শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি পোশাক খাতের তরুণ উদ্যোক্তাদের
দেশের তৈরি পোশাকশিল্পের ৪৭ তরুণ উদ্যোক্তা ‘বাংলাদেশের জনগণের’ ৯ দফা দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন। শনিবার (৩ আগস্ট) এক বিবৃতিতে সংহতি জানিয়ে তাঁরা বলেছেন, ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সদস্য হিসেবে আমরা নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে এটা দেখতে পারি না যে নিরপরাধ জীবনের ক্ষতি হচ্ছে ও মানুষের দাবি শোনা হচ্ছে না।
দেশের সব নাগরিকের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করছি জানিয়ে তরুণ উদ্যোক্তারা বিবৃতিতে বলেন, একটি স্বাধীন জাতির গর্বিত সদস্য হিসেবে আমরা মনে করি যে সবারই নিজস্ব অধিকার শান্তিপূর্ণভাবে প্রয়োগ করতে পারা উচিত। যাঁরা সাম্প্রতিক ঘটনাবলির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের প্রতি আমরা গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আমরা দেখতে চাই, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দায়ী ব্যক্তিদেরকে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে।
বিবৃতিতে জানানো হয়, যাঁরা জীবন হারিয়েছেন এবং যাঁরা হয়রানির মুখোমুখি হয়েছেন, তাঁদের প্রতি আমাদের গভীর দুঃখ ও সমবেদনা রয়েছে। সব জীবনই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং এই দেশ ও জনগণের স্বার্থ রক্ষায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড দ্রুততার সঙ্গে স্বাভাবিক করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। একই সাথে তরুণ এই উদ্যোক্তারা দেশের বৃহত্তর স্বার্থে বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আরও পড়ুন: আনুষ্ঠানিকভাবে এক দফা দাবি ঘোষণা
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেন—১. ফজলে শামীম এহসান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এরাফ কম্পোজিট লিমিটেড ২. শামস মাহমুদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সাশা ডেনিমস লিমিটেড ৩. আবরার হোসেন সায়েম, পরিচালক, সায়েম ফ্যাশনস ৪. আল শাহরিয়ার আহমেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আডজি ট্রিমস লিমিটেড ৫. হাসিন আহমেদ, পরিচালক, এমবি নিট ৬. রাফী মাহমুদ, পরিচালক, মাহমুদ ডেনিমস ৭. সাকিব আহমেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ব্রডওয়ে ইনকরপোরেশন ৮. আবরার আলম খান, পরিচালক, অ্যাস্ট্রোটেক্স গ্রুপ ৯. এম এহসানুল হক, পরিচালক, নিটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ১০. জসিম উদ্দিন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আনাম গার্মেন্টস লিমিটেড।
১১. লিথি মুনতাহা মহিউদ্দিন, পরিচালক, লিথি গ্রুপ ১২. জারীন রশিদ, পরিচালক, টিআরজেড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ১৩. কাজী ফাহাদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কাজী অ্যাকসেসরিজ ১৪. আকিব জাফরী শরীফ, পরিচালক, নর্দান তসরিফা গ্রুপ ১৫. রামিজে খালিদ ইসলাম, পরিচালক, রেনাই গ্রুপ ১৬. আজফার অঙ্কন হাসান, পরিচালক, জায়ান্ট গ্রুপ ১৭. সিফাত ইশতি, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, টেক্সটালিয়া লিমিটেড ১৮. রিমনুল আলম সাদী, পরিচালক, ওল্ড টাউন ফ্যাশনস লিমিটেড ১৯. ফারজাদ ইসলাম অন্তর, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্লাটিনাম সোর্সিং অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড ২০. অভী বড়ুয়া চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক, জেমস ডিজাইন লিমিটেড।
২১. মো. জুয়েল রানা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মেট্রিক্স অ্যাপারেল ২২. নিয়াজ রহমান সাকিব, পরিচালক, সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ২৩. আহমেদ নাবিদ ইমতিয়াজ, পরিচালক, আন্দালিব টেক্সটাইলস মিলস ২৪. লাবিবুর রহমান মালেক, পরিচালক, মডার্ন ২৫. নাঈমুল হাসান নাঈম, পরিচালক, অ্যাবলুম ডিজাইন লিমিটেড ২৬. রাজেশ সাহা, পরিচালক, রোজ সোয়েটারস লিমিটেড ২৭. আনিকা বুশরা রাফা, পরিচালক, একেএইচ গ্রুপ ২৮. ফজলে হোসেন আলিফ, লাম মিম অ্যাপারেলস ২৯. জহীর আহমেদ শাহ, আহমেদ স্পিনিং লিমিটেড ৩০. আশিকুল হক, আশিক টেক্সটাইলস লিমিটেড।
আরও পড়ুন: গণজোয়ারে উত্তাল শহীদ মিনার, তিল ধারণের ঠাঁই নেই
৩১. ওমর চৌধুরী, বঙ্গ গার্মেন্টস ৩২. ইরফানুল হক, পরিচালক, ফতুল্লা ফেব্রিকস ৩৩. তানজিলা করিম, পরিচালক, ওডেল গ্রুপ ৩৪. তাসনিম সাদেক, পরিচালক, রোশাওয়া স্পিনিং ৩৫. জুবায়ের হোসেন আসিফ, পরিচালক, রোজ গার্ডেন অ্যাপারেল ৩৬. মোহাম্মদ ইকবাল হাসান, পরিচালক, ফেয়ার অ্যাপারেলস লিমিটেড ৩৭. তানভীর কাশেম, পরিচালক, একেএইচ গ্রুপ ৩৮. ওয়ায়েজা মাসনুন, পরিচালক, ক্লিফটন গ্রুপ ৩৯. আবরার রশিদ, সাত্তার টেক্সটাইল লিমিটেড ৪০. শরীফ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, রিহাশ অ্যাকসেসরিজ অ্যান্ড সোর্সিং লিমিটেড।
৪১. আরশাদ রহমান, পরিচালক, ফ্যারেল ফ্যাশনস লিমিটেড ৪২. সুবায়েল সরওয়ার, পরিচালক, বিউটিফুল জ্যাকেটস লিমিটেড ৪৩. রাতুল দাস, পরিচালক, প্যারামাউন্ট গ্রুপ ৪৪. অপূর্ব সাহা, পরিচালক, পিএন কম্পোজিট লিমিটেড ৪৫. ফারহান আহমেদ, পরিচালক, প্যাকম্যান বাংলাদেশ লিমিটেড ৪৬. আয়েশা শেফা, পরিচালক, সিমকো স্পিনিং লিমিটেড ৪৭. জোবায়ের তানসিম আহমেদ, পরিচালক, শাহ ফতেউল্লাহ টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড।
এর আগে বিকেলে শহীদ মিনার থেকে ছাত্র-জনতার গণমিছিল থেকে এক দফা ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবি হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রিসভার পদত্যাগ।
আরও পড়ুন: ‘এক দফা’কে বিজয়ে পরিণত করুন: সমন্বয়ক হাসনাত
এরপর এক দফা নিয়ে একটি ভিডিও বার্তা প্রদান করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, শহীদ মিনারে ছাত্র-জনতার যে গণ বিস্ফোরণে মানুষ এক দফার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
যতদিন পর্যন্ত আমাদের এই এক দফা বাস্তবায়ন না হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত আপনারা যেসব জরুরি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো পালন করবেন। বিজয় নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে—যুক্ত করেন হাসনাত আব্দুল্লাহ।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে দেশে এখন পর্যন্ত ২১৬ জনেরও বেশি আন্দোলনকারী এবং শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের দাবি—এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজারের মতো শিক্ষার্থী এবং আন্দোলনকারী ও সাধারণ মানুষ আহত হয়েছে।
আরও পড়ুন: সেনা নিবাসের সামনের সড়কে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সদস্য ও সরকার সমর্থক ছাত্রলীগ এবং তাদের দলীয় নেতাকর্মীদের হামলায় এসব আহত ও নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলেও দাবি আন্দোলনকারীদের।
এর আগে সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথার বাতিল চেয়ে আন্দোলনে নামে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এরপর আন্দোলন তীব্র হতে থাকলে মাঠে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সরকার সমর্থকরা। এতে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং সহিংসতার ঘটনা ঘটে।
পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সদস্যরা শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি এবং শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। এরপর দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে মামলা হয়। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে।