সুইডেনে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করবেন যেভাবে

  © ফাইল ফটো

উত্তর ইউরোপের বৃহত্তম, ইউরোপীয় ইউনিয়নের তৃতীয় বৃহত্তম এবং অঞ্চল অনুসারে ইউরোপের পঞ্চম বৃহত্তম দেশ হচ্ছে সুইডেন। দেশটির জনসংখ্যা প্রায় দশ মিলিয়ন আর মাথাপিছু জিডিপি ৪৫ হাজার ইউরো।

সুইডেনের প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে ৫৪৩ বছরের পুরোনো উপসালা ইউনিভার্সিটি এবং ৩৫৪ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত লুন্ড ইউনিভার্সিটি। প্রধান বিদেশি ভাষা ইংরেজি হলেও সুইডেনের সরকারি ভাষা হচ্ছে সুইডিশ। বিদেশি ভাষা হিসেবে ইংরেজির সর্বাধিক ব্যবহারের দিক থেকে বিশ্বে নেদারল্যান্ডসের পরেই সুইডেনের অবস্থান। স্নাতকোত্তর স্তরের প্রায় বেশির ভাগ বিষয়ই ইংরেজিতে পড়ানো হয়।

তবে চাকরির ক্ষেত্রে এই চিত্র কিছুটা ভিন্ন। পড়াশোনা শেষে কারও যদি সুইডেনে দীর্ঘমেয়াদি কর্মজীবনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা বা নির্দিষ্ট পেশাগত লক্ষ্য থাকে, তবে সুইডিশ ভাষা জানা থাকলে উপকৃত হবেন।

সুইডিশ বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে মূলত অটাম এবং স্প্রিং সেমিস্টারে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করানো হয়। তবে আবেদনপ্রক্রিয়া, সাক্ষাৎকার, ভিসা (সুইডিশ রেসিডেন্স পারমিট) এবং ভর্তি–সংক্রান্ত বিভিন্ন ধাপে পর্যাপ্ত সময় লাগে বিধায় নন-ইউরোপিয়ান শিক্ষার্থীরা সাধারণত অটাম সেমিস্টারেই ভর্তি হয়। ১৬ অক্টোবর ২০২০ থেকে অটাম ২০২১ সেমিস্টারের প্রথম রাউন্ডের ভর্তিপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

অনলাইনে আবেদনের সময়সীমা আগামী ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। আবেদন ফি জমা দেওয়া এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপলোড করার সময়সীমা থাকে ১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ পর্যন্ত।

আবেদনকারী চারটি বিষয়ে আবেদন করতে পারেন

স্নাতকোত্তর পর্যায়ে একজন আবেদনকারী সর্বোচ্চ চারটি বিষয়ে আবেদন করতে পারেন। এটি হতে পারে এক বা একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। আবেদনকৃত বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ক্রমানুসারে সাজাতে হয়। পছন্দের তালিকায় থাকা প্রথম বিষয়ের জন্য নির্বাচিত হলে বাকি বিষয়গুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রতিটি বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া থাকে। তবে তথ্য প্রতিবছর হালনাগাদ করা হয়।

ভর্তির জন্য বিষয়ভিত্তিক বেশ কিছু শর্ত (স্নাতক ডিগ্রি এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে মোটিভেশন লেটার/স্টেটমেন্ট অব পারপাস, রেফারেন্স লেটারস, সিভি ইত্যাদি) পূরণের পাশাপাশি ইংরেজি ভাষাগত যোগ্যতা, যেমন ন্যূনতম আইইএলটিএস বা টোফেল স্কোরের বিষয়ে বলা থাকে।

সুইডিশ অ্যাডমিশন সাইটে দেশভিত্তিক কিছু আলাদা ভর্তির শর্ত উল্লেখ থাকে। আবেদনকারীর গুরুত্বসহকারে আবেদনের প্রতিটি অংশ দেখা উচিত। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আবেদনকারীকে তাঁর স্নাতকের ট্রান্সক্রিপ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সত্যায়িত করে সুইডেনে বাধ্যতামূলক কুরিয়ার করতে হয়। পাশাপাশি স্নাতক ডিগ্রির সনদ, ইংরেজি ভাষাগত দক্ষতা সনদ, পাসপোর্টের স্ক্যান করা কপিসহ বিষয়ভিত্তিক ভর্তি শর্তানুসারে অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র অ্যাডমিশন সাইটে তৈরি নিজস্ব প্রোফাইলে আপলোড করতে হয়।

বৃত্তি

সুইডেনে উচ্চশিক্ষার জন্য আছে বিভিন্ন বৃত্তির ব্যবস্থা। এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সুইডিশ গ্লোবাল প্রফেশনাল স্কলারশিপ, যা সংক্ষেপে এসআই স্কলারশিপ নামে পরিচিত। এটি মূলত সুইডিশ ইনস্টিটিউট পরিচালিত সুইডিশ সরকারের শিক্ষাবৃত্তি। এ শিক্ষাবৃত্তি কর্মসূচির প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে জাতিসংঘের বৈশ্বিক লক্ষ্যসমূহে (অ্যাজেন্ডা ২০৩০) অবদান রাখার জন্য ভবিষ্যৎ নেতাদের বিকাশ সাধন।

এ বছর বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনুন্নত/উন্নয়নশীল দেশের ছাত্রছাত্রীরা এসআই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবেদনপ্রক্রিয়া চলবে ২০২১ সালের ৮-১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ফলাফল ঘোষণা করা হবে ২০২১ সালের ২৮ এপ্রিল।

এসআই স্কলারশিপ ছাড়াও সুইডেনের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় নন-ইউরোপিয়ান ছাত্রছাত্রীদের আলাদাভাবে বৃত্তি দিয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এ বৃত্তি মূলত ২৫-১০০% টিউশন ফি বহন করে থাকে। এ ছাড়া প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন এবং স্টুডেন্ট নেশন্স বিভিন্ন শিক্ষাবৃত্তি ও আর্থিক অনুদান দিয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তি পেলে বিশাল অঙ্কের টিউশন ফি দেওয়া লাগবে না শিক্ষার্থীদের।

সুইডেনের উচ্চশিক্ষা, শিক্ষাবৃত্তি, ভিসা ও বিভিন্ন ব্যবহারিক তথ্য জানতে নিচের ওয়েব লিংকগুলো অনুসরণ করতে পারেন শিক্ষার্থীরা—

১) ভর্তি (https://www.universityadmissions.se/intl/start)

২) এসআই স্কলারশিপ (https://si.se/en/apply/scholarships/)

৩) ভিসা/রেসিডেন্স পারমিট (https://www.migrationsverket.se/)


সর্বশেষ সংবাদ