শীতের রাতে পাড়া-মহল্লায় জমজমাট ব্যাডমিন্টন

  © টিডিসি ফটো

শীত জেঁকে বসার সাথে সাথেই চট্টগ্রাম নগরীর পাড়ায় পাড়ায় জমে উঠেছে ব্যাডমিন্টন খেলা। প্রতিবছর শীত এলেই তারুণ্য মেতে ওঠে এই আনন্দময় খেলায়। দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই নগরীর মাঠ গুলোতে ফ্লাডলাইটের আলোয় সরগরম হয়ে ওঠে ব্যাডমিন্টন খেলা। এসময় র‍্যাকেটে বাড়ি খেয়ে শাটল কর্কের ছুটে যাওয়ার শব্দে মুখরিত হয় চারপাশ। খেলাকে ঘিরে সৃষ্টি হয় টান টান উত্তেজনা।স্ম্যাশ, নো..সার্ভিস, লস্ট, সাইড চেঞ্জ, গেম বল, কোর্ট থেকে ভেসে আসে চিৎকার। তৈরি হয় এক অন্যরকম মূহুর্ত।

সারাদিনের ব্যস্ততা কাটিয়ে নানাবয়সী লোকজন মাঠে নেমে পড়ে ব্যাডমিন্টন খেলতে। কোথাও কোথাও আয়োজন করা হয় ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টের। বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ পড়ুয়া বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা চাঁদা তুলে বানায় ব্যাডমিন্টন কোর্ট, দু’পাশে বাঁশের সঙ্গে বোর্ড ঝুলিয়ে লাগানো হয় ডজনখানেক লাইট। শীতের হিমেল হাওয়া যাতে খেলার বিঘ্ন ঘটাতে না পারে সেজন্য কোর্টের চারপাশ ঘিরে লাগানো হয় পাটের তৈরি চট।

মাঠের চারপাশ ঘিরে খেলা দেখতে উৎসুকেরা খেলার আনন্দকে আরো দ্বিগুণ করে তোলে। কোর্ট থেকে যখন ‘থারটিন হোপ’, ‘ফোরটিন লাস্ট’ আওয়াজ আসে, তখন দর্শকদের ভেতর এক ধরনের উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা কাজ করে যা খেলাকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।

প্রতিদিন সন্ধ্যা নামার পর অফিস ফেরত কর্মজীবী মানুষ আর তরুণ-তরুণীরা র‍্যাকেট হাতে হাজির হন পাড়ার মাঠে। যেখানে খেলার জন্য উপযুক্ত মাঠে নেই সেখানেও থেমে নেই ব্যাডমিন্টন। সামান্য আঙিনার ওপরও চলছে হাওয়ায় শাটল কর্ক ছোড়ার খেলা।

ব্যাডমিন্টন খেলাকে কেন্দ্র করে পাড়ায় পাড়ায় এখন উৎসবমুখর পরিবেশ, প্রতিপক্ষকে কুপকাত করতে চলে কঠিন লড়াই। প্রতি কোর্টে এক সঙ্গে চারজনের বেশি খেলতে পারে না বলে অধিকাংশই কোটের পাশে দাঁড়িয়ে থাকে খেলার অপেক্ষায়। এক ম্যাচ শেষ হতেই পরবর্তী ম্যাচে খেলার জন্য হৈ-হুল্লোড় পড়ে যায় কোর্টে। চট্টগ্রাম নগরীর বেশিরভাগ মাঠে ব্যাডমিন্টন কোর্ট ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।

বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাইনুল হক বলেন, প্রতি বছর শীত মৌসুম এলেই এলাকার সব বন্ধুরা মিলে আমরা ব্যাডমিন্টন কোর্ট বানাই, এবারও বানিয়েছি। শীতকাল মানেই ব্যাডমিন্টন। অন্য এলাকা থেকে অনেক বন্ধুকে খেলতে আসতে বলি, এতে আরো জমে ওঠে খেলা। সন্ধ্যার পরে সবাই মিলে ব্যাডমিন্টন খেলার অনুভূতি অন্যরকম।

তবে কিছুটা আক্ষেপ নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান বলেন, আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হলে থেকে পড়াশোনা করি। প্রতি বছর শীত এলেই আমাদের ক্যাম্পাসে ব্যাডমিন্টন জমে ওঠে,অনেক রাত পর্যন্ত চলে এই খেলা, কিন্তু করোনার কারণে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এবার ক্যাম্পাসে ব্যাডমিন্টন খেলার আমেজ আগের মতো নেই।

কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী মাসুম বলেন, শীতের দাপটকে কুপকাত করতে ব্যাডমিন্টন এক কথায় অনবদ্য।আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে চাঁদা দিয়ে ব্যাডমিন্টন কোর্ট বানিয়েছি। যার যার র‍্যাকেট সে সে নিয়ে আসে। সবাই মিলে প্রতিদিন কর্ক কিনে খেলি। শীতকাল ব্যাডমিন্টন ছাড়া জমে না।

নোমান নামে ষষ্ঠ শ্রেণির এক স্কুল শিক্ষার্থী বলেন, প্রতি বছর আমাদের স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলেই যেটুকু সময় পাই সব বন্ধুরা মিলে বাড়ির আঙিনায় ব্যাডমিন্টন খেলতে নেমে যাই। করোনার কারণে এবার সব স্কুল বন্ধ, নেই পরীক্ষার চাপ তাই এবার ব্যাডমিন্টন খেলা বেশ জমে উঠেছে। বড়দের মতো রাতে খেলতে না পারলেও বিকেল হলেই র‍্যাকেট হাতে খেলতে নামি সব বন্ধুরা। প্রতি বছর এই সময়ের জন্য অপেক্ষা করি।

শুধু তাই নয়, ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও সমানতালে খেলছে ব্যাডমিন্টন। কেউ কোর্ট বানিয়েছে বিল্ডিং এর ছাদে আবার কেউ কেউ বাসার আঙিনায় খালি জায়গায় আনন্দের সাথে খেলছে ব্যাডমিন্টন।

ব্যাডমিন্টন সরগরমে নগরীর খেলার সরঞ্জামের দোকানগুলোতে বেড়েছে কর্ক, র‌্যাকেট ও শাটল বিক্রি।নগরের কাজির দেউড়ি মোড়ে অবস্থিত এপোলো শপিং সেন্টার ও নিউ মার্কেটের স্পোর্টস সরঞ্জামের দোকানগুলো ঘুরে এ চিত্র লক্ষ্য করা যায়।


সর্বশেষ সংবাদ