ছেলের সেঞ্চুরি দেখে গ্যালারিতে বসে কাঁদলেন বাবা

মুত্যলা রেড্ডি
মুত্যলা রেড্ডি  © সংগৃহীত

প্রায় নিজের ভুলেই সেঞ্চুরি হাতছাড়া করতে বসেছিলেন ভারতের তরুণ ক্রিকেটার নীতীশ রেড্ডি। ননস্ট্রাইকার থেকে তখন ৯৯ রানে দাঁড়িয়ে নীতীশ। অপরদিকে প্যাট কামিন্স বল হাতে ছুটে যাচ্ছেন মোহাম্মদ সিরাজের দিকে। আর দর্শকদের মাঝে তখন বসে আছেন নীতীশের বাবা। জোড়হাতে চোখ বন্ধ করে প্রার্থনা করে চলেছেন। পরের ওভারে স্কট বোল্যান্ডকে সামনের দিকে লং অন এলাকা দিয়ে উড়িয়ে বাউন্ডারি মারলেন নীতীশ। পার করলেন সেঞ্চুরির গণ্ডি। আর শূন্যে তখন হাত ছুঁড়লেন নীতীশের বাবা। এরপর আনন্দে কেঁদে ফেললেন। 

মানুষটির নাম মুত্যলা রেড্ডি। নীতীশ কুমার রেড্ডির বাবা। আলোর অভাবে খেলা বন্ধের খানিক আগে ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে পুরো মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড (এমসিজি) হাততালি দিয়েছে তাকে। সকালে ভারত যখন দিন শুরু করেছিল, আক্ষরিক অর্থেই কাঁপাকাঁপি চলছিল ব্যাটিংয়ে। চোখরাঙানি দিচ্ছিল ফলো–অন। নীতীশ সেটি রুখে তো দিয়েছেনই, বরং প্রতিরোধে, প্রতি আক্রমণে আর লড়াইয়ের অসাধারণ প্রদর্শনী দেখিয়ে সবাইকে নিজের দিকে ‘ফলো ইন’ করিয়েছেন। মেলবোর্নে শেষ বিকেলে স্কট বোল্যান্ডকে লং অন দিয়ে চার মেরে তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিও।

দিনের খেলা শেষে ফক্স ক্রিকেটের হয়ে নীতীশের বাবার সাক্ষাৎকার নিতে যান অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। সেই সময় নীতীশের বাবা আবেগে ভেসে যাচ্ছেন। গিলক্রিস্টকে তিনি বলেন, ‘এটা খুবই স্পেশাল। পরিবারের জন্যে খুবই বিশেষ আজকের দিন। যখন সিরাজ ক্রিজে ছিলেন, তখন খুবই নার্ভাস মনে হচ্ছিল।’ এ সময় নীতীশের কাকা এবং অন্যান্যরা পাশ থেকে বলতে থাকেন, এই পুরো সময় নীতীশের বাবা প্রার্থনায় মগ্ন ছিলেন। 

ভারতের টেস্ট দলে ডাক পাওয়ার পর নীতীশই বিসিসিআই টিভিকে শুনিয়েছিলেন নিজের উঠে আসার গল্প। যে গল্প আসলে তার বাবার গল্প, মুত্যলার গল্প। বিশাপত্তনমের এই মানুষটি ছেলেকে ক্রিকেটার বানাতে চাকরি ছেড়েছেন। কোচেরা যখন বাচ্চা নীতীশের খেলায় দুর্বলতা দেখে বলেছিলেন ‘ওকে দিয়ে হবে না। নিয়ে যান। পড়াশোনায় মনোযোগ দেন’—তখন মুত্যলাই নীতীশকে ৩০ কিলোমিটার দূরের মাঠে নিয়ে যেতে শুরু করেন অনুশীলনের জন্য। উদ্দেশ্য একটাই—ছেলে ভালো জায়গায় অনুশীলন করুক, ছেলে ভালো খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে উঠুক।

ক্রিকেটপাগল ভারতে বাচ্চাদের এবং বাচ্চার বাবাদের ক্রিকেটার হয়ে ওঠা ও ক্রিকেটার বানানোর কাঠখড়ের গল্প নতুন কিছু নয়। অনেকেরই আছে। কিন্তু বাচ্চা নীতীশ ছিল সেই দলে, যার বড় ক্রিকেটার হয়ে ওঠা নিয়ে বড় আকাঙ্খা ছিল না। নীতীশের মুখেই শুনুন, ‘বাবা আমার জন্য চাকরি ছেড়েছিলেন। এক দিন দেখলাম উনি কাঁদছেন। টাকা নেই। তারপর মনে হলো, না, এভাবে চলতে পারে না। খেলাটা আমি মনের আনন্দে খেলে যেতে পারি না। আমাকে কিছু একটা করতে হবে। আমি ক্রিকেটে সিরিয়াস হলাম।’

বাবার কান্না দেখে ক্রিকেটে সিরিয়াস হওয়া নীতীশ আজ তারই সামনে মেলবোর্নে ব্যাট উঁচিয়ে বাবাকে কাঁদিয়েছেন আরেকবার। এই কান্না আনন্দের। এই কান্না গর্বের।


সর্বশেষ সংবাদ