া ছাত্র শিবিরের কাছে তার বায়োডাটাও জমা রয়েছে।

তবে সাঈদুর রহমানও তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, তিনি তার বাল্যকাল থেকেই জামায়াতের রাজনীতি অপছন্দ করতেন। সেখানে তার বিরুদ্ধে ওঠা শিবির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অমূলক। সাঈদ বলেন, একটি মহল নিজেদের অযোগ্যতা ঢাকতে অন্যদের উপর প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে এ ধরনের ভিত্তিহীন অভিযোগ করে থাকেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় ছাত্রদল আমার উপর আস্থা রেখেছে, কবি নজরুল কলেজের হয়ে আমি সে আস্থার প্রতিদান দিতে চাই।

ঢাকা মহানগর পশ্চিম ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল হাসান রাজও তার বিরুদ্ধে ওঠা বিয়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ অভিযোগ উঠামাত্রই সংগঠন আমাকে নিয়ে তদন্ত করেছে। এ বিষয়ে তারা কোনো সত্যতাও পায়নি। সংগঠনের একটি অংশ আমাকে নিয়ে নোংরা অভিযোগ করেছেন। মূলত তারা রাজনৈতিকভাবে আমাকের প্রতিহত করতে না পেরে এ পথ বেছে নিয়েছেন। কেন্দ্র আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে, আমি যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করে যাবো।

কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল শ্রাবণ বলেন, কমিটি গঠন হলে সন্তোষ-অসন্তোষের বিষয় থাকবেই। তবে দীর্ঘ সময়ের পর এ কমিটি গঠন হলে ক্ষুদ্র অংশে অসন্তোষ থাকলেও বৃহৎ অংশেই সন্তোষ দেখা গেছে। কমিটিতে যারা যোগ্য তারাই পদ পেয়েছেন। এছাড়া অঞ্চলভিত্তিক অভিযোগেরও কোনো ভিত্তি নেই। বিবাহিতের গুজবও আমরা শুনেছি, তবে এর কোনো সত্যতা পাইনি। এরপরও আমরা খোঁজ নিচ্ছি, কোন অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এর আগে, গত মঙ্গলবার (১০ মে) ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল এসব ইউনিটে আংশিক কমিটির অনুমোদন দেন।

এদিকে, আংশিক কমিটির পর গতকাল বুধবার (১৮ মে) বদিউজ্জামান বিপ্লব ও সহ দপ্তর সম্পাদক হিসেবে ইকবাল হোসেন সোহেলকে ঢাকা মহানগর পশ্চিম ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। নতুন এ দায়িত্ব নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। এতে দপ্তর সম্পাদক পদে দায়িত্ব পাওয়া বিপ্লবের একাধিক ছেলে-মেয়ে রয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত থাকারও অভিযোগ রয়েছে।

আরও পড়ুন: বিএনপিতে পদ পেলেন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি-সম্পাদক

বিবাহিত-অছাত্র ছাড়াও ছাত্রদলের এ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে দেখা গেছে আঞ্চলিকতার প্রধান্য। কমিটি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আটটি ইউনিটের সভাপতি-সেক্রেটারির ১৬ পদে ১১ জনই বরিশাল অঞ্চলের। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, দীর্ঘ প্রায় পাঁচ-ছয় বছর এসব ইউনিটে কমিটি হয়নি। যার কারণে নেতৃত্বের ধারাবাহিকতায় একটি বড় ধাক্কা লেগেছে। যারা মাঠের রাজনীতি থেকে দূরে সরে যায়নি, খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে রাজপথে ছিল, দলীয় ও সাংগঠনিক সকল কাজে এবং দুঃসময়ে দলীয় রাজনীতি আঁকড়ে ধরেছে এমন কেউ কমিটি থেকে বাদ পড়েনি। যারা নেতৃত্বের যোগ্য তারাই পদ পেয়েছেন।

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ইউনিটগুলোর কমিটি ঘোষণার আগে দায়িত্বে আসা সম্ভাব্য ব্যক্তিদের সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়। তারা নির্দিষ্ট ব্যক্তি সম্পর্কে বিশ্লেষণ করে থাকেন। যদি নির্দিষ্ট ব্যক্তি বিতর্কিত হয়ে থাকেন তাহলে সংশ্লিষ্টদের মতামত জানানোর সুযোগ থাকে। কিন্তু একটি কমিটি ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পর এভাবে তাদের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে অভিযোগ তোলা কোনভাবে কাম্য নয়।

সাইফ মাহমুদ আরও বলেন, যার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে প্রায় সবগুলো অভিযোগ আমরা খতিয়ে দেখেছি। এসবের কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। সংগঠনের স্বার্থে এরপরেও যদি কারো কোন অভিযোগ থেকে থাকে তাহলে কেন্দ্রীয় দপ্তর তাদের জন্য খোলা, তারা তাদের সব অভিযোগ নিয়ে এসে এখানে জমা দিতে পারেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনকে আরও বেগবান করতে দেশ নায়ক তারেক রহমানের নির্দেশে জাতীয়তাদী ছাত্রদল কাজ করে যাচ্ছে।


সর্বশেষ সংবাদ