এইচএসসির পর বিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি কীভাবে নেবেন?
- আফরিন সুলতানা ও সাগর হোসেন
- প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ১১:১২ AM , আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১৬ PM
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার বেহাল দশায় পড়াশোনা জিনিসটার প্রায় সিন্দুকে ওঠার উপক্রম হয়েছে। উচ্চমাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলের শিক্ষার্থীরা যেখানে পড়াশোনা ছাড়া সবকিছুই করছেন নিয়মমাফিক ভাবে, সেখানে এখনো অগণিত শিক্ষার্থী তৃষ্ণার্ত রয়েছেন উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য। বর্তমানে বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ দেশের সিংহভাগ শিক্ষার্থীর স্বপ্ন। স্বপ্ন হবে না কেন? দেশ থেকে বিদেশে উচ্চশিক্ষা কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনের সহজ পথ।
এইচএসসি পাশের পর দেশের বিভিন্ন পাবলিক, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় অনেক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থাকে বিদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের। প্রতিবছর তাই হাজারো শিক্ষার্থী বিদেশে পাড়ি জমান শুধুমাত্র উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে।উচ্চশিক্ষা গ্রহণে অধিকাংশ সময় অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা থাকলেও এইচএসসি পাশের পরেই মূলত বিদেশে যাওয়ার সর্বোত্তম সময়।
তবে এজন্য প্রয়োজন বিশেষ কিছু প্রস্তুতি যা আপনাকে অন্যদের থেকে এগিয়ে রাখবে এবং অল্প বয়সেই বিদেশে পাড়ি জমাতে সাহস যোগাবে। এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পছন্দের তালিকায় যেমন বাংলাদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, তেমনি অনেকে বিদেশে পড়তে যাবার কথাও ভাবছেন।
এইচএসসি পাস করার পর অনেকেই এই বিষয়গুলো জানেন না বলেই বাইরে আবেদন করতে সাহস পান না। কিন্তু আপনি যদি অনেক দূর যেতে চান, তাহলে বর্তমান যুগে বাইরে পড়াশোনা এইচএসসির পরই শুরু করা উচিত। উচ্চমাধ্যমিকের পর বাইরে পড়াশোনার ক্ষেত্রে প্রস্তুতিটি মূলত ডকুমেন্টগুলো রেডি করার প্রস্তুতি। বাইরে আবেদন করতে হলে অনেক রকমের ডকুমেন্টের দরকার পরে। আবার সব ডকুমেন্টের দরকার সব দেশে সমান নয়। কিছু কিছু দেশে আবেদনের ক্ষেত্রে কিছু বাড়তি ডকুমেন্টেরও দরকার পরে।
যেসব প্রস্তুতি দরকার হবে
ভাষা দক্ষতার প্রমাণ: যেমন আইইএলটিএস, টোফেল, স্যাট অথবা জিআরই। একেকটি দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে এসব চাহিদার পার্থক্য থাকতে পারে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অস্ট্রেলিয়া,যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় দেশগুলোর বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইইএলটিএসে ব্যান্ড স্কোর অন্তত ৬ থাকা দরকার। তবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এর চেয়ে বেশিও চাইতে পারে। তবে আমেরিকাসহ আরো দেশের কোন কোন সাবজেক্টে টোফেল, স্যাট বা জিআরই দরকার হতে পারে। জার্মানি, ফ্রান্স, সুইডেন, নরওয়ের মতো ইউরোপীয় দেশে পড়তে গেলে যেমন ইংরেজিতে পড়াশোনা করার সুযোগ রয়েছে, আবার অনেক ক্ষেত্রে সেই দেশের ভাষার দক্ষতা দরকার হতে পারে। বিশেষ করে জার্মানির মতো দেশে বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ নিতে হলে জার্মান ভাষা জানতে হবে।
পড়াশোনার ফলাফল: বাংলাদেশে পড়াশোনার ফলাফলের ওপর ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের বা বিষয়ে ভর্তির ব্যাপারটিও অনেক সময় নির্ভর করে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ইমেইল করেও পরামর্শ চাওয়া যেতে পারে। অনেক সময় ইংরেজি দক্ষতার ব্যান্ডস্কোরও ভর্তি বা বিষয় পাওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে।
১.পাসপোর্ট
বাইরে পড়াশোনা করতে যাবেন এই চিন্তা আপনার মাথায় আসার সাথে সাথেই আপনাকে দেখতে হবে আপনার পাসপোর্ট করা আছে কিনা। বাইরে আবেদনের ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই আবেদন করার কিছু সময় আগে থেকেই পাসপোর্ট করে রাখতে হবে যাতে করে আবেদনের ক্ষেত্রে আপনার বেশি তাড়াহুড়া করতে না হয়। আবার বেশি সময় হাতে রেখে পাসপোর্ট করলে আপনি পাসপোর্ট বানানোর ক্ষেত্রে বাড়তি খরচও কিছুটা কমাতে পারবেন।
২. ইংরেজি দক্ষতা যাচাই
বিদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে আপনাকে যে জিনিসটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তা হল ভাষা-গত দক্ষতা যাচাই করা। প্রত্যেকটি দেশে ভিন্ন ভিন্ন ভাষা রয়েছে। আপনি যখন যে দেশে যাবেন তখন আপনাকে সে ভাষার দক্ষতা যাচাই স্কোরের উপর ভিত্তি করে আপনি আপনার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারশিপ কিংবা ভিসার জন্য নির্বাচিত হবেন। তাহলে বুঝতেই পারছেন যে ভাষা-গত দক্ষতা যাচাই করা ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আপনার যদি টার্গেট থাকে ইউরোপ, আমেরিকা,কানাডা যাওয়ার তাহলে আপনাকে অবশ্যই ইংরেজি দক্ষতা যাচাই পরীক্ষার জন্য ভালো স্কোর অর্জন করতে হবে। বর্তমানে সারা-বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ইংরেজি দক্ষতা যাচাইয়ের পরীক্ষার নাম হল IELTS, GRE, GMAT, TOFEL ইত্যাদি। উপযুক্ত পরীক্ষার স্কোর দিয়ে আপনার স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন করতে হবে। তাই স্বপ্ন যদি থাকে বিদেশে উচ্চশিক্ষার তাহলে ভাষা দক্ষতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার জন্য প্রস্তুতি নিন এখনই।
৩. টার্গেট ঠিক রাখা:
অমুক এইচএসসি-র পর বিদেশে পড়তে যাচ্ছে দেখে আপনারও যেতে হবে, ব্যাপারটা এমন না। জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে আমরা অনেকেই বাইরে যেতে চাই ৷ কিন্তু এটা যেহেতু জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত, সেহেতু এটা নিতে হবে অনেক ভেবেচিন্তে। আপনার বয়স, শিক্ষাগত যোগ্যতা, অর্থ, পরিবারের সম্মতিসহ সবকিছুই বিবেচনায় রাখতে হবে।
৪. সিজিপিএ
বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনের শিক্ষার মূল্যায়ন যাচাই কারক হিসেবে পরিচিত হল সিজিপিএ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রায়শই বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে উচ্চ সিজিপিএ এর কথা বলে। তবে হ্যাঁ ভালো স্কলারশিপ পেতে হলে আপনাকে আপনার রেজাল্ট এর দিকে নজর দিতে হবে। তাই অন্তত ৩.৫০ রাখার চেষ্টা করুন। কারণ রেজাল্ট ভালো হলে স্কলারশিপ পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় অনেকাংশে।
৫.ক্রেডিট ট্রান্সফার
দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো একটি কোর্সে কিছুদিন পড়াশোনা করেছেন বা করছেন। এখন আপনি ওই কোর্সই বিদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আগ্রহী। সেই ক্ষেত্রে দেশে করা কোর্সটির ক্রেডিট গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অব্যাহতি পত্র দাবি করতে পারেন। আপনার কোর্সটির জন্য কতটুকু ক্রেডিট পাবেন তা নির্ধারণ করবে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ। এরজন্য যা যা লাগবে:
একাডেমিক সার্টিফিকেট, ট্রান্সক্রিপ্ট, প্রত্যয়নপত্র।
কোর্সের আউটলাইন ও পাঠ্যতালিকা।
কোর্স লেভেল সম্পর্কিত তথ্যাদি।
কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় অনুষদ কর্তৃক সুপারিশনামা।
কোর্স অ্যাসেসমেন্টের পদ্ধতি।
গ্রেডিং সিস্টেম সংক্রান্ত তথ্য।
কোর্সের মেয়াদ, লেকচার-ঘণ্টা, ল্যাবরেটরিতে কাজের ঘণ্টা, ফিল্ডওয়ার্ক ইত্যাদি।
পরীক্ষা, রচনা, প্রজেক্ট ওয়ার্ক ইত্যাদি।
৬. কোথায় যেতে চাই: আমাদের দেশ থেকে মূলত দুই শ্রেণীর মানুষ বাইরে পড়াশোনা করতে যান— এক শ্রেণী যেতে চান ফুল বৃত্তি নিয়ে এবং অন্য শ্রেণী যেতে চান নিজের খরচে। এছাড়াও আরো একটি শ্রেণী রয়েছে যারা ইদানিং কম খরচে বাইরে থেকে ভালো পড়াশোনার সুযোগ খুঁজে থাকেন।
যারা ফুল বৃত্তি নিয়ে HSC এর পর দেশের বাইরে পড়তে যান,তারা নিচের বৃত্তিগুলো দেখতে পারেন.
* ইন্ডিয়ান গভর্নমেন্ট বৃত্তি
* ইন্দোনেশিয়া গভর্নমেন্ট বৃত্তি
* মিশর গভর্নমেন্ট বৃত্তি
* রাশিয়ান গভর্নমেন্ট বৃত্তি
* আজেরবাইজান গভর্নমেন্ট বৃত্তি
* চাইনিজ গভর্নমেন্ট বৃত্তি
*জাপান গভর্নমেন্ট বৃত্তি
* রোমানিয়ান গভর্নমেন্ট বৃত্তি
* হাঙ্গেরিয়ান গভর্নমেন্ট বৃত্তি
* ব্রুনেই দারুসসালাম গভর্নমেন্ট বৃত্তি
* তুর্কিশ গভর্নমেন্ট বৃত্তি
বৃত্তিগুলোর আবেদনের সাধারণ সময়কাল ডিসেম্বর থেকে মে এর মধ্যে প্রতি বছর। তাই এইচএসসি পাস করার পর আপনি হাতে বেশকিছু দিন সময় পাবেন। আবার যারা কম খরচে ভালো মানের লেখাপড়া করতে চান তারা মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া পার্লিস এবং ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া সারাওয়াক দেখতে পারেন। ব্যবসায় এবং মানবিকের বিষয়গুলোতে পড়াশোনা করতে আপনার টিউশন ফী এবং হোস্টেল ফী বাবদ মোট ৭-১০ লক্ষ টাকা এবং ইঞ্জিনিয়ারিং এর বিষয়গুলোতে পড়াশোনা করতে ১০-১৪ লক্ষ টাকার মতো খরচ হতে পারে। এই দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ই কিউএস টপ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০ এর ৮০০ এর মধ্যে রয়েছে।
৭. কি কি পরীক্ষা দেয়া লাগবে
উচ্চমাধ্যমিকের পরে বাইরে পড়াশোনার ক্ষেত্রে মনে হয় সবচাইতে বেশি দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থাকে এই বিষয়টি নিয়ে। কেবল আমেরিকার ক্ষেত্রে স্যাট লাগে তাও ক্ষেত্র বিশেষে। এছাড়া পৃথিবীর বাকি দেশগুলোতে আপনি কেবল IELTS পরীক্ষা দিয়েই আবেদন করতে পারবেন। আবার কিছু কিছু দেশ যেমন চীন, জাপান, কোরিয়া, রাশিয়া, তাইওয়ান এই দেশগুলোতে আবেদনের ক্ষেত্রে আপনাকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের নিজেদের ভাষায় পড়াশোনা করতে হবে। তাই এই সব ক্ষেত্রে IELTS এর দরকার নেই।
কিন্তু মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, হংকং ইত্যাদি দেশগুলোতে আবেদনের ক্ষেত্রে আবার IELTS এর দরকার রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে আবার একটি অপসন রয়েছে এমন আপনি যদি ওই সব দেশে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজেদের ইংলিশ কোর্স করেন আপনার পড়াশোনার পাশাপাশি কিংবা তার আগে সেই ক্ষেত্রে IELTS স্কোর লাগে না আবেদন করতে। তবে এই ইংলিশ কোর্স বাবদ বেশকিছু টাকা খরচ হবে আপনার।
৮. প্রফেশনাল রাইটিং
আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের একটি ভীতি হলো এক্যাডেমিক রাইটিং অথবা প্রফেশনাল রাইটিং।বিভিন্ন ভার্সিটিতে বৃত্তির জন্য আবেদন করার পূর্বে আপনার এসওপি,কিছু রিটেন স্যাম্পল ওদের দিতে হয় যেমন আপনি যে স্টেটমেন্ট অফ পারপাস টা দিবেন, সেটাতেও আপনার অনেক এক্যাডেমিক রাইটিং লিখতে হবে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের রিটেন স্যাম্পল,রিটেন এসএ দেওয়ার দরকার হয়ে থাকে, এবং এই রিটেন স্যাম্পল গুলোই একাডেমিক হয় যা অনেক বেশি প্রফেশনাল।তাই এর ভালো প্র্যাকটিস থাকা অনেক জরুরী।
৯. কিভাবে ডকুমেন্ট পাঠাবো
বাইরে আবেদনগুলোগুলো বেশিরভাগ অনলাইন নির্ভর কিন্তু তারপরও অনলাইনে আবেদন করে আবার সেই আবেদনের প্রিন্ট কপি এবং সাথে আরো কিছু ডকুমেন্ট (সাধারণত পয়েন্ট ৪ এ বর্ণিত) এক করে আপনাকে বাইরে পাঠাতে হবে অনেক ক্ষেত্রে। যারা ঢাকার বাইরে থাকেন তাদের জন্যও এই কুরিয়ার বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। আপনি ঢাকার বাইরে থেকে যে কোনো ভালো কুরিয়ার যোগে আপনার ডকুমেন্টগুলো এদের কাছে পাঠিয়ে দিবেন এবং চার্জ বিকাশ করে দিয়ে দিবেন।
কুরিয়ারের মাধ্যমে প্রেরণ করতে হলে আপনার খরচ পড়বে-
* এশিয়ার দেশগুলোর ক্ষেত্রে ১৩০০ টাকা
* ইউরোপের দেশগুলোর ক্ষেত্রে ১৪০০ টাকা
* আমেরিকা, কানাডা এবং মেক্সিকোর ক্ষেত্রে ১৫০০ টাকা
আবার ডেলিভারি সময় লাগবে -
* এশিয়ার দেশগুলোর ক্ষেত্রে ২-৩ দিন (ওয়ার্কিং ডে)
* ইউরোপ এবং আমেরিকার ক্ষেত্রে ৪-৫ দিন (ওয়ার্কিং ডে)
কুরিয়ারটির জন্য যোগাযোগ: মিস্টার আরিফুর রহমান, ডেপুটি ম্যানেজার, কনভেয়র ইউনিএক্সপ্রেস মোবাইল : ০১৬৮৪-৬৬৪৭৬৬
১০. সর্বমোট কত খরচ পড়তে পারে
বাইরে পড়াশোনার ক্ষেত্রে আপনি যদি নিজের টাকায় পড়াশোনা করতে যান তাহলে আপনার খরচ একদম কম করে পড়বে ৬.৫ থেকে ৭.৫ লক্ষ টাকা ব্যবসায় শিক্ষা শাখা এবং মানবিকের বিষয়গুলো নিয়ে পড়াশোনা করতে আর ১০ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা যাবে বিজ্ঞানের বিষয়গুলো পড়াশোনা করতে। তবে এই খরচের পরিমান মালয়েশিয়া এবং চীন হিসেব করে দেয়া। অন্য দেশগুলোর ক্ষেত্রে এই খরচ আরো বাড়ার সম্ভাবনা আরো বেশি বিশেষ করে ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি দেশগুলোতে। আবার যারা পড়াশোনা করবেন ফুল বৃত্তি নিয়ে তাদের ক্ষেত্রে ক্ষেত্র বিশেষে বিমান ভাড়া এবং কিছু হাত খরচ লাগবে তবে সব মিলে এই পরিমান ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজারের উপর পড়বে না বলে আশা করা যায়।
১১. রিকোমেন্ডেশন
বিদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে লেটার অফ রিকমেন্ডেশনকে বেশ গুরুত্বের সাথে দেখা হয়। মূলত আপনার সম্পর্কে জানে, আপনাকে ভালো চিনে এমন ২ থেকে ৩ জন ব্যক্তির কাছ থেকে রিকোমেন্ডেশন আপনার প্রয়োজন হবে। তবে অবশ্যইপরিবারের কোন ব্যক্তির কাছ থেকে আপনি রিকমেন্ডেশন না চেয়ে আপনার কোন শিক্ষক, কোন মেন্টর, কোথাও জব করলে সেক্ষেত্রে উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গের কাছ থেকে আপনি রিকমেন্ডেশন লেটার নিতে পারেন। কারণ কারা রিকমেন্ডেশন দিচ্ছে তা মূল ব্যাপার নয়। বরং কি লিখছে সেটা মূল ব্যাপার।
১২. কিভাবে স্কলারশিপের খোজ পাবেন
একেক দেশের বৃত্তির জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতার ধরন একেকরকম। তাই প্রথমেই জেনে নিতে হবে কোন দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আপনি আবেদন করতে চান। প্রথমেই খোজ করতে হবে বিভিন্ন দেশের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এ। নানা দেশের বাংলাদেশের দূতাবাসেও বৃত্তির সব তথ্য দেয়া থাকে।দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করেও ওই দেশের রাষ্ট্রীয় বৃত্তি গুলো সম্পর্কে ধারণা নিতে পারবেন। আমাদের দেশের মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক এর ওয়েবসাইটেও থাকে বিভিন্ন দেশের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তির তথ্যসমূহ।
বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে কি ধরণের সুবিধা রয়েছে?
বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থী ঠিক কি ধরণের সুযোগ সুবিধা অর্জন করতে পারবেন চলুন জেনে নেওয়া যাক সে সম্পর্কে।
* আত্ননির্ভরশীলতা
বিদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে আপনি পরিপূর্ণভাবে আত্ননির্ভরশীলতা অর্জনের সুযোগ পাবেন। পূর্বে যেখানে আপনি পরিবারের উপর নির্ভরশীল থাকতেন, এখন আপনাকে আপনার জীবনের সকল ধরণের সিদ্ধান্ত আপনাকে নিতে হবে। বিদেশে কোন ধরণের হেল্পিং হ্যান্ড নেই বিধায় আপনার ব্যক্তিগত কাজগুলো আপনাকে করতে হবে।
* আধুনিক শিক্ষা অর্জন
বিদেশে উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে আপনি উন্নত এবং আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে পরিচিত হবার সুযোগ পাবেন। দেশের পুঁথিগত বিদ্যা থেকে আপনি গবেষণালব্ধ শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে সমন্বয় সাধন করতে পারবেন। নতুন পরিবেশ, নতুন জীবনযাত্রার সাথে আপনি বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হবার পরিপূর্ণ সুযোগ পাবেন।
* ক্যারিয়ার
দেশের বাজারে বিদেশে উচ্চশিক্ষার কদর দিন দিন বেড়েই চলেছে। বড় বড় প্রতিষ্ঠানসমূহে আপনি বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ফলে খুব সহজে নিজের পছন্দের পজিশনে চাকরি করতে পারছেন। পাশাপাশি একটি ডিগ্রী পাচ্ছেন যা আপনার বিদেশের মাটিতেও ক্যারিয়ার বুস্ট করতে বেশ সাহায্য করবে।
* পার্ট টাইম চাকরি
বিদেশে উচ্চশিক্ষার সবচেয়ে বড় সুবিধা হল পার্ট টাইম চাকরি। আপনি বিদেশে উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে পড়াশোনার পাশাপাশি নিজে আয় করতে পারবেন। বেশিরভাগ দেশে শিক্ষার্থীদের জন্য ওয়ার্ক পারমিট রয়েছে। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি বাড়তি আয়ের সুযোগ পেতে শিক্ষার্থীরা পাড়ি জমাচ্ছে বিদেশে।
* একটি নিশ্চিত ভবিষ্যৎ
বর্তমান বাজারে বিদেশে উচ্চশিক্ষার চাহিদা রয়েছে তুঙ্গে। আপনি যদি একটি ভালো মানের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জন করতে পারেন তাহলে আপনাকে চাকরি খুঁজতে হৰে না বরং চাকরি আপনাকে খুঁজে নিবে। তাই একটি ভালো মানের চাকরি, উন্নত জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে চাইলে বিদেশে উচ্চশিক্ষায় আপনাকে স্বাগতম।
শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করার জন্য যেসব দেশে যেতে চান, তার কয়েকটি দেশের ভর্তির পদ্ধতি এখানে বর্ণনা করা হলো।
* যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা: যুক্তরাজ্যে যারা স্নাতক বা আন্ডারগ্রাজুয়েট পর্যায়ে পড়তে যেতে চান, তারা UCAS ওয়েবসাইটের গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি সংক্রান্ত সকল কাজ করতে পারেন। কারণ এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি তথ্য, আবেদনের প্রক্রিয়াসহ সব তথ্য পাওয়া যাবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়েও সেখানকার ভর্তি তথ্য, খরচ, আবেদনের প্রক্রিয়া ও অনলাইনে আবেদন করা যায়।
* যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ শিক্ষা: আমেরিকার বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে। ঢাকায় আমেরিকান সেন্টারে গিয়ে এ ব্যাপারে পরামর্শ ও তথ্য সহায়তা নেয়া যেতে পারে।শিক্ষা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ওয়েবসাইট ‘এডুকেশনইউএসএ’ দেশটিতে ভর্তি, বিশ্ববিদ্যালয়, ডেডলাইন, প্রক্রিয়া সম্পর্কে সকল তথ্য পাওয়া যাবে।আমেরিকান সেন্টারের ওয়েবসাইটে পড়াশোনার ব্যাপারে পাঁচটি গাইডলাইন দেয়া রয়েছে।
* কানাডা: কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হলে আইইএলটিএস অবশ্যই থাকতে হবে।এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়েবসাইট ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয় ওয়েবসাইটে ভর্তি তথ্য, আবেদনের প্রক্রিয়াসহ সকল তথ্য বিস্তারিতভাবে থাকে।
জার্মানি: বিদেশে উচ্চশিক্ষা কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনের সহজ পথ। তেমনই একটি দেশ জার্মানি। কেন জার্মানি আসবেন? একেক জনের কাছে একেক কারণে উত্তম। তবে প্রথম কারণ হলো জার্মানির শিক্ষার মান। সারা পৃথিবীতেই জার্মান ডিগ্রির কদর রয়েছে। বিশেষ করে বিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণার জন্য জার্মানিকে স্বর্গ বলা চলে।
জার্মানির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ও জার্মান ভাষায় পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে।অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন টিউশন ফি দিতে হবে, আবার জার্মান ভাষার অনেক প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে এখনো জার্মানিতে বিনা বেতনে পড়াশোনা করার সুযোগ রয়েছে। তবে সেজন্য জার্মান ভাষার দক্ষতা প্রমাণ করতে হবে।জার্মানিতেও পড়াশোনার পাশাপাশি কাজের সুযোগ রয়েছে।
মালয়েশিয়া: বাংলাদেশ থেকে অনেক শিক্ষার্থী বর্তমানে মালয়েশিয়াতে পড়াশোনা করতে যাচ্ছেন। অস্ট্রেলিয়ার বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস রয়েছে সেখানে।
অস্ট্রেলিয়া: অস্ট্রেলিয়ার জন্য আইইএলটিএস ও এইচএসসির পরীক্ষার জিপিএ খুব গুরুত্বপূর্ণ দুইটা বিষয়। এর ওপরে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাওয়া নির্ভর করবে। এটা যত ভালো হবে, সে তত ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবেন। জিপিএ কম থাকলে অনেক সময় শিক্ষার্থীরা সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাচেলর কোর্সে ভর্তির চেষ্টা না করে বরং অস্ট্রেলিয়ায় কোন ডিপ্লোমা কোর্সে যেতে পারেন। সেটা সম্পন্ন করে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে কাঙ্ক্ষিত কোর্সে ভর্তিতে সুবিধা পেতে পারেন।”
সেরা কিছু স্কলারশিপের তালিকা
(১) ডাড(DAAD) স্কলারশিপ।
(২) ফুলব্রাইট স্কলারশিপ।
(৩) শেভেনিং স্কলারশিপ।
(৪) কমনওয়েলথ মাস্টার্স স্কলারশিপ।
(৫) ইরাসমুস মুন্ডুস স্কলারশিপ।
(৬) প্রিমর্স্কা বিশ্ববিদ্যালয় স্কলারশিপ।
(৭) লুব্লিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয় স্কলারশিপ।
(৮) বিলাটেরাল স্কলারশিপ।
(৯) জিইএ কলেজ স্কলারশিপ।
(১০) ইউরোপীয়ান কংগ্রেস অব ম্যাথমেটিক্যাল স্কলারশিপ।
(১১) জোজেফ স্টেফান ইনস্টিটিউট পিএইচডি ফেলোশিপ।
(১২) আইইডিসি ব্লেড স্কুল অব ম্যানেজমেন্ট স্কলারশিপ।
(১৩) স্লোভেনীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন স্কলারশিপ।
বিশ্বসেরা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম:
০১. হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়
০২. ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি।
০৩. স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়।
০৪. ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি ক্যালিফোর্নিয়া।
০৫.ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন সিয়াটেল।
০৬. কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়।
০৭.অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়।
০৮. লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ।
০৯. ইটিএইচ জুরিখ।
১০. ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডন ।
১১. সুইস (Swiss) ফেডারেল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি।
১২. ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো