স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদন, ছাত্রলীগ বাধা দিলে কোটা আন্দোলন তীব্র হওয়ার শঙ্কা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ১০:৩৬ AM , আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪, ১১:১৯ AM
সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে এক মাস ধরে আন্দোলন করছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এই আন্দোলন সম্পর্কে আগেই সরকারকে সতর্ক করেছে সরকারি একটি সংস্থা। বলা হয়, আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমর্থন থাকায় বিষয়টির যৌক্তিক সমাধান না করা গেলে এবং ছাত্রলীগ বাধা দিলে আন্দোলন আরও ছড়িয়ে তীব্র আকার ধারণ করতে পারে।
শুক্রবার (৫ জুন) একটা জাতীয় দৈনিক এ বিষয়ে খবর প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয় সরকারের একটি সংস্থা গত ২৩ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন দেয়। পরদিন ২৪ জুন এ বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সারা দেশে পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয় পুলিশ সদর দপ্তর।
সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, কোটা বাতিলের দাবির প্রতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমর্থন থাকায় বিষয়টির যৌক্তিক সমাধান না করা গেলে এ আন্দোলন সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়তে পারে। উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চলাকালে রাস্তা অবরোধ, যানবাহন ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও পুলিশের ওপর হামলার চেষ্টা চালাতে পারেন।
বিএনপি, জামায়াত, ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, বাম ছাত্র সংগঠনসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন সংগঠন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়ে নাশকতা ঘটাতে পারে। তার দায় সরকারের ওপর চাপানোর চেষ্টা করতে পারে।
এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা আন্দোলনে বাধা দিতে পারেন। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। এ ধরনের ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটলে অতীতের মতো দায় ছাত্রলীগের ওপর চাপিয়ে সারা দেশে কোটা বাতিলের আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করতে পারে।
প্রতিবেদনে ১১টি সুপারিশ করা হয়। বলা হয়, আন্দোলন চলাকালে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের মন্তব্য করার ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজন রয়েছে।
এর বাইরে আন্দোলন চলাকালে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, জগন্নাথ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর কথা বলা হয়। এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যাতে মুখোমুখি অবস্থানে না যায়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার তাগিদ দেওয়া হয়।
এদিকে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার জেরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক শিক্ষার্থীকে আবাসিক হল থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠছে শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। গভীর রাতে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয়টি কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ওই হলের সামনে জড়ো হয়ে আন্দোলন শুরু করলে তাকে বাধ্য হয়ে হলে ফেরান হল প্রশাসন। বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হলের সামনে এ ঘটনা ঘটেছে।
অমর একুশে হলের ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর নাম সারজিস আলম। বর্তমানে তিনি ওই হলে অবস্থান করছেন। পরে রাত একটার দিকে তিনি ফেসবুকের এক স্ট্যাটাসে জানান, বর্তমানে আমি হলের রুমে আছি এবং ঠিক আছি। বিস্তারিত পরে বলছি।
এর আগে রাত ১২টার দিকে কোটা আন্দোলনের নেতা সারজিস আলমকে হলচ্যুতের অভিযোগ উঠে শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। কোটা আন্দোলনের মূল সমন্বয়কদের একজন তিনি। জানা গেছে, রাতেই তাকে হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় হল শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন শীর্ষ পদপ্রত্যাশী নেতা। এ সংবাদ রাতে ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে হলটির সাধারণ শিক্ষার্থীরা। হলের গেটের পাশের রাস্তায় অবস্থান নেয় একুশে হলসহ ঢাবির অন্যান্য হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, কোটা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য সারজিসের উপর ক্ষোভ রয়েছে হল শাখা ছাত্রলীগের অনেক নেতার। যার পরিপ্রেক্ষিতে রাতে সারজিসের রুমমেটকে ডেকে নিয়ে তাকে হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় হল ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতৃবৃন্দ। পরে খবরটি জানাজানি হলে হলের সামনে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে হল ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ এসে তার কাছে ক্ষমা চায় এবং ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষায় তারা এটি করেছে বলে জানায়।
পরে হলের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওখানে আছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সারজিস আলম ও ওই হলের অধ্যাপক ইশতিয়াক এম সৈয়দ। এসময় সারজিস আলম বলেন, আমার রুমমেটকে ডেকে নিয়ে বলা হয়েছে যে ছাত্রলীগের হাই-কমান্ড থেকে বলা হয়েছে আমাকে যেন হল থেকে বের করে দেওয়ার জন্য। তো আমি তখন ছাত্রলীগের একাধিক নেতার সাথে কথা বললে তারাও একই কথা বলে। পরবর্তীতে আমি কোনো ঝামেলায় না গিয়ে হল ছেড়ে বের হয়ে যেতে গেলে বাইরে শিক্ষার্থীদের দেখতে পাই। কোনো না কোনোভাবে তারা সব জেনে গিয়েছিল।
তিনি বলেন, পরবর্তীতে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম ও ইনান আমার সাথে যোগাযোগ করেন এবং প্রতিনিধি পাঠিয়ে জানান যে তারা আমাকে হল থেকে বের করে দেওয়ার জন্য কোনো নির্দেশনা দেননি। পরবর্তীতে যে হল ক্যান্ডিডেটরা আমাকে চলে যেতে বলে তারাও স্বীকার করেন এখানে হাই-কমান্ডের কোনো নির্দেশনা নেই। তারা ব্যক্তিগত কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। এসময় তিনি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে বলেন।
এসময় সারজিস আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি চাই যারা এখানে এসেছে তারাসহ সবাই যেন এর থেকেও তীব্র গতি নিয়ে আমাদের শনিবার থেকে যে কর্মসূচি সেখানে অংশগ্রহণ করে।
আন্দোলনরত একাধিক শিক্ষার্থী জানান, আমরা খবর পাই সারজিস ভাইকে হল থেকে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর আমরা সকলেই বুঝতে পেরেছি ছাত্রলীগ কোটা আন্দোলন করার কারণেই এমনটা করছে। কিন্তু আমরা এটা হতে দিলে ছাত্রলীগ এই আন্দোলন সফল হতে দিবে না। তাই আমরা এখানে অবস্থান নিয়েছি।
জানতে চাইলে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ইশতিয়াক এম সৈয়দ জানান, এটি একটি মিস ইনফরমেশন। যারা সারজিসকে হল ছাড়ার কথা বলেছিলো তারাই তার সাথে ব্যাপারটি মিটিয়ে নিয়েছে। শিক্ষার্থীরা পুরোটা না জেনে অবস্থান নিয়েছে।
এসময় হলের সামনে কোটার পক্ষে এবং সারজিসের পক্ষে স্লোগান দেয় শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনে অমর একুশে হলসহ শহীদুল্লাহ হল, ফজলুল হক মুসলিম হলসহ অন্যান্য হলের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। পরে রাত একটার দিকে শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।