বেরোবিতে হামলায় জড়িতদের মিলছে না কোন হদিস

আন্দোলনে হামলাকারী
আন্দোলনে হামলাকারী  © টিডিসি

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িতদের মিলছে না খোঁজ। কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন প্রথম শহিদ বেরোবির শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা হামলাকারীদের খোজ করলেও পাচ্ছে না তাদের কোন হদিস।

অভিযোগ উঠেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলার উদ্দেশে ছাত্রলীগের ক্যাডার বাহিনী দেশীয় অস্ত্র হাতে ক্যাম্পাসে অবস্থান করেন এবং বহিরাগতদের অনুপ্রবেশে সাহায্য করেন ছাত্রলীগ। ছাত্রদের আন্দোলনকে দমাতে হেলমেট পরিধান করে অবস্থান করেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক সহ কর্মকর্তা, কর্মচারী, ছাত্রলীগ নেতারা।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর হামলাকারীদের দেখা না পাওয়া গেলেও শিক্ষার্থীদের হামলার ভিডিও ফুটেজ ঘুরপাক করছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

হামলার এসব ভিডিও ফুটেজে ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস, প্রথম গেট (আবু সাঈদ গেট),পার্কের মোড়, শহিদ আবু সাঈদ চত্বর মহাসড়কসহ বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রলীগ নেতাদের দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিতে দেখা গেছে। আবু সাঈদ হত্যা মামলা আসামি দুই শিক্ষক এই ছাত্রলীগ এবং গুন্ডা বাহিনীর দিকনির্দেশক হিসাবে হেলমেট পরিধান করে অবস্থান করতে দেখা যায়।

আরও পড়ুন: গণঅভ্যুত্থানে নিহত ৮৭৫, সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী

হামলায় দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মশিয়ার রহমান(মশিউর) এবং লোক প্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদ। এছাড়া শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থানরত কর্মকর্তা মো. রাফিউল হাসান (রাসেল), নিরাপত্তা কর্মকর্তা জনি, নুর নাবী, মনিরুজ্জামান, পলাশ মিয়া, আবুল কালাম আজাদ এবং কর্মচারী নূর আলম, মুক্তার ও আমির হোসেনকে।

অস্ত্রধারীর মধ্যে রয়েছেন বেরোবি ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান শামীম, দপ্তর সম্পাদক বাবুল হোসেন, সহসভাপতি বিধান বর্মন, মো. রেজওয়ান-উল-আনাম তন্ময়, মো. তানভীর আহমেদ, মো. শাহীন আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সাকিব-আল-হাসান, ধনঞ্জয় কুমার দাস টগর, মো. সেজান আহমেদ (আরিফ), মৃত্যুঞ্জয় রায়, সুদীপ্ত সরকার বাধন, মেহেদী হাসান মিরাজ, মেজবাউল সরকার জয়, ইমরান চৌধুরী আকাশ, কফি আনান মান্নান,মুসান্নাবিন আহম্মেদ নাবিল, আবু সালেহ নাহিদ, মাসুদুল হাসান, হাবিবুর রহমান, জামাল, এস এম লাবু ইসলাম, সেজান আহমেদ (ওরফে আরিফ),সাব্বির ( ইংরেজি ১২ ব্যাচ),গ্লেসিয়ার রাব্বি (ভূগোল  ৯ম ব্যাচ),মুসান্নাবিন আহম্মেদ নাবিল,( ইইই -১১ ব্যাচ),সেজান আহমেদ ( ওরফে আরিফ)( MGT-13),আবির(GES -14),হৃদয় ( ইংলিশ ১৪ ব্যাচ),নাহিদ (পরিসংখ্যান ১২ তম ব্যাচ),মোশারফ (সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ),জামাল (রাষ্ট্রবিজ্ঞান ১৫),এস এম লাবু ইসলাম-(রাষ্ট্রবিজ্ঞান),মেহেদী হাসান মিরাজ (ইতিহাস ১৩ ব্যাচ) ,মেজবাউল সরকার জয় (ইতিহাস ১১ ব্যাচ),ইমরান চৌধুরী আকাশ (ইতিহাস ১১ ব্যাচ),শাহিন(রাষ্ট্রবিজ্ঞান ১১ ব্যাচ) ,মাসুদুল হাসান (রাষ্ট্রবিজ্ঞান ১১তম) ,শাহিন ইসলাম( রাষ্ট্রবিজ্ঞান ১১),উজ্জ্বল মিয়া ( ইংরেজি -১১) ,হাবিবুর রহমান ( একাউন্টটিং ১২),তৌফিক (ইতিহাস-১২),শাখাওয়াত হোসেন (মার্কেটিং ১২ ব্যাচ), শোয়াইবুল (সাল্লু) (লোক প্রশাসন ১৩ তম ব্যাচ) ,ফিলিপ রায় (বাংলা ১৩ তম ব্যাচ),মোজ্জামেল ( MIS 13) ,মাহমুদ (পদার্থ ১২ ব্যাচ) ,সম্রাট ( বাংলা ১৪ ব্যাচ), দেবাশীষ (ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং ১৩),আব্দুল্লাহ আল রায়হান ( ম্যাথ ১২) ,বায়জিদ মোস্তাফি ( ম্যাথ ১৩) আতিফ আসাব দিপ্র মন্ডল(গণিত ১৪তম ব্যাচ), আব্দুল্লাহ আল নোমান খান (রাষ্ট্রবিজ্ঞান১১), রিফাত ,রাসেল (পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ১৩ ব্যাচ),সিয়াম আল নাহিদ ( ইইই ১১) ,ফারহাদ হোসেন এলিট ( রাষ্ট্রবিজ্ঞান),সিয়াম আরাফাত ( লোকপ্রশান ১২ তম ব্যাচ),মোমিনুল (জেন্ডার ৮ম ব্যাচ), তানজিল ( পদার্থ বিজ্ঞান ১৩),অমিত ( লোক প্রশাসন ১৩), আরিফুজ্জামান ইমন (লোক প্রশাসন ৮)কোমল দেব নাথ (লোক প্রশাসন ১৫)এবং গালিব হাসান(মার্কেটিং ১৫ তম ব্যাচ)।

আরও পড়ুন: গণঅভ্যুত্থানে নিহত বেশি ঢাকায়

এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী  আশিকুর রহমান বলেন, ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার সাথে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত ছাত্রলীগ, শিক্ষক, কর্মকতা, কর্মচারীরা গা ঢাকা দিয়েছেন। দেশের ক্রান্তিকালে যারা ছাত্রদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে নিয়ে দাঁড়াতে পারে তারা কারো শুভাকাঙ্ক্ষী হতে পারে না। আমরা চাই দ্রুত এসব হামলাকারীদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক এবং অপরাধের ধরণ অনুযায়ী এদেরকে বহিষ্কার করা হোক।

শিক্ষার্থী আলভীর বলেন, ‘যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের নায্য দাবিতে অস্ত নিয়ে হামলা করেছে। সে যেই হোক না কেন ছাত্রলীগ, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী তাদের প্রত্যেককেই আমরা খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করতে চাই। বেরোবি ছাত্রলীগ ও মহানগর ছাত্রলীগ মরণঘাতী অস্ত্র নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীর ওপর হামলা করেছে। আমরা ভিডিওতে কিন্তু দেখতে পেরেছি, প্রক্টরিয়াল বডির একজন বার বার পুলিশকে বলছে শিক্ষার্থীর ওপর গুলি চালাতে। আসাদ স্যার, মশিউর স্যার তারা মাথায় হেলমেট পরে, হাতে অস্ত্র নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীর ওপর হামলা করতে এসেছে। যারা প্রত্যক্ষভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীর ওপর হামলার জন্য ইন্ধন দিয়েছে আমরা তাদের বিচার চাই। এ ছাড়া কর্মকর্তা ও কর্মচারী যারা জড়িত আছে তাদের বিচার চাই।’

ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী মহসিনা তাবাসসুম বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নামের শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষক স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের বাস্তবায়ন করার জন্য মাঠে নেমেছিল তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, ছাত্রত্ব বাতিল ও নিয়োগ বাতিল করার দাবি জানাচ্ছি।’

আরও পড়ুন: আন্দোলনে ২ পিস্তল হাতে গুলি চালানো সেই ব্যক্তি গ্রেপ্তার

আসিফ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, অবাক করা বিষয় হল আবু সাঈদ হত্যার দিনে পুলিশ ক্যাম্পাসের ভেতরে  আর শিক্ষার্থীরা বাইরে অবস্থান করেছিল। কিন্তু হওয়ার কথা ছিল এর উল্টো। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হাসিবুর রশিদ ,প্রক্টর শরিফুল ইসলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো শুধু পদত্যাগ করেই তারা পার পেয়ে গেছেন। এ পর্যন্তও তাদের নামে কোন মামলার কথা শুনা যায়নি। আর সেদিন কিছু শিক্ষক তো ডরমেটরির ছাদ থেকে নাটক দেখছিল । তখন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করলেও দেশ স্বাধীনের পর তাদের কথায় যেন বিদ্রোহের বান ফুটেছে। এই বিষয়ে দুই শিক্ষককে একাধিক বার কল দেওয়া হলেও ফোন কলে তাদের পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে সদ্য পদত্যাগকারী সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম বলেন, আমি সেদিন ক্যাম্পাসে ছিলাম। কিন্তু এই মুহূর্তে আমি কথা বলতে চাচ্ছি না।


সর্বশেষ সংবাদ