সাকিবের বিকল্প কি মিরাজ হতে পারবেন?
বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের বিকল্প কে হতে পারেন? এ প্রশ্ন অবান্তর নয়। কেননা, সাকিব অধ্যায় শেষই বলা যায়। দেশের মানুষের সামনে বিদায়ী টেস্ট খেলতে চেয়েছিলেন এই টাইগার অলরাউন্ডার। তার আগ্রহে তাকে নিয়েই মিরপুর টেস্টের স্কোয়াড ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। শেষ টেস্ট খেলতে আমেরিকা থেকে দেশের উদ্দেশে নির্ধারিত সময়ে রওনাও করেছিলেন। তবে এরই মধ্যে দেশে ফেরা একপ্রকার বন্ধ হয়ে গেছে সাকিবের। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ক্রিকেটের অলরাউন্ডারের পতাকা কে বহন করবেন?
সাকিব আল হাসানের বিকল্প পাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়, এটি অনেকেই স্বীকার করেন। তবে কাজ চালানোর মতো বিকল্পের কথা উঠলে শুরুতেই মেহেদী হাসান মিরাজের নামটি মনে আসবে সবারই। মিরাজকে নিয়ে চমৎকার মূল্যায়ন করেছেন বাংলাদেশের সদ্য বিদায়ী কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। হাথুরুর কথা, ‘আমার কাছে মিরাজ গত পাঁচ বা ছয় বছরে বাংলাদেশের সবচেয়ে উন্নতি করা ক্রিকেটার। সত্যিকার অর্থেই তিনি ভবিষ্যতে সাকিবের ভূমিকা নেওয়ার জন্য তৈরি। তিনি তার ব্যাটিং তো বটেই, নিশ্চিত করেই যেটা তার বড় শক্তির জায়গা, সেই বোলিংয়েরও উন্নতি ঘটিয়েছেন। এখন তিনি নিজের ব্যাটিংয়ের উন্নতি ঘটিয়েছেন। তিনি অসাধারণ এককজন ফিল্ডারও।’
আরও পড়ুন: শেষ পর্যন্ত দেশে ফেরা হচ্ছে না সাকিবের
পরিসংখ্যান ও ক্রিকেটের প্রতি নিবেদন ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে অনেকেই একমত, সাকিব আল হাসানের পরে বাংলাদেশের সেরা অলরাউন্ডার হয়ে উঠছেন মেহেদী হাসান মিরাজই। অনেকে তাকে বলছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের পরবর্তী ‘পোস্টার বয়’। মিরাজ ধীরে ধীরে পরিণত অলরাউন্ডার হয়ে উঠেছেন, প্রমাণ করেছেন তিনিই হতে পারেন সাকিব পরবর্তী বাংলাদেশের সেরা বার্তাবাহক।
টেস্ট ও ওয়াডে ক্রিকেটে মেহেদী হাসান মিরাজ অনেকবার নিজের যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছেন, পালন করেছেন জেনুইন অলরাউন্ডারের ভূমিকা। বছর দু্ই আগে আইসিসির ওয়ানডে অলরাউন্ডার র্যাকিংয়ে তাঁর অবস্থান ছিল তৃতীয়। ভবিষ্যৎতে তিনি যদি বিশ্বের ‘নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার’ হয়ে যান, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
কিছুদিন আগে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দুই টেস্ট সিরিজেই দারুণ পারফরম্যান্স করেন মিরাজ। ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগেই রাখেন প্রতিভার স্বাক্ষর। পুরো সিরিজে ব্যাট হাতে ১৭৫ রান ও বল হাতে ১০ উইকেট নিয়ে দেশের বাইরে প্রথমবারের মতো সিরিজসেরা হয়েছেন তিনি। দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট শিকারের পাশাপাশি ব্যাট হাতে খেলেন ৭৮ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। ক্রিজে এসেই শুরু করেন পাকিস্তানি পেসারদের ওপার পাল্টা আক্রমণ। দ্রুত রান তুলে ইনিংসের গতিপথ অনেকটাই নিয়ে আসেন বাংলাদেশের দিকে।
আরও পড়ুন: মিরপুর টেস্টে সাকিবকে রাখার ব্যাখা বিসিবির
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচেও দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন মিরাজ। প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানের ৪৪৮ রানের রান পাহাড় টপকাতে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে সপ্তম উইকেটে গড়েন ১৯৬ রানের জুটি। মুশফিক (১৯১) ফিরলেও শেষ পর্যন্ত ডানহাতি এই ব্যাটারের ৭৭ রানের সুবাদে ৫৬৫ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। দল লিড পায় ১১৭ রানের। এরপর বল হাতে সাকিব আল হাসানকে নিয়ে পাকিস্তানের ব্যাটিং গুঁড়িয়ে দেন মিরাজ।
গেল ওয়ানডে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দারুণ অলরাউন্ডার পারফরম্যান্স করেছেন মিরাজ। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে তিনে নেমে ফিফটি হাঁকান, পাশাপাশি নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে নেন ৩ উইকেট। ফলে ম্যাচসেরার পুরস্কার অবধারিতভাবেই পেয়েছেন তিনি।
তারও আগে এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে দারুণ এক সেঞ্চুরি করেন মিরাজ। সেটি তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয়। মিরাজের প্রথম সেঞ্চুরিটি এসেছিল গত বছরের ডিসেম্বরে। মিরপুরে ভারতের বিপক্ষে ৬৯ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর আটে নেমে সেঞ্চুরি করেছিলেন মিরাজ। এটি বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসেই অন্যতম সেরা ইনিংস।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে মিরাজের সাফল্য এবারই প্রথম না। এর আগে ২০২২ সালে এই দলের বিপক্ষেই তিনি খেলেছেন ৮১ রানের ইনিংস। সেই ম্যাচে হারতে থাকা বাংলাদেশকে জয় এনে দেন মিরাজ এবং আফিফ। এছাড়া চলতি বছরের ওয়ানডে সিরিজেও মিরাজ খেলেছেন মান বাঁচানো ইনিংস। মুশফিকের সঙ্গে গড়েছিলেন ৮৭ রানের জুটি। বাংলাদেশ-আফগান লড়াইতে এটিও আছে সর্বোচ্চ জুটির তালিকায়।
গেল এশিয়া কাপে লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে ওপেনিংয়ে নামেন মিরাজ, ক্যারিয়ারে মাত্র দ্বিতীয়বারের মতো। নেমেই পান সেঞ্চুরি। দলের প্রয়োজনে ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং তিন বিভাগেই দিনকে দিন তিনি হয়ে উঠছেন গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার, হয়ে উঠছেন জেনুইন অলরাউন্ডার।
মূলত বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে মিরাজ ছিলেন জেনুইন অলরাউন্ডার। চার-পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতেন, অফ স্পিনেও ছিলেন বিশেষজ্ঞ বোলার। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবির্ভাবে বল হাতে চমকপ্রদ পারফরম্যান্সের পর তিনি হয়ে ওঠেন মূলত বোলার। পরে ব্যাটিংয়েও টুকটাক অবদান রাখতে শুরু করেন। তবে অলরাউন্ডার হয়ে ওঠার শুরু গত বছর দুয়েকে। ব্যাট হাতে মিরাজ এখন সব সংস্করণেই অনেক কার্যকর ও ধারাবাহিক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও তাকে অলরাউন্ডার এখন বলাই যায়।
যুব বিশ্বকাপ শুরুর আগে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা আইসিসি মিরাজকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল ভবিষ্যতের সাকিব আল হাসান হিসেবে। তখন ব্যাটে-বলে সেরা হয়ে প্রমাণও রাখেন তিনি। তারপর ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হয়ে উঠেছেন সাকিব আল হাসানের পর বাংলাদেশের সেরা অলরাউন্ডার।