৯ দশকে ফুটবল বিশ্বকাপে বৈচিত্র্যময় যত বল

১৯৩০ ও ২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল
১৯৩০ ও ২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল  © সংগৃহীত

ফিফা বিশ্বকাপের ২২তম আসরের জন্য প্রস্তুত মরুর দেশ কাতার। আজ থেকেই শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে নামবে ফুটবলের পরাশক্তিরা। দীর্ঘ একমাসের লড়াই শেষে বিশ্বকাপ ঘরে তুলবে সেরা দলটি।

বিশ্ব ফুটবলের এই মহান আসরে যেমন আলোচনা চলে স্ট্রাইকার-মিডফিল্ডার-গোলকিপারদেরকে নিয়ে, তেমনই আলোচনা চলে পছন্দের দল, দলের কোচ-নতুন টেকনোলজি থেকে শুরু করে ফিফা থিম সং নিয়েও। তবে একটি জিনিস ছাড়া অন্য কোনো কিছুর অস্তিত্বই থাকে না। এত উন্মাদনাও যেন নেহায়েত অর্থহীন বলে মনে হয় ওই একটি জিনিসের কাছে। আর সেটি হচ্ছে বিশ্বকাপে ব্যবহৃত ফুটবল।

টি-মডেল’ ও ’টিয়েন্টো’, ১৯৩০

বিশ্বকাপে ফুটবলের বিবর্তন শুরু হয় ঠিক নয় দশক আগে ১৯৩০ সালের ৩০ জুলাই। ইতিহাসের প্রথম বিশ্বকাপ থেকেই। ফাইনাল ম্যাচে কে বল সরবরাহ করবে ঝগড়া বেঁধে যায় দুই দলের মধ্যে। পরে ফিফা কমিটির তাতে হস্তক্ষেপে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় খেলার প্রথমার্ধে ব্যবহার করা হবে আর্জেন্টিনার সরবরাহকৃত বল এবং দ্বিতীয়ার্ধে উরুগুয়ের।

কিন্তু ৪-২ গোলে ইতিহাসের প্রথম বিশ্বকাপের বিজয়ীর মুকুট পরে উরুগুয়ে। আর সেই বিজয়ী বলটি ছিল উরুগুয়ের। প্রথম বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচে ব্যবহৃত উরুগুয়ের বলটির নাম ছিল ’টি-মডেল’ ও আর্জেন্টিনার বলটির নাম ছিলো ’টিয়েন্টো’।

New Project - 2022-11-20T093300-222

টেলস্টার, ১৯৭০

১৯৩০ সালের সেই ফাইনালের পর আর দু’দেশীয় বল নিয়ে ঝগড়া লাগেনি বটে, কিন্তু ফিফার অফিসিয়াল ম্যাচ বল চালু করতে সময় লেগেছিল প্রায় ৪০ বছর। ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপ পর্যন্ত বল সরবরাহ করতো স্বাগতিক দেশ।

পরে ১৯৭০ সালে প্রথমবারের মতো অফিসিয়াল ম্যাচ বল সরবরাহ করতে শুরু করে ফিফা। সেই বিশ্বকাপেই মূলত ফুটবলের বিবর্তন শুরু করে। ১৯৬৬ সালের ইউরোপিয়ান কাপ ও অলিম্পিক গেমসে অ্যাডিডাসের বানানো বলের ব্যাপক সফলতার পর ফিফা মেক্সিকো বিশ্বকাপের ফুটবলের ডিজাইনের দায়িত্ব পায় অ্যাডিডাস।

সেই বিশ্বকাপ টুর্নামেন্ট প্রথমবারের মতো টেলিভিশনে সম্প্রচারের সিদ্ধান্ত নেয় ফিফা। তাই টিভিতেও যাতে পরিস্কার দেখা যায়, সেজন্য বলে ৩২টি সাদা-কালো প্যানেল জুড়ে দেয় অ্যাডিডাস। সেই বলটি যদিও প্রথম সাদা-কালো প্যানেলযুক্ত বল ছিল না, তবে এটিই প্রথম ফুটবল, যাতে কোনো ফিতা ছিল না।

New Project - 2022-11-20T093441-600

টেলস্টার ডুরলাস্ট, ১৯৭৪

১৯৭০ সালে টেলেস্টার বলটি এতই জনপ্রিয়তা পায় যে, ১৯৭৪ বিশ্বকাপে সেই একই বল ব্যবহার করা হয়, তবে সামান্য পরিবর্তন করে। বলটির নামকরণ করা হয় ‘টেলস্টার ডুরলাস্ট’। যদিও এই নামটি আগের বলেও লেখা ছিল। কিন্তু জার্মানির ভেজা আবহাওয়া থেকে রক্ষার জন্যে সেই বলে চামড়ার আবরণ দেওয়া হয়। বলটিতে দেওয়া এই ডুরলাস্টের মোটা চামড়ার আবরণের কারণে, তাতে ফুটে উঠে চিরচেনা চাকচিক্যের আভা।

আর এই সফলতার কারণেই অ্যাডিডাসকে নিজেদের অফিসিয়াল পার্টনার করে নেয় ফিফা। এছাড়া বলে অ্যাডিডাসের লোগো বসানোরও অনুমতি দেয়। সেই থেকেই একসাথে পথচলা ফিফা ও অ্যাডিডাসের।

New Project - 2022-11-20T100432-862

ট্যাঙ্গো, ১৯৭৮

ফিফা বিশ্বকাপে ব্যবহৃত সবচেয়ে জনপ্রিয় বলগুলোর একটি হচ্ছে ট্যাঙ্গো। কিন্তু এই বল বানানোর পর এর নতুন ডিজাইন নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিল অ্যাডিডাস। এমনকি ব্যাকআপ হিসেবে বেশকিছু ১৯৭৮ সালের টেলস্টারও বানিয়ে রাখে তারা।

সম্পূর্ণ সাদা বলের উপরে ত্রিভুজাকৃতির কালো প্যানেলের কারণে বলটি যখন ঘাসে গড়াত, তখন দেখতে বেশ আকর্ষণীয় লাগতো। টুর্নামেন্ট চলাকালীনই এই বলটি বিভিন্ন দোকানে বিপুল পরিমাণে বিক্রি হয় এবং খুব দ্রুত বিশ্বজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। এই বলটি স্মরণীয় হওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে, এটিই ছিল চামড়া দিয়ে তৈরি শেষ ফুটবল।

New Project - 2022-11-20T100623-096

ট্যাঙ্গো এসপানা, ১৯৮২

১৯৮২ সালে স্পেনে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে তেন নতুন কোন পরিবর্তন আনে নি অ্যাডিডাস। নতুন কোনো গবেষণা না করে ট্যাঙ্গোতে সামান্য পরিবর্তন এনে ‘ট্যাঙ্গো এসপানা’ নামে ছাড়ে অ্যাডিডাস। উন্নতি হিসেবে, বলে যাতে পানি না ঢুকে তাই এর স্তরগুলো একত্রে জুড়ে দিয়ে সেলাই করে দেওয়া হয়েছিল। যার ফলে এতে পূর্বের ‘ডুরলাস্ট’ আবরণের আর প্রয়োজন পড়েনি।

আর লক্ষ্যণীয় পরিবর্তন বলতে ছিল ‘ত্রিফিল’ নামে পরিচিত অ্যাডিডাসের সেই তিন পাতার লোগোটি।

New Project - 2022-11-20T100752-980

অ্যাজটেকা, ১৯৮৬

১৯৮৬ সালে আবার মেক্সিকোতে যে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় তাতে ব্যবহৃত বলটির নাম ছিল ‘দ্য অ্যাজটেকা’। এই বল তেমন একটা জনপ্রিয়তা পায়নি, তবে কয়েকটি কারণে বিশ্বকাপে ফুটবলের বিবর্তনে এটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, ১৯৭৮ ও ‘৮২ সালের বিশ্বকাপে ট্যাঙ্গো নামটি দু’বার ব্যবহার করলেও, ‘৮৬ সাল থেকে স্বাগতিক দেশের সাথে মিলিয়ে বলের নামকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এমনকি বলের প্যাটার্নগুলোতেও আসে লক্ষ্যণীয় পরিবর্তন। এর ত্রিভুজাকৃতি প্যাটার্নগুলো ডিজাইন করা হয় অ্যাজটেকদের ঐতিহাসিক স্থাপত্যশিল্পের অনুকরণে।

আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি হলো, ‘দ্য অ্যাজটেকা’ বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম সিনথেটিক বল। চামড়ার বলের সমস্যা ছিল, বলে লাথি মারার পর তা পূর্বের আকারে ফিরে যেতে সময় নিত। কিন্তু সিনথেটিক বলে ততটা সময় লাগতো না। এমনকি এই বলটি চামড়ার বল থেকে বেশ টেকসই ছিল।

New Project - 2022-11-20T100905-352

ইতরাস্কো ইউনিকো, ১৯৯০

এই বিশ্বকাপের বলেও স্বাগতিকদের ঐতিহ্যবাহী প্রতীকের সাথে মিল রাখার থিম রাখে অ্যাডিডাস। প্রাচীন ইতালির ইতরাস্কান সভ্যতাকে সম্মান জানিয়ে ১৯৯০ সালের ইতালি বিশ্বকাপ বলের নাম রাখা হয় ইতরাস্কো ইউনিকো। এই বলটির ডিজাইন দেখতে ট্যাঙ্গো বলটির মতোই ছিল। তবে ত্রিভুজাকৃতির কালো প্যাটার্নগুলো ছিল ইতরাস্কান সিংহের মাথা দিয়ে চমৎকারভাবে সজ্জিত।

New Project - 2022-11-20T100955-637

কুয়েস্ট্রা, ১৯৯৪

১৯৯৪ সালের আসরটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে প্রথম বিশ্বকাপ। এই বিশ্বকাপের বলে ছিল কিছু চোখে পড়ার মত পরিবর্তন। ফুটবলের কালো অংশটি দেখলে মনে হবে, আপনি মহাকাশের তারকারাজির দিকে তাকিয়ে আছেন। অ্যাডিডাসের কুয়েস্ট্রা নামের সেই বলটি ছিল ১৯৯৪ বিশ্বকাপের নতুন আকর্ষণ। 

নব্বইয়ের নিরস বিশ্বকাপের পর খেলায় উত্তেজনা আনার লক্ষ্যে চুরানব্বইয়ের বলটিতে বেশ কিছু পরিবর্তন আনে ফিফা। বলের বাইরের আবরণের মধ্যে ব্যবহার করা হয় পলেস্টারের ফোম, যাতে এটি কিছুটা নরম এবং নিয়ন্ত্রণ করতে সুবিধা হয়। দারুণ এই পরিবর্তনের কারণে কুয়েস্ট্রা পারফর্মেন্সে ছাড়িয়ে যায় আগের বলগুলোকে। এক কথায়, কুয়েস্ট্রার হাত ধরেই বিশ্বকাপের বলের বিপ্লব শুরু হয়।

সেই বছর বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে কোনো দলই ক্লিন-শিট রাখতে সক্ষম হয়নি। এমনকি পুরো আসরে শুধু প্রথম নক-আউট রাউন্ড সহ মাত্র তিনটি ম্যাচ গোলশূন্য ড্র হয়। ১৯৮২ সালের পর কোনো খেলায় এত গোলের বন্যা বয়ে যায়নি।

New Project - 2022-11-20T101057-586

ট্রিকালার, ১৯৯৮

১৯৭০ সাল থেকেই রঙিন টেলিভিশনে ফুটবল বিশ্বকাপ সম্প্রচার হতো। কিন্তু ১৯৯৮ সালের আগপর্যন্ত বলের রং সাদা-কালোই রয়ে গিয়েছিল। ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপ থেকেই সেই রীতি ভেঙে বেরিয়ে আসে ফিফা আর অ্যাডিডাস। সেই বছর ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের বলটিতে প্রথমবারের মতো দেখা যায় তিন রঙের সমাহার। এর ডিজাইন দেখতে ট্যাঙ্গোর মতোই ছিল, কিন্তু এর ত্রিভুজাকৃতির প্যাটার্নগুলোতে ব্যবহার করা হয় লাল, নীল ও সাদা রংয়ের ফ্লেয়ার; ঠিক ফ্রান্সের পতাকার মতো করে।

New Project - 2022-11-20T101407-007

ফেভারনোভা, ২০০২

২০০২ সালে কোরিয়া-জাপানের মাটিতে বিশ্বকাপ গড়ায় সম্পূর্ণ নতুন এক বল দিয়ে। এর আগে অ্যাডিডাস রীতিমত গবেষণা শুরু করেছিল বলের উপর। ট্যাঙ্গোর গতানুগতিক রৈখিক নকশার পরিবর্তে সেবারের বলের নকশাটি দেখতে ছিল বিচ্ছিন্ন ত্রিভুজের মতো। আর সোনালি রঙের বড় ত্রিভুজের মধ্যে ছিল লাল আর সবুজে মেশানো ছোট আরেকটি ত্রিভুজ।

বলের ডিজাইনে তো পরিবর্তন ছিলই, এমনকি অনেক খেলোয়াড় বলেছিলেন, অন্যান্য বলের তুলনায় ফেভারনোভা ছিল বেশ হালকা। যদিও ফিফা কর্তৃক আরোপিত ওজন সীমার কাছাকাছিই ছিল বলের ওজন। অ্যাডিডাসের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর ডেভিড বেকহামের বেশ পছন্দ হয়েছিল এই বলটি। তার কথায়, ফুটবলের ইতিহাসের সবচেয়ে নিখুঁত বল ছিল ফেভারনোভা। অন্যদিকে জিয়ানলুইগি বুফন আবার দ্বিমত পোষণ করে বলেছিলেন, “আরে, এই বলতো পাগলের মতো লাফায়!”

New Project - 2022-11-20T101523-479

টিমগাইস্ট, ২০০৬

১৯৭৪ এর পর আবারও জার্মানিতে বসে বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর। আর সেই বিশ্বকাপে ব্যবহৃত বলের নাম ছিল টিমগাইস্ট। টিমগাইস্ট শব্দের অর্থ হচ্ছে দলীয় চেতনা। অনেকটা আয়োজক জার্মানির ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের চেয়ে দলগত সামর্থ্যকে গুরুত্ব দেবার ঐতিহ্যবাহী নিয়মের প্রতি সম্মাননা স্বরূপ।

টিমগাইস্ট বলের সবচেয়ে লক্ষ্যণীয় পরিবর্তন ছিল এর ১৪ প্যানেলের ডিজাইন। আগের সব বিশ্বকাপ বলে প্যানেল ছিল ৩২টি, যার জন্য বলেগুলো ছিল কিছুটা অমসৃণ। তাই বলকে আরও সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তৈরি করতেই এই নতুন ডিজাইনের আবির্ভাব হয়। তবে বলটি খেলায় কতটুকু প্রভাব ফেলবে সেটি নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল অ্যাডিডাস। তাই বলটি উন্মোচনের আগে বিভিন্ন রকম যাচাইকরণ প্রক্রিয়া চালানো হয়।

কিন্তু তা-ও খুশি করা সম্ভব হয়নি সবাইকে। অনেক খেলোয়াড় অভিযোগ করেন, বলটি ছিল এয়ারবোর্ন (বাতাসবাহিত), অর্থাৎ বলে শট মারার পর সেটির গতিপথ অনুমান করা খুব কষ্টকর ছিল। প্রমাণ, সেই আসরের প্রথম গোলটি। কোস্টারিকার বিপক্ষে ফিলিপ লামের নেওয়া শটটি বাতাসে চমৎকারভাবে বাঁকিয়ে প্রবেশ করেছিল প্রতিপক্ষের জালে। সেই বিশ্বকাপের প্রতিটি ম্যাচে ব্যবহার করা বলগুলোতে সেদিনের ম্যাচের বিবরণী ছেপে দেওয়া হয়েছিল। এমনকি ফাইনাল ম্যাচের জন্যে আলাদা সোনালি রঙের বলও তৈরি করা হয়েছিল, নাম ‘টিমগাইস্ট বার্লিন’।

New Project - 2022-11-20T101714-391

জাবুলানি, ২০১০

২০১০ সালের বিশ্বকাপের আসরে ফুটবলে আসে নাটকীয় পরিবর্তন। বলকে আকর্ষণীয় রূপ দিতে বলের প্যানেল সংখ্যা ১৪ থেকে ৮-এ নামিয়ে নিয়ে আসে অ্যাডিডাস। অন্যান্য বল থেকে এই বল হয়ে উঠে আরও মসৃণভাবে গোলাকার। যার ফলস্বরূপ বলের গতিপথ হয়ে যায় আরও অনিশ্চিত।

গোলরক্ষকরা বলের বিরুদ্ধে রীতিমত বিদ্রোহ শুরু করে দিয়েছিলেন সেবারে। কুখ্যাতির কারণে জনপ্রিয়তা পাওয়া সে বলটির নাম ছিল ’জাবুলানি’। ব্রাজিলের গোলরক্ষক হুলিও জাবুলানিকে তুলনা করেছিলেন সুপার মার্কেটে বিক্রি হওয়া সস্তা বলের সাথে। অন্যদিকে ইকার ক্যাসিয়াস একে বলেছিলেন ‘ভয়ঙ্কর’। খেলার পাসিং ও শটে বেশ প্রভাব ফেলেছিল জাবুলানি। তাই একঘেঁয়ে গ্রুপ পর্বের পর বেশ সমালোচনার মুখে পড়তে হয় অ্যাডিডাসকে।

তবে অ্যাডিডাস দাবি করে, বিশ্বকাপের ছয় মাস আগে থেকেই বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই তারা জাবুলানিকে মাঠে ছেড়েছে। এছাড়া তাদের স্পনসর্ড খেলোয়াড় মাইকেল বালাক ও ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের প্রশংসার কথাও উল্লেখ করে তারা। শেষমেশ নাসা কর্তৃক একটি গবেষণা পর্যন্ত চালানো হয় জাবুলানির উপর। তাদের সেই গবেষণা থেকে বের হয় আসে, অন্যান্য যেকোনো ফুটবল থেকে জাবুলানির গতিবেগ ছিল সবচেয়ে বেশি, আর বলের অতিরিক্ত মসৃণতা ও কম সংখ্যক সিমই এর পেছনে প্রধান কারণ।

New Project - 2022-11-20T101827-932

ব্রাজুকা, ২০১৪

জাবুলানির দুঃস্বপ্নের পর এবার বেশ আটঘাট বেঁধেই বল তৈরিতে নামে অ্যাডিডাস। ব্রাজিল বিশ্বকাপের বলটির নাম ছিল ব্রাজুকা। ফিফা জানায়, ব্রাজুকা ব্রাজিলিয়ান জীবনযাত্রার জাতীয় গর্ব। এছাড়া বলটিতে ব্রাজিলিয়ান উইশ ব্যান্ডের অনুকরণে এর প্যানেলগুলোকে বহু রঙের ফিতার মতো রাঙানো হয়। এবারও বলের প্যানেল সংখ্যা কমিয়ে ছয়টি প্যানেল করা হয়।

অ্যাডিডাসের বিবৃতি অনুযায়ী, ২০১৪ সালের এই বলটি অন্যান্য যেকোনো বল থেকে অধিকবার পরীক্ষিত। বিশ্বকাপ শুরুর আগে বলটিকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের খেলোয়াড়দের কাছে পাঠানো হয় পরীক্ষার জন্য। এমনকি কয়েকটি লিগ ম্যাচে ব্যবহার করা হয়েছিল বলটির ছদ্মবেশী সংস্করণ। জাবুলানির তুলনায় খুব কমই সমালোচনা হয়েছিল ব্রাজুকার। যার ফলে টুর্নামেন্ট শেষে বুন্দেসলিগা ও মেজর লিগ সকারে ব্রাজুকার ব্যবহার শুরু হয়। কিন্তু ২০১৪ সালের জুলাই মাসের ৮ তারিখ সেই ব্রাজুকাই ব্রাজিলের গোলপোস্টে ৭ বার আঘাত।

New Project - 2022-11-20T101916-301

টেলস্টার ১৮, ২০১৮

২০১৮ বিশ্বকাপের নতুন বলের ঘোষণা দেয় ফিফা। ১৯৭০ এর বিশ্বকাপের কথা স্মরণ করেই এই বলের নাম রাখা হয়েছে টেলস্টার। বলটির ডিজাইনও করা হয়েছে সত্তরের সেই বলের মতো করেই। ১৯৯৪ সালের পর এই প্রথম বিশ্বকাপের মাঠে গড়াবে সাদাকালো ফুটবল।

শুধুমাত্র বলের নাম, বিশ্বকাপ ও অ্যাডিডাসের লোগোতে ব্যবহার করা হয়েছে সোনালি রং। সাদা পৃষ্ঠের কালো মোজাইকের মত দেখতে প্যাটার্নগুলো বলটিকে দিয়েছে ক্লাসিক এক রূপ। অন্যান্য বল থেকে টেলেস্টারের ভাগ্য কিছুটা খারাপ ছিলই বলা চলে। টুর্নামেন্টের প্রথম রাউন্ডেই  ফ্রান্স বনাম অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে ফেটে যায় দুটি বল। এছাড়া আর্জেন্টিনা বনাম আইসল্যান্ডের ম্যাচেও কয়েকটু বল চুপসে যায়।

New Project - 2022-11-20T102048-385

আল রেহলা, ২০২২

কাতার বিশ্বকাপের অফিশিয়াল বলের নাম ‘আল রেহলা’। আরবি ভাষার শব্দটিকে ইংরেজিতে বদলালে হচ্ছে, ‘দ্য জার্নি’। এই বলের বিশেষ বৈশিষ্ট্য কী, সেটিও তো প্রতি বিশ্বকাপের অফিশিয়াল বলকে ঘিরে একটা বড় জিজ্ঞাসার বিষয়।

আল রিহলাকে নিয়ে ফিফার ওয়েবসাইটে বলা হচ্ছে, বিশ্বকাপ ইতিহাসে বাতাসে সবচেয়ে দ্রুতগতির বল হবে এটি। ম্যাচে গতি আরও বাড়ানোর উদ্দেশ্যেই বলটির নকশা এভাবে করা হয়েছে। এ বলে রয়েছে ২০টি অংশের প্যানেল আকৃতির মানসম্পন্ন চামড়া, যেটিতে ম্যাক্রো ও মাইক্রো টেক্সচারের কারণে বলের আকৃতি ও বাতাসের বলের গতিপথ ঠিক থাকবে।

ফিফা জানাচ্ছে, তথ্যগত অনেক বিশ্লেষণের পর বানানো বলটাকে অ্যাডিডাসের পরীক্ষাগারে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। বাতাসের টানেলে ভাসিয়ে দেখা হয়েছে। মাঠে ফুটবলাররাও এই বলে এরই মধ্যে খেলে দেখেছেন। বলের ওপরের দিকের চামড়ার গুণগত মান ও প্যানেল আকৃতির কারণে খেলার দিক থেকে আল রিহলা পুরোপুরি নিখুঁত ও ভরসা করার মতো বলে জানাচ্ছে ফিফা। 

New Project - 2022-11-20T102144-238

এবারের আসরের তৈরী বল নিয়ে এ পর্যন্ত ১৪তম বারের মতো বিশ্বকাপের অফিসিয়াল ম্যাচ বল প্রস্তত করল অ্যাডিডাস।


সর্বশেষ সংবাদ