টিএসসিতে মেট্রো স্টেশনের বিরোধিতা করা সৈকত এখন গুণকীর্তন করছেন

টিএসসিতে মেট্রো স্টেশনের বিরোধিতা করে ব্যানার হাতে আন্দোলনে সৈকত (বায়ে) শনিবার অনুসারীদের নিয়ে উৎসব করেন (ডানে)
টিএসসিতে মেট্রো স্টেশনের বিরোধিতা করে ব্যানার হাতে আন্দোলনে সৈকত (বায়ে) শনিবার অনুসারীদের নিয়ে উৎসব করেন (ডানে)  © সংগৃহীত

মেট্রোরেলের একটি স্টেশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসিতে স্থাপন করায় দিনভর নাচে-গানে, মূকাভিনয়, আর্ট ক্যাম্পসহ নানা আয়োজনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে ছাত্রলীগ। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে গতকাল শনিবার ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারীরা এ আয়োজন করেন।

আরও পড়ুন: ঢাবিতে মেট্রোরেলের স্টেশন স্থাপনের প্রতিবাদে ভাঙচুর
 
তবে ২০১৯ সালে এই মেট্রোরেলের স্টেশন টিএসসিতে স্থাপন করার বিরোধিতা করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। এর সামনের সারিতে ছিলেন তৎকালীন ডাকসুর সদস্য তানভীর হাসান সৈকত। চার বছর পর সেই সৈকত ও তার অনুসারীরা এমন আয়োজনে বিস্মিত হয়েছেন অনেকেই। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে সমালোচনা। তবে সৈকতের দাবি, মেট্রোরেল স্টেশন টিএসসি থেকে একটু দূরে হোক সেটা চেয়েছিলেন। তবে তিনি বিরোধিতা করেননি।

জানা যায়, মেট্রোরেলের লাইন স্থাপনের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে মেট্রোরেলের লাইন নেওয়ার বিরোধিতা করেছিল একদল শিক্ষার্থী। সে সময় আরেকদল শিক্ষার্থী টিএসসিতে মেট্রোরেলের স্টেশন স্থাপন করা নিয়ে বিরোধিতা করেছিল। তখন উভয় পক্ষই ক্যাম্পাসে নানা কর্মসূচিও পালন করেছিল। টিএসসিতে মেট্রোরেলের স্টেশন স্থাপন নিয়ে বিরোধিতাকারীদের একজন ছিলেন সৈকত। বর্তমানে তিনি ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

টিএসসি এলাকায় শনিবার আনন্দ উৎসবে তানভীর হাসান সৈকত

গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘মেট্রো অ্যাট টিএসসি: থ্যাংক ইউ শেখ হাসিনা’ শীর্ষক আয়োজনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এ আয়োজনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত। আনন্দ শোভাযাত্রা, আর্ট ক্যাম্প, গণস্বাক্ষর কর্মসূচিসহ সকল কর্মসূচিতে দেখা যায় তাকে।

সৈকতের ফেসবুক স্ট্যাটাস

অথচ একসময় তানভীর হাসান সৈকত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এর বিরোধিতা করে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। অংশ নিয়েছিলেন কর্মসূচিতেও। ২০১৯ সালের ২০ জুলাই টিএসসিতে মেট্রোরেলের স্টেশন না করার দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করেছিলেন। তার সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছিলেন ডাকসুর তৎকালীন সদস্য মাহমুদুল হাসান।

তানভীর হাসান সৈকত সে সময় ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘অনেক চড়াই-উৎরায়ের মধ্য দিয়ে জাতীয় স্বার্থে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মেট্রোরেল মেনে নিলেও, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভেতরে কোন স্টেশন মেনে নেওয়া হবে না। শাহাবাগে স্টেশন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য যথেষ্ট। আর শাহাবাগে স্টেশন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন?’

রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ব্যানার হাতে তানভীর হাসান সৈকত

তিনি আরও লেখেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়কে গুলিস্তান করতে দেওয়া হবে না কোনোভাবেই। টিএসসি আমাদের আবেগের জায়গা। টিএসসির দেওয়ালে একটা টোকা লাগলে তার যথার্থ উত্তর দেওয়া হবে। ক্যাম্পাসে কোনো স্টেশন চাই না।’ 

আরো পড়ুন: মেট্রোরেলের টিএসএসি স্টেশন উদ্বোধন, প্রধানমন্ত্রীকে শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, আমরা মেট্রোরেল স্টেশনের কখনো বিরোধিতা করিনি। আমরা চেয়েছি মেট্রোরেল স্টেশন টিএসসি থেকে একটু দূরে হোক। টিএসসির প্রাণকেন্দ্রে মেট্রোরেল স্টেশন হলে রাজু ভাস্কর্যের স্থাপনা ভেঙে ফেলা লাগতো, এটা কখনোই কাম্য নয়।

তিনি বলেন, ডাকসুর নেতাকর্মীদের নিয়ে সে সময় আমরা আন্দোলন করেছিলাম। এর পরিপ্রেক্ষিতে মেট্রোরেল স্টেশন টিএসসি থেকে একটু সরিয়ে বাংলা একাডেমির দিকে স্থাপন করা হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ