আসিফ নজরুলকে গণধোলাইয়ের হুমকি ছাত্রলীগ সভাপতি জয়ের

আসিফ নজরুল ও জয়
আসিফ নজরুল ও জয়  © ফাইল ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুলের দেওয়া একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে তাকে গণধোলাইয়ের হুমকি দিয়েছেন তার একই বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়।

বুধবার (১৮ আগস্ট) দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সিরিজ বোমা হামলা দিবস উপলক্ষে কালো পতাকা মিছিল ও একমিনিট নীরবতা পালন অনুষ্ঠানে শেষে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে একথা বলেন তিনি।

আসিফ নজরুলকে উদ্দেশ্য করে জয় বলেন, আপনি সস্তা জনপ্রিয়তা কুঁড়াতে চান। বাসায় বসে সস্তা জনপ্রিয়তা কুঁড়ানো যায় না। আর একটি মাঠে এসে ২০ জনের সমাবেশে এসে বক্তৃতা দিয়ে চলে গেলে হয় না। ঢাবির আইন বিভাগ জাতির পিতার। এটা তার নিজের প্রতিষ্ঠান। সেই প্রতিষ্ঠানে বসে আপনি গাংটু-পাংটু করবেন। আমার এমনিতেই জানি আপনার একাধিক বিয়ে করছেন।

বরিশালের ছেলে জয় উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ছাত্রলীগের উপ-আইন বিষয়ক সম্পাদক দিয়ে ঢাবিতে ছাত্রলীগের রাজনীতির হাতেখড়ি। এরপর পরবর্তীতে ওই হলের সাধারণ সম্পাদকেরও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সর্বশেষ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ১ নম্বর সহ-সভাপতি ছিলেন জয়।

আসিফ নজরুলকে উদ্দেশ্য করে জয় আরও বলেন, আপনার যদি পাকিস্তানে যাওয়ার ইচ্ছে থাকে তাহলে পাসপোর্ট করে পাকিস্তানে চলে যান। বাংলাদেশে থেকে কোন ধরণের ষড়যন্ত্র করার কোন সুযোগ অন্তত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দেবে না। 

“বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ শেষ করে যাওয়ার জন্য দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই উন্নয়নের মহাসড়কের আপনি শান্তিপ্রিয় মানুষের পাশে না থেকে আপনি কি করলেন, ওই জঙ্গি, ওই নুরুদের, শিবিরদের পাশে থাকলেন, নাম সর্বস্ব সংগঠনে ২০ জনও আসেনা তাদের কর্মসূচিতে। 

জয় আরও বলেন, আমরা আবারও বলছি ৫০ লাখ নেতাকর্মী সংগঠন ছাত্রলীগ। আপনাকে যদি একটা ধাওয়া দিই তাহলে পাকিস্তানেও যাওয়ার সুযোগ পাবেন না। ছাত্রলীগ যেকোন ক্রান্তিলগ্নে সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে কাজ করবে। 

এসময় আসিফ নজরুলকে উদ্দেশ্য করে জয় বলেন, ষড়যন্ত্রকারীদের আবারও হুশিয়ারি করে বলতে চাই, গণধোলাই দিয়ে আপনাদের পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেবো।

জয় আরও বলেন, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট বিএনপির শাসনামলে জেএমবি জঙ্গি গোষ্ঠী সারাদেশে একযোগে হামলা চালিয়েছিল। সেই সিরিজ বোমা হামলার প্রতিবাদে কালো পতাকা মিছিলের একটাই উদ্দেশ্য, মৌলবাদকে ধিক্কার জানানো। এরা বাংলাদেশের কেউ নয়। এরা পাকিস্তানি, তালেবানের বন্ধু। আগস্ট মাস সারা বিশ্বে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়।’

সমাবেশে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ১৯৭৫ সালের পর থেকে আমরা দেখেছি এই আগস্ট মাস আসলেই স্বাধীনতা বিরোধী, রাষ্ট্রদ্রোহী ও বিদেশি এজেন্টদের তৎপরতা অনেকাংশে বেড়ে যায়। 

“২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারাদেশে একযোগে সিরিজ বোমা হামলার সঙ্গে জড়িতদের নির্মূল করার জন্য তৎকালীন প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। তৎকালীন প্রশাসন বাংলা ভাইকে মিডিয়ার সৃষ্টি বলে হাস্যরস করেছিল। শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশের মাটি থেকে জঙ্গি গোষ্ঠীর মূলোৎপাটন সম্ভব হয়েছিল।”

প্রসঙ্গত, গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে আসিফ নজরুল তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাস দেন। এতে তিনি লেখেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলে কাবুল বিমানবন্দর ধরনের দৃশ্য বাংলাদেশেও হতে পারে।’

তার স্ট্যাটাসটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। অনেকে তার এই বক্তব্যকে রাষ্ট্রবিরোধী হিসেবেও আখ্যা দিয়েছেন। আবার কেউ বলছেন, এ ধরনের স্ট্যাটাস দিয়ে জঙ্গিবাদকে উসকে দিচ্ছেন আসিফ নজরুল।