বাকৃবি

মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও পূর্ণাঙ্গ হয়নি ছাত্রলীগের কমিটি, পদপ্রত্যাশীদের ক্ষোভ

লোগো
লোগো  © ফাইল ছবি

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) শাখা ছাত্রলীগের এক বছর মেয়াদি আংশিক কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে এ বছরের ২৮ এপ্রিল। কিন্তু মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও গঠিত হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি। এ নিয়ে পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। গড়িমসি না করে কর্মীদের নেতৃত্বের পথ সুগম করতে কমিটি দ্রুত  পূর্ণাঙ্গ করার দাবি তাদের।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২৯ এপ্রিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বাকৃবি শাখা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে বর্তমানে মেয়াদ শেষ হওয়ার ৬ মাস পার হলেও দেয়া হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি। সংগঠনটির গঠনতন্ত্রে মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে সম্মেলন না হলে কমিটি বিলুপ্ত করার কথা উল্লেখ রয়েছে।

ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি এবং হল কমিটিগুলো দেওয়া ব্যাপারে বর্তমান কমিটির নেতাকর্মীরা যথাযথ প্রস্তুতি নিয়েছেন বলেই আমরা জানি। -শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ

ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে ধারা ৯ উপজেলা শাখা ও ধারা ১০ জেলা শাখা থেকে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জেলা শাখা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো উপজেলা শাখার সমমর্যাদা পাবে। ধারা ১০ অনুযায়ী জেলা শাখার মেয়াদকাল হবে এক বছর। জেলা শাখাকে এক বছরের মধ্যে নির্বাচিত কর্মকর্তাদের হাতে দায়িত্বভার বুঝিয়ে দিতে হবে। বিশেষ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের অনুমোদনক্রমে ৯০ দিন সময় বৃদ্ধি করা যাবে। এই সময়ের মধ্যে সম্মেলন না হলে জেলা কমিটি বিলুপ্ত বলে গণ্য হবে।

জানা যায়, বাকৃবি ছাত্রলীগের আংশিক কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও এখন পর্যন্ত হল কমিটি গঠন করা হয়নি। তবে হল কমিটি গঠিত না হলেও গঠন করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি অনুষদীয় ও একটি ইনস্টিটিউটের কমিটি। যেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে নজিরবিহীন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলের ছাত্রলীগ কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, হলগুলো সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নিয়ন্ত্রণ অনুযায়ী বিভক্ত। সভাপতি নিয়ন্ত্রণ করেন বঙ্গবন্ধু, ঈশা খাঁ হল, ফজলুল হক হল, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল এবং শহীদ নাজমুল আহসান হল।

অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক নিয়ন্ত্রণ করেন শহীদ শামসুল হক হল, শহীদ জামাল হোসেন, আশরাফুল এবং শাহজালাল হল। ছাত্রী হলগুলোর মধ্যে রোজী জামাল হল, তাপসী রাবেয়া হল এবং সুলতানা রাজিয়া হল নিয়ন্ত্রণ করে সভাপতি। এছাড়া বেগম রোকেয়া হল ও ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল নিয়ন্ত্রণ করেন সাধারণ সম্পাদক।

সভাপতি মতাদর্শের ছাত্রলীগ কর্মীরা সেক্রেটারির হলগুলোতে এবং সেক্রেটারির মতাদর্শের ছাত্রলীগ কর্মীরা সভাপতি নিয়ন্ত্রিত হলগুলোতে থাকতে পারে না। বাকৃবি শাখা ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের পরপরই গত বছরের ৩০ মে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের হলগুলোর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে প্রায় ৫০ জনেরও বেশি আহত হয়। এছাড়াও গত ০৫ নভেম্বর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সেক্রেটারি নিয়ন্ত্রিত দুটি হলের নেতা-কর্মীদের মাঝে আবারও মারামারির ঘটনা ঘটে।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের এক ছাত্রলীগকর্মী বলেন, হল কমিটি দেওয়ার আগেই অনুষদীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। যেখানে এর আগে কখনও ছাত্রলীগের অনুষদীয় কমিটি গঠন করা হয়নি। আবার অনুষদীয় ছাত্রসমিতিতে যারা আছেন তারা সবাই ছাত্রলীগ কর্মী। অনুষদীয় ছাত্রসমিতি থাকা সত্ত্বেও আলাদা করে অনুষদীয় ছাত্রলীগ কমিটি দেওয়ার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই।

আরও পড়ুন: বাকৃবি ছাত্রলীগের নেতা হতে ৭২ জনের জীবনবৃত্তান্ত জমা

শাখা ছাত্রলীগের এ কর্মী বলেন, অনেকেই মনে করেন বাস্তবিক অর্থে অনুষদীয় ছাত্রলীগ কমিটির কোনো ভূমিকা নেই। অনুষদীয় ছাত্রসমিতির পদবঞ্চিত নেতাদের খুশি রাখতে অনুষদীয় ছাত্রলীগের কমিটি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন কমিটিতে উত্তরবঙ্গ ও রংপুর অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন একাধিক পদবঞ্চিত কর্মীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহজালাল হলের একজন পদপ্রত্যাশী নেতা বলেন, ‘কমিটির বয়স দেড় বছর পেরিয়ে গেছে। এখনও পূর্ণাঙ্গ কমিটি পাইনি, এটি সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে বিলম্ব হলে বেশিরভাগ সময় দেখা যায় দুই-এক মাসের মধ্যেই আবার সম্মেলনের ঘোষণা চলে আসে। ফলে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদ পরিচয় যারা পান তারা এক দেড় মাসের মধ্যেই আবার সাবেক হয়ে যান। এতে করে কর্মীরা সাময়িক সময়ের জন্য একটি পরিচয় পেলেও নেতৃত্ব প্রয়োগ করার সময় বা সুযোগ পায় না।

ছাত্রলীগের হল কমিটিতে পদপ্রত্যাশী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের এ জেড এম বর্নী বলেন, ‘ছাত্রলীগ বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন হওয়ায় এখানে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা সবসময়ই বেশি। তাই যে পর্যায়ের কমিটিই হোক না কেন কমিটি জট আমাদের রাজনীতির সঠিক ধারাকে ব্যাহত করে। কর্মীদের হতাশ করে এবং নেতৃত্বের সংকট তৈরি করে। তাই জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে কর্মীদের মনোবল চাঙা করতে অতি দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ও হল কমিটিগুলো সম্পন্ন করা উচিত।’

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মেহেদী হাসান বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্দেশনা দিলেই আমরা কমিটি ঘোষণা দিয়ে দেবো। আমাদের সবকিছু গোছানো আছে। 

ছাত্রসমিতি নিয়ে মেহেদী বলেন, এখানে আমরা ছাত্রলীগের প্যানেল দিই। ওটা ছাত্রলীগের কমিটি না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তরবঙ্গের শিক্ষার্থী অনেক। সে কারণে রাজনীতিতেও উত্তরবঙ্গের ছেলে-মেয়েরা বেশি অংশগ্রহণ করে। যারা রাজনীতির মাঠে থাকে আমরা তাদেরকেই মূল্যায়ন করি। কার বাসা কোথায় এগুলো দেখে আমরা কমিটি করি না।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার তায়েফুর রহমান বলেন, রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা থাকবেই। তবে আমরা কেউ কারো প্রতিদ্বন্দ্বী নই। এখনও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হয় নাই, সেখানে রংপুর ভিত্তিক রাজনীতির প্রসঙ্গটা আসার কথা না। আমার পদ প্রাপ্ত কর্মীদের বেশিরভাগই ময়মনসিংহ অঞ্চলের। আমরা অনুষদীয় শাখা ছাত্রলীগ কমিটি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের অনুমতি নিয়েই করেছি।

বাকৃবি ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, নির্বাচন পূর্বে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের অনুসারী ছাত্ররা ওইসকল দলের অনুসারী শিক্ষকদের সাথে মিলে যাতে কোনো বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করতে না পারে সে কারণেই আলাদা করে অনুষদীয় কমিটি দেওয়া হয়েছে। মূলত সাংগঠনিক অবস্থা শক্তিশালী করার জন্যই এই কাজটি করা হয়েছে।

পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই প্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত জমা নিয়েছি। মূলত রাজনীতির প্রতি মন থেকে আগ্রহী এবং যোগ্য কর্মী বাছাই করার জন্যেই এ বিষয়ে একটু সময় নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়েও কেন্দ্রীয় কমিটিকে জানানো হয়েছে। তবে আমাদের কাছে কমিটি দেওয়ার মতো যথেষ্ট প্রস্তুতি আছে।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্দেশনা দিলেই আমরা কমিটি ঘোষণা দিয়ে দেবো। আমাদের সবকিছু গোছানো আছে। -মেহেদী হাসান, সাধারণ সম্পাদক, বাকৃবি ছাত্রীগ

জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি এবং হল কমিটিগুলো দেওয়া ব্যাপারে বর্তমান কমিটির নেতাকর্মীরা যথাযথ প্রস্তুতি নিয়েছেন বলেই আমরা জানি। আর অনুষদীয় শাখা ছাত্রলীগ কমিটি গঠন অন্যায়ের কিছুই নয়। সাংগঠনিক কার্যক্রম বিস্তৃত করার লক্ষ্যে যেকোনো সংগঠনেরই শাখা কমিটি গঠনের এখতিয়ার আছে। আমরা সকল শিক্ষার্থীদের আমাদের সংগঠনে সবসময় আমন্ত্রণ জানাই। আর 

বাকৃবি ছাত্রলীগের হল ভাগাভাগি নিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ এ নেতা বলেন, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে হল ভাগাভাগির বিষয়টি নিয়ে আমরা অবগত নই। সভাপতি ও সম্পাদকের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের কোনো ঘটনা আমাদের কাছে আসলে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে সেটি সমাধানের চেষ্টা করবো।


সর্বশেষ সংবাদ