সম্মেলনকে ঘিরে চাঙা রাবি ছাত্রলীগ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস  © সংগৃহীত

দীর্ঘ ছয় বছর পর আগামী ১২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলন। তাই নেতাকর্মীদের মধ্যে সম্মেলনকে ঘিরে ফিরেছে প্রাণচাঞ্চল্য। চাঙ্গা হয়ে উঠেছে নেতাকর্মীরা। কে আসছেন নেতৃত্বে- এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।

মিছিল-মিটিং নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন পদপ্রত্যাশীরা। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চত্ত্বরগুলোতে পদপ্রত্যাশীদের ব্যানার, বিলবোর্ডে ভরপুর। সেইসঙ্গে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বেড়েছে দলীয় টেন্টে।

প্রতিদিনই পদপ্রত্যাশীরা কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মিছিল, শোডাউনের মাধ্যমে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছেন। আর রাত হলেই কর্মীদের নিয়ে পদপ্রত্যাশী নেতারা বসছেন মিটিংয়ে, আগামী দিনের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করার জন্য। সব মিলিয়ে ক্যাম্পাসে এক উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

এর আগে ২৫ অক্টোবর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের স্বাক্ষর করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ১২ নভেম্বর রাবি ও রুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন আয়োজন করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হয়। সাথে নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
 
এ লক্ষ্যে গতকাল শনিবার (৫ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত জমা নেন কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। নতুন কমিটির জন্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৯০ জন প্রার্থী জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছে। বর্তমান কমিটির দপ্তর সম্পাদক বাশার এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন। তবে কোন পদের জন্য কতটি জীবনবৃত্তান্ত জমা হয়েছে সেটি এখনো জানা যায়নি।

বর্তমান রাবি ছাত্রলীগ শাখার প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক, সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী আসাদুল্লা-হিল-গালিব বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরে প্রায় ছয় বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি নাই। আমরা আগে থেকেই কমিটি চাচ্ছিলাম কারণ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছিলো। তখন আমরা সম্মেলনের দাবিতে আন্দোলন করি, সে আন্দোলনের ফল হলো ১২ নভেম্বর রাবি শাখা ছাত্রলীগের ২৬ তম সম্মেলন হতে যাচ্ছে। যারা প্রার্থী আছে তাদের প্রচেষ্টায় ক্যাম্পাসে ব্যানারে ভরে গেছে, ক্যাম্পাসে খুব আনন্দঘন পরিবেশ। ১২ তারিখ সম্মেলনকে সফল করতে যা করা লাগে তা করতে আমরা প্রস্তুত আছি। আমরা চাই যারা বাইরে থেকে আসবে তারা যেন দেখে এ শহরটা কতো সুন্দর, গোছানো এবং আলোক সজ্জিত। 

নেতৃত্বের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমার চাওয়া সামনে যেহেতু দুটি বড়ো বড়ো নির্বাচন আর ইসলামি ছাত্রশিবির নামে একটি নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন আছে যারা ইসলামকে সামনে রেখে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্তি করে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভুল পথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। আমরা চাইবো যে ইসলামী ছাত্রশিবিরকে যারা মোকাবেলা করার ক্ষমতা রাখে, ক্যাম্পাস সুশৃঙ্খল রাখা জন্য যারা যোগ্য, যারা সিট বানিজ্য করবে না, চাঁদাবাজি করবে না, যারা মারামারি করবে না তারা যেন ক্যাম্পাসের নেতৃত্বে আসে।'

সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী আল মুক্তাদির তরঙ্গ বলেন, 'আসলে রাবি ছাত্রলীগের সম্মেলন তো আমাদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার ফল। আমাদের পূর্বসূরিদের রক্ত, শ্রম, ঘামের উপর এ সংগঠন দাঁড়িয়ে আছে। এখন এ সংগঠনে এতোদিন পর সম্মেলন হচ্ছে, আমাদের মধ্যে প্রাণসঞ্চার হচ্ছে। আমি যেটা চাই যে, যারা নিয়মিত ছাত্র এবং যারা সততার সাথে রাজনীতি করছে তারা যেন নেতৃত্বে আসে।'

সম্মেলনের সার্বিক বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে রাবি ছাত্রলীগ শাখার বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ২৬তম সম্মেলন উপলক্ষে ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ এবং সেই সাথে ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। আশা করছি ২৬তম সম্মেলনের মাধ্যমে যোগ্য নেতৃত্বের হাতে আমরা দায়িত্ব তুলে দিতে পারবো এবং সেই সাথে উৎসবমুখর পরিবেশে আমরা সম্মেলন শেষ করতে পারবো।

তিনি আরও বলেন, আমরা চাই যারা ছাত্রলীগের সাথে দীর্ঘদিন জড়িত, ছাত্রলীগের জন্য যারা অবদান রেখেছে, ছাত্রদের মধ্যে যার গ্রহণযোগ্যতা আছে, জাতীয় নির্বাচনে যারা ভূমিকা রাখতে পারবে, যারা আওয়ামীলীগ পরিবারের সন্তান এমন নেতৃত্বের কাছে আমরা আগামী দিনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতৃত্ব তুলে দিতে চাই।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর রাবি শাখা ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পরে ১১ ডিসেম্বর ঘোষণা করা হয় নতুন কমিটি। প্রায় ছয় বছর যাবৎ সেই কমিটিই নেতৃত্ব দিয়ে আসছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে।


সর্বশেষ সংবাদ