কাতার বিশ্বকাপ

দুই দশকের শিরোপাহীন ব্রাজিলের অপেক্ষা ফুরাবে এবার?

২০০২ বিশ্বকাপ শিরোপা জয় উদযাপন করছে ব্রাজিল ফুটবল দল
২০০২ বিশ্বকাপ শিরোপা জয় উদযাপন করছে ব্রাজিল ফুটবল দল  © সংগৃহীত

আগামী সপ্তাহে শুরু হচ্ছে ফুটবলের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক আসর কাতার বিশ্বকাপ-২০২২। সারা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকে চার বছর পর পর এই বিশ্ব আসর উপভোগ করার জন্যে। ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্ব লড়াইয়ের এই মঞ্চে ২০ বছর আগে সর্বশেষ ২০০২ সালে ১৭তম আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ব্রাজিল। ইতিহাসে সর্বোচ্চ পাঁচটি ট্রফি রয়েছে তাদের ঘরে। কিন্তু সেই ২০০২ সালের পর বিগত দুই দশক ধরে ট্রফিহীন সেলেসাওরা।

তথ্যমতে, ব্রাজিল প্রথম শিরোপা জিতেছিল ১৯৫৮ সালে। এরপর ১৯৬২, ১৯৭০, ১৯৯৪ ও ২০০২ সালে শিরোপা জিতেছিল। মোট ৫ বার ফুটবল বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল দলও এখন পর্যন্ত পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। তারাই একমাত্র দল যারা সবগুলো আসরেই অংশ নিয়েছে।

১৯৫৮ সালের সুইডেন বিশ্বকাপে প্রথম শিরোপার স্বাদ পায় সেলেসাওরা। ওই বিশ্বকাপে পরবর্তীতে সর্বকালের সেরা ফুটবলার পেলের দর্শন পায় ফুটবলবিশ্ব।

বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের জন্য গত কয়েকটি আসর কেটেছে চরম হতাশায়। দেশের মাটিতে ২০১৪ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে ৭-১ গোলে বিধ্বস্ত হয় ব্রাজিল। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে কোয়ার্টার-ফাইনালে বেলজিয়ামের বিপক্ষে বিদায় নেয় তারা। সাধারণত বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর কোচকে ছাঁটাই করে ব্রাজিল। তবে রাশিয়া আসরে দায়িত্বে থাকা তিতের ওপর ভরসা রাখে দেশটির ফুটবল কর্তৃপক্ষ।

গত চার বছরে ব্রাজিল দলে এসেছে বেশ কিছু পরিবর্তন। সাফল্যও এসেছে। যার মধ্যে রয়েছে ২০১৯ সালের কোপা আমেরিকা জয় এবং বিশ্বকাপের বাছাইয়ে দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলে শীর্ষে থেকে কাতারের টিকেট পাওয়া। তিতের দলের এই সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন তরুণরা।

তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য রিয়াল মাদ্রিদের দুই ফরোয়ার্ড ভিনিসিউস ও রদ্রিগো, বার্সেলোনার রাফিনিয়া, নিউক্যাসল ইউনাইটেডের ব্রুনো গিমারেস ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের আন্তোনি। ক্লাবের হয়েও দারুণভাবে নিজেদের মেলে ধরা এই খেলোয়াড়দের সঙ্গে নেইমার- ক্যাসেমিরোদের অভিজ্ঞতার মিশেলে বিশ্বকাপে দুর্দান্ত কিছুরই আশা করছে ভক্তরা। 

আরও পড়ুন: মেসি যখন পৃথিবীর আলো দেখেনি, তখন বিশ্বকাপ জিতেছিল আর্জেন্টিনা

সম্প্রতি ফিফাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে একইরকম প্রত্যাশা ব্যক্ত করলেন আলিসন। ৩০ বছর বয়সী এই গোলরক্ষক মনে করেন, বড় মঞ্চে পার্থক্য গড়ে দেওয়ার সামর্থ্য আছে এই তরুণদের।

কাতার বিশ্বকাপের আগে দারুণ ছন্দে আছেন নেইমার জুনিয়র। ক্যারিয়ারের তৃতীয় বিশ্বকাপ খেলতে নামছেন এই ব্রাজিল সুপারস্টার। বাছাইপর্বে নেইমার নিজে আট গোল করার পাশাপাশি সতীর্থদের দিয়েও করিয়েছেন আরো আট গোল। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে বিশ্বকাপে খেলেছেন তিনি। পিএসজির প্রায় প্রতিটি জয়েই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন এই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। 

ইতোমধ্যেই ফরাসি চ্যাম্পিয়ন পিএসজির হয়ে ১৯ ম্যাচে ১৫টি গোলও করে ফেলেছেন নেইমার। শুধু গোল নয়, সতীর্থ লিওনেল মেসি ও কিলিয়ান এমবাপ্পেকে দিয়ে করিয়েছেন বেশ কিছু গোল। যার কারণে ২০০২ সালে সবশেষ বিশ্বকাপজয়ী দলটিকে নিয়ে হেক্সা মিশনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত নেইমার।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে নেইমার বলেন, আমি শেষ বিশ্বকাপ মনে করেই খেলব। আমি এই নিয়ে বাবার সঙ্গে কথা বলব। আমাদের সবসময় ফুটবল নিয়ে কথা হয়। প্রতিটি ম্যাচই শেষ ম্যাচ মনে করে খেলব। কারণ কেউ জানে না কাল কী হবে। আমি পরের বিশ্বকাপে খেলব কি না, সে ব্যাপারে কোনো গ্যারান্টি দিতে পারছি না। আমি সত্যিই জানি না। হয়তো খেলতে পারি, আবার নাও পারি।

ব্রাজিলের জার্সিতে সবচেয়ে বেশি গোল করার নজির রয়েছে কিংবদন্তি পেলের। তার ঠিক পরেই রয়েছে নেইমার। পেলে করেছেন ৭৭ গোল। নেইমারের রয়েছে ৭৫ গোল। বিশ্বকাপে দুই গোল করে তিনি পেলেকে স্পর্শ করবেন। আর তিন গোল করলে  পেলেকে ছাপিয়ে ইতিহাস লিখবেন দেশের জার্সিতে।

২০০২ সালে নিজেদের পঞ্চম ও এখন পর্যন্ত শেষবারের মতো বিশ্বকাপ ঘরে তোলে রোনালদো, রিভালদো, রোনালদিনহো, বেবেতো, রবার্তো কার্লোস, কাফু সমৃদ্ধ ব্রাজিল। আগামী সপ্তাহে (২০ নভেম্বর) পর্দা উঠছে কাতার বিশ্বকাপের। অন্যান্য আসরের মতো এবারের আসরেও হট ফেভারিট র‌্যাংকিংয়ের এক নম্বর দল ব্রাজিল।

এই বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে অপ্রতিরোধ্য ছিল নেইমাররা। দক্ষিণ আমেরিকান অঞ্চলের বাছাইপর্বে টানা ১৭ ম্যাচে অপরাজিত থেকে সবার আগে বিশ্বকাপ নিশ্চিত করেছিল তারা। আসন্ন বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ব্রাজিল ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছে তাদের চূড়ান্ত স্কোয়ার্ড। ২০ বছর আগে ২০০২ সালে বিশ্বকাপ জেতা ব্রাজিল এবারের আসরে আগামী ২৪ নভেম্বর তাদের প্রথম ম্যাচ খেলবে সার্বিয়ার বিপক্ষে।  

ব্রাজিলের ম্যাচ সূচি: 

প্রথম ম্যাচ : ব্রাজিল বনাম সার্বিয়া (২৪ নভেম্বর, রাত ১টায়)

দ্বিতীয় ম্যাচ : ব্রাজিল বনাম সুইজারল্যান্ড (২৮ নভেম্বর, রাত ১টায়)

শেষ ম্যাচ : ব্রাজিল বনাম ক্যামেরুন (২ ডিসেম্বর, রাত ১টায়)


সর্বশেষ সংবাদ