রাতে মুখোমুখি আর্জেন্টিনা-পোল্যান্ড, মেসিকে নিয়ে আক্ষেপ ঘুচবে লেভানডফস্কির

লিওনেল মেসি ও রবার্ট লেভানডফস্কি
লিওনেল মেসি ও রবার্ট লেভানডফস্কি  © সংগৃহীত

কাতার বিশ্বকাপে একই গ্রুপে রয়েছে আর্জেন্টিনা-পোল্যান্ড। আজ (৩০ নভেম্বর) মুখোমুখি হবে এই দুই দল। লিওনেল মেসির দলের সঙ্গে ক্লাব ফুটবলে রবার্ট লেভানডফস্কির দেখা হলে দুজনেই মেতেছেন গোল উৎসবে। লিওনেল মেসি এবং রবার্ট লেভানডফস্কির দ্বৈরথ এই ম্যাচকে দিচ্ছে বাড়তি আকর্ষণ। পোলিশ তারকা নিজেও মুখিয়ে রয়েছেন বিশ্বকাপে মেসির বিরুদ্ধে খেলার জন্য। 

এখন দুজনেরই ঠিকানা বদলে গেছে। লেভানডফস্কি নিজেই এখন বার্সেলোনায়, আর ন্যু ক্যাম্প ছেড়ে মেসি চলে গেছেন পিএসজিতে। মেসি বার্সেলোনায় থাকার সময় বায়ার্নের জার্সিতে কাতালানদের বিপক্ষে ৩টা ম্যাচ খেলেছেন লেভানডফস্কি। এই ৩ ম্যাচের দুটি জয় বায়ার্নের, লেভানডফস্কির গোল ২। অন্যদিকে মেসিরও আছে ২ গোল, লেভানডফস্কির সাবেক ক্লাব বায়ার্নের বিপক্ষে।

তবে জাতীয় দলের খেলায় আজকের আগে কখনো মুখোমুখি হতে হয়নি এই দুজনকে। ২০১১ সালে সর্বশেষ পোল্যান্ডের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ খেলেছিল আর্জেন্টিনা, ২-১ গোলে পোলিশরা সেই ম্যাচে জিতলেও গোলদাতার তালিকায় লেভানডফস্কির নাম ছিল না। আর মেসি সেই ম্যাচে খেলেনইনি। 

১৯৭৮ বিশ্বকাপের পর আবার বিশ্বকাপে মুখোমুখি হচ্ছে আর্জেন্টিনা ও পোল্যান্ড, মুখোমুখি মেসি এবং লেভাও। দুজনেই বিশ্বকাপে নিজ নিজ দলের সর্বশেষ ম্যাচে গোল করেছেন। আজকের ম্যাচটা আর্জেন্টিনার জন্য দ্বিতীয় রাউন্ডের টিকিট নিশ্চিত করার, অন্যদিকে ৪ পয়েন্ট নিয়ে পোলিশরা শেষ ষোলোয় পা দিয়েই রেখেছে বলতে গেলে। তবুও পোল্যান্ড চাইবে জিতেই পরের রাউন্ডে যেতে, কারণ আর্জেন্টিনা জিতলে পোল্যান্ড হয়ে যাবে গ্রুপ রানার্সআপ, সেক্ষেত্রে নকআউটে সম্ভাব্য প্রথম প্রতিপক্ষ হবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স।

মেসি এবং লেভানডফস্কি দুজনেই বলতে গেলে একাই টানছেন নিজ নিজ দলকে। সৌদি আরবের বিপক্ষে পেনাল্টি থেকে আর্জেন্টিনার একমাত্র গোলটা করেছেন মেসি, আবার মেক্সিকোর বিপক্ষে গিয়েরমো ওচোয়া আটকে দিয়েছিলেন লেভানডফস্কির স্পটকিক। সৌদি আরবের বিপক্ষে ৮২ মিনিটে গোল করে অবশেষে বিশ্বকাপে পেয়েছেন প্রথম গোলের দেখা। বাছাই পর্বে লেভার গোলসংখ্যা ৯ আর মেসির গোলসংখ্যা ৭।

আরও পড়ুন: আর্জেন্টিনা না পারলেও ব্রাজিল যেন বিশ্বকাপ জিতে: লিওনেল স্কালোনি

মেসি যেমন সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের একজন, তেমনি লেভানডফস্কি সময়ের সেরা ফরোয়ার্ডদের একজন। আর্জেন্টিনার মতো বড় দলে সতীর্থ তারকাদের সাহচর্য পেয়েছেন মেসি, অন্যদিকে পোল্যান্ডের মতো ইউরোপের ছোট দেশের বড় তারকা লেভানডফস্কি অনেকটাই পোল্যান্ডের ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’। 

বিশ্বকাপ বা ইউরোর মতো বড় আসরের মূল পর্বেও খেলা হয় না পোল্যান্ডের। তাই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পোল্যান্ডের সাফল্য কম, তবে লেভা সেটা পুষিয়ে নিয়েছেন ক্লাব ফুটবলে। নামের পাশে ৬৩১টা গোল, ইউরোপের বড় কোনো লিগে এক ম্যাচে সবচেয়ে কম সময়ে ৫ গোলের রেকর্ড, বুন্দেসলিগার সর্বকালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা এমন অনেক ব্যক্তিগত রেকর্ড লেভানডফস্কির। বার্সেলোনায় এসে ১৪ ম্যাচে ১৩ গোল করে জানান দিয়েছেন লা লিগাতেও গোলের বন্যা বজায় থাকবে লেভার।

অন্যদিকে মেসিকে শুধু গোলের পাল্লায় মাপাই হবে অন্যায্য। মেসি বর্তমানের শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় তো বটেই, অনেকের মতে সর্বকালেরই শ্রেষ্ঠ ফুটবলার। গতি, ড্রিবলিং সব কিছুর পর গোলসংখ্যাতেও মেসি পিছিয়ে নেই। মেসির ক্যারিয়ারে গোলসংখ্যা হয়েছে ৭৮৮, বিশ্বকাপেই ৮ গোল; যেখানে লেভানডফস্কি মাত্র আগের ম্যাচেই পেয়েছেন প্রথম বিশ্বকাপ গোলের দেখা।

মেসি ও লেভা দুজনের সম্মিলিত গোলসংখ্যা হবে ১৫০০’র বেশি। ব্যক্তিগত অর্জনের তালিকা করলে সেটাও ১০০ ছাড়াবে নিশ্চিত। ফিফা দ্য বেস্ট , ব্যালন ডি’অরের মঞ্চে সেরা স্ট্রাইকারের পুরস্কার জার্ড মুলার ট্রফি, উয়েফার বর্ষসেরা এমন অনেক পুরস্কার পেয়েছেন লেভানডফস্কি। আর মেসির ট্রফি কেসে তো বিশ্বকাপ জয়ীর মেডেল ছাড়া ফুটবলের যত রকম পুরস্কার আছে তার সবই আছে। 

আরও পড়ুন: শেষ ১৬’তে টিকতে ৪৪ বছর পর মুখোমুখি আর্জেন্টিনা-পোল্যান্ড

তবে অতীতের সব অর্জন, সব প্রাপ্তি আর গৌরব ছাড়িয়ে আজ দুজনের লড়াইটা যেন ওয়েস্টার্ন ছবির দুই বন্দুকবাজের ডুয়েল। আর্জেন্টিনার হয়ে মাঠে ১১ জনই খেলবেন, কিন্তু গোলটা করতে হবে মেসিকেই। মেসির জাদুকরী স্পর্শ ছাড়া আর্জেন্টিনা দল ঘুমন্ত সিংহ। 

পোল্যান্ডের মতো ছোট দলের বড় তারকা লেভানডফস্কির জন্য এটাই সেরা সুযোগ, তারকা থেকে কিংবদন্তিহয়ে ওঠার। দুজনে মিলে পেশাদারি জীবনে দেড় হাজারের ওপর গোল করলেও আজ চাইবেন প্রতিপক্ষের চেয়ে একটা হলেও বেশি গোল করতে। প্রথম ম্যাচটা সৌদি আরবের কাছে হেরে সমীকরণটা কঠিন হয়ে উঠেছে আর্জেন্টিনার, পোল্যান্ডের সঙ্গে না জিতলে ছিটকে যেতে হবে বিশ্বকাপ থেকে। 

অন্যদিকে পরের রাউন্ডে ওঠাটা নিশ্চিত করার পাশাপাশি শেষ ষোলোয় ফ্রান্সকে এড়াতে চাইলে আর্জেন্টিনার সঙ্গে জিততেই হবে পোল্যান্ডকে। তাই মাঠে লড়াইটা ১১ বনাম ১১ হলেও শেষ পর্যন্ত দ্বৈরথটা মেসি আর লেভানডফস্কিরই। শুধু গোল করলেই হবে না, দলকে জেতাতেও যে হবে।

উল্লেখ্য, আর্জেন্টিনা দুবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থেকে, দুটি আন্তর্জাতিক ট্রফি জিতে এই বিশ্বকাপে এসেছে অন্যতম ফেবারিট হিসেবে। বিশ্বকাপে পোল্যান্ডের সেরা সাফল্য বলতে যেখানে ১৯৭৪ ও ১৯৮২ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলা। রবার্ট লেভানডফস্কির এই পোল্যান্ড দল অবশ্য পোলিশ ফুটবলের সেই স্বর্ণযুগকে একটু হলেও মনে করিয়ে দিচ্ছে। যদিও বিশ্বকাপ আর ইউরো মিলিয়ে প্রথমবারের মতো টানা চারটি বড় টুর্নামেন্টে কোয়ালিফাই করার পরও কেন যেন ‌‘সোনালি প্রজন্ম’ হিসেবে তেমন হাঁকডাক নেই।


সর্বশেষ সংবাদ