যেসব কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানে শতভাগ ফেল

যেসব কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানে শতভাগ ফেল
যেসব কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানে শতভাগ ফেল  © ফাইল ছবি

চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় সারাদেশে ৫১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থীই পাস করেনি। অন্যদিকে শতভাগ পাস করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দুই হাজার ৯৬৮টি। এবার পরীক্ষায় অংশ নেওয়া মোট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৯ হাজার ৮৬১টি।

প্রতিষ্ঠানগুলোর ফল বিপর্যয়ের পেছনে নির্দিষ্ট বিষয়ে ফেল, শিক্ষকদের বেতন না হওয়া, নিয়মিত ক্লাস না নেওয়া, অনিয়ম, বোর্ডের ভুল, করোনা মহামারিসহ নানা কারণকে দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

নওগাঁর আত্রাই উপজেলার বড়াইকুড়ি আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল পাঁচজন। তারা সবাই অকৃতকার্য হয়েছে। মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে জানা গেছে, উপজেলার ৫২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ২ হাজার ৩২৫ জন পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে ১ হাজার ৮২৮ জন পাস করেছে।

বড়াইকুড়ি আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নবীর উদ্দীন বলেন, গত বছর ছয়জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাঁচজন পাস করেছিল। এবার পাঁচজন অংশ নিয়ে সবাই গণিতে ফেল করেছে। তারা ফল চ্যালেঞ্জ করবে। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফর রহমানের ভাষ্য, নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরের বজ্রনাথপুর দাখিল মাদ্রাসা থেকে দু’জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে কেউ পাস করতে পারেনি। দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ফরম পূরণ করেছিল আটজন। তবে পরীক্ষায় অংশ নেয় দু’জন। শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, করোনার প্রাদুর্ভাবের পর শিক্ষার মান কমতে থাকে। এমপিওভুক্ত না হওয়ায় শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাস নেন না। এ কারণে ফল খারাপ হয়েছে।

আরও পড়ুন: এসএসসির ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন শুরু, যেভাবে করবেন

মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার এজাজুল হক বলেন, প্রতিষ্ঠানে আট শিক্ষক থাকলেও কেউ বেতন পান না। তারা বিনা বেতনে পাঠদান করছেন। মানবিক কারণে তাদের ক্লাসের জন্য চাপও দেওয়া যায় না। মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত হলে শিক্ষার্থী ও শিক্ষার মান বাড়বে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক ও শিক্ষা আইসিটি) আহমেদ মাহবুব-উল-ইসলাম বলেন, ফল খারাপ হওয়ার বিষয়টি যাচাই করা হবে।

দিনাজপুরের খয়েরবাড়ী দাখিল মাদ্রাসা থেকে এবার কোনো শিক্ষার্থীই পাস করতে পারেনি। এ মাদ্রাসা থেকে ২৪ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল। সহকারী শিক্ষক লুৎফর রহমান বলেন, গত বছর ২৭ জন শিক্ষার্থীর  মধ্যে ২৪ জন পাস করেছিল। তবে এবার কেন কেউ পাস করতে পারল না, তা বোধগম্য নয়। বোর্ডের ভুলও হতে পারে। অভিভাবক নুর ইসলামের ভাষ্য, মাদ্রাসার ফল প্রতি বছর ভালো হয়। এ বছর কেন এমন হলো, তা বলতে পারছেন না।

দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক স ম আব্দুস সামাদ আজাদ বলেন, শূন্য পাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় সভায় পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে। হয়তো প্রতিষ্ঠানগুলো এমপিওভুক্ত নয় বা দু-একজন আছে, যারা ফেল করে। এটি সার্বিক ফলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

২০২৪ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৮৩ দশমিক ০৪ শতাংশ। গতবার (২০২৩ সালে) পাসের হার ছিল ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। অর্থাৎ গতবারের তুলনায় এবার পাসের হার বেড়েছে ২ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

এবার ছাত্রদের পাসের হার ৮১.৫৭ শতাংশ, ছাত্রীদের পাসের হার ৮৪.৪৭। নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৮৩.৭৭ শতাংশ।

প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৮৩ দশমিক ৯২ শতাংশ, বরিশালে ৮৯ দশমিক ১৩ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৮২ দশমিক ৮০ শতাংশ, কুমিল্লায় ৭৯ দশমিক ২৩ শতাংশ, দিনাজপুরে ৭৮ দশমিক ৪০ শতাংশ, রাজশাহীতে ৮৯ দশমিক ২৬ শতাংশ, সিলেটে ৭৩ দশমিক ০৪ শতাংশ, ময়মনসিংহ ৮৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ ও যশোরে ৯২ দশমিক ৩২ শতাংশ। আর মাদ্রাসা বোর্ডে পাসের হার ৭৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ এবং কারিগরিতে পাসের হার ৮১.৩৮ শতাংশ।

রোববার (১২ মে) সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর হাতে ২০২৪ সালের এসএসসির ফলাফলের সারসংক্ষেপ ও পরিসংখ্যান তুলে দেন ১১টি শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানরা। তবে শতভাগ ফেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো পাশের প্রতিষ্ঠানের সাথে একীভূত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

 

সর্বশেষ সংবাদ