মতের বিরুদ্ধে গেলেই ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে ‘শিবির’ অভিযোগ দিয়ে নির্যাতন ছাত্রলীগের
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৫:০২ PM , আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৬:৪৬ PM
চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) চার শিক্ষার্থীকে রাতভর হলে আটকে রেখে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নির্যাতনের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ। আজ শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ সানাউল্লাহ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রতিবাদ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গত বুধবার রাতে চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) জাহিদ হোসেন ওয়াকিল, সাকিব হোসেন, এম এ রায়হান ও মোবাশ্বির হোসেন শুভ্রকে তাদের নিজ নিজ কক্ষ থেকে অন্য একটি কক্ষে ডেকে নিয়ে যায় ছাত্রলীগ কর্মীরা। এরপর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ১৮ ঘণ্টা তাদের সেখানে আটকে রেখে রাতভর নির্যাতন চালায় ছাত্রলীগ।
সংগঠনটি বলছে, নির্যাতনকারীদের মূলহোতা অভিজিৎ দাশ বর্তমান শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেলের অনুসারী। তারা আরও জানায়, রাতভর নির্যাতনের পর বিষয়টি জানাজানি হলে দুজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকি দুজন, জাহিদ হোসেন ওয়াকিল ও সাকিব হোসেনকে পুলিশ আহতাবস্থায় উদ্ধার করে চমেকর আইসিইউতে ভর্তি করান।
প্রতিবাদ বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনা নতুন নয়। ইতিপূর্বে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে শিবির অভিযোগ দিয়ে রাতভর নির্যাতন করে ছাত্রলীগ হত্যা করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের মতের বিরুদ্ধে গেলে ‘শিবির’ অভিযোগ দিয়ে নির্যাতনের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। এর ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছাত্রলীগ রাতভর ৪ শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করে।
কারো ব্যক্তিগত তথ্য চেক করার কথা বলে ডেকে নিয়ে ছাত্রলীগের এই নির্যাতন নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার হরণ করা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল জানিয়ে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ বলছে, এই নির্যাতনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের পাশাপাশি তারা সাথে দোষীদের বিচারের আওতায় এনে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) গভীর রাতে চমেকের প্রধান ছাত্রাবাসের বিভিন্ন কক্ষ থেকে শিবির সন্দেহে চার শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীরা হলেন, চমেকের ৬২তম ব্যাচের ছাত্র এম এ রাইয়ান, মোবাশ্বির হোসাইন শুভ্র, জাহিদ হোসাইন ওয়াকিল ও সাকিব হোসেন। আহতদের মধ্যে জাহিদ হোসাইন ওয়াকিল ও সাকিব হোসেনকে চমেক হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রতে (আইসিইউতে) ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া আহত এমএ রাইয়ান কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং শুভ্র নারায়ণগঞ্জে একজন অর্থোপেডিক্স বিভাগের চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ঘটনার দিন রাতে ভুক্তভোগী চার শিক্ষার্থীকে চমেক প্রধান ছাত্রাবাসের তৃতীয় তলার একটি 'টর্চার সেলে' রাখা হয়। সেখানে অভিযুক্তরা লাঠি এবং প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে ভুক্তভোগীদের বেধড়ক মারধর করে। মারধরের একপর্যায়ে রাইয়ান গুরুতর আহত হন। বৃহস্পতিবার ভোর ৬টার দিকে তাকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আবার ছাত্রাবাসে নিয়ে আসা হয়। পরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাহিদ হোসাইন ওয়াকিল ও সাকিব হোসেনকে ছাত্রাবাস থেকে উদ্ধার করে চমেক কর্তৃপক্ষ। এর আগে নির্যাতনের শিকার এম এ রাইয়ান ও মোবাশ্বির হোসাইন শুভ্রকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
জানা যায়, হামলার ঘটনায় নেতৃত্ব দেন চমেকের ৬০তম ব্যাচের ছাত্র অভিজিৎ দাশ ও শামীম, ৫৯ তম ব্যাচের ছাত্র রিয়াজুল ইসলাম জয়, ৬১তম ব্যাচের ইমতিয়াজ হাবীব, ৬২তম ব্যাচের মাহিন আহমেদ, ইব্রাহিম সাকিব, চমন অনয়, সৌরভ দেবনাথ ও জাকির হোসাইন সায়ালসহ ১০ থেকে ১৫ জন। তারা সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং চমেক ক্যাম্পাসে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। ছাত্রলীগের অন্য পক্ষের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে ইতোমধ্যে অভিযুক্তদের কয়েকজন চমেক থেকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কৃত হয়েছেন।