মানববন্ধনে ছাত্রদল কর্মীর আক্রমণাত্মক আচরণ, জবির ১৪ সংগঠনের উদ্বেগ
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫:৪০ PM , আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:০০ PM
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ক্যাম্পাসে ‘হিউম্যান রাইটস সোসাইটির’ শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনে শাখা ছাত্রদল কর্মী অনিক কুমার দাসের আক্রমণাত্মক আচরণের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মিডিয়া কর্মীরা। আজ বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) উদ্বেগ প্রকাশ করে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। বিবৃতিতে ১৪ সংগঠনের ২৭ জন সামাজিক-সাংস্কৃতিক-মিডিয়াকর্মী স্বাক্ষর করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জবি হিউম্যান রাইটস সোসাইটির সেক্রেটারি জুনায়েদ মাসুদ।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মিডিয়া অঙ্গনের কর্মীরা, সম্প্রতি ক্যাম্পাসের ভাস্কর্য চত্বরে হিউম্যান রাইটস সোসাইটির শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন চলাকালীন শাখা ছাত্রদলের কর্মী অনিক কুমার দাস (মার্কেটিং, সেশন: ২০২১-২২) কর্তৃক সৃষ্ট বিশৃঙ্খলা ও আক্রমণাত্মক আচরণের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করছি।’
আরও বলা হয়, ‘ঐতিহাসিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জুলাই বিপ্লব পরবর্তী সময়ে এমন ঘটনা ক্যাম্পাসে সংগঠনগুলোর স্বাধীন কার্যক্রম পরিচালনা এবং মতামত প্রকাশের অধিকারের প্রতি গুরুতর হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও মতপ্রকাশের অধিকার যেকোনো সমাজের প্রগতির মৌলিক শর্ত।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এ অধিকারসমূহ বাংলাদেশের সংবিধান এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত। মানববন্ধনে বাধা প্রদান কেবল মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের শামিল নয়, এটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী। এছাড়াও এটি সংগঠনগুলোকে স্বাধীন কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে চিন্তিত করে তোলে।’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি বলা হয়, ‘প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মতপ্রকাশ এবং সমাবেশের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি ক্যাম্পাসে একটি সহনশীল, মুক্ত ও অহিংস পরিবেশ বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা এমন এক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখতে চাই, যেখানে ভিন্নমত প্রকাশ দমন বা হয়রানির শিকার হবে না এবং যেখানে উন্মুক্ত আলোচনার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ লালন করা হবে।’
বিবৃতি আরও বলা হয়, ‘সামাজিক ন্যায়বিচার, সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি এবং তথ্যের অবাধ প্রবাহ গুরুত্বপূর্ণ বলে আমরা বিশ্বাস করি। তাই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা জাতির টেকসই উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি আমরা সহনশীলতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার সংস্কৃতি গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।’
উল্লেখ্য, গত বুধবার (১ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআর ভবনে এক শিক্ষার্থীকে মারধর করেন শাখা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। এছাড়াও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক নারী শিক্ষককে হিজাব নিয়ে কটূক্তি করেন শাখা ছাত্রদলের এক নেতা। এ দুই ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) মানববন্ধনের আয়োজন করে জবিস্থ হিউম্যান রাইট সোসাইটি।
শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন চলাকালে ছাত্রদল নেতা অনিক আচমকা মানববন্ধনকারীদের সামনে এসে ব্যঙ্গাত্মক সুরে স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে আক্রমণাত্মক আচরণ ও অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন ও ভীতি সঞ্চারের মাধ্যমে মানববন্ধন পণ্ড করার চেষ্টা করেন তিনি।