ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপে আবেদনের জন্য প্রাথমিক তথ্য জেনে নিন

স্কলারশিপ
স্কলারশিপ  © সংগৃহীত

ইউরোপের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ও জনপ্রিয় একটি স্কলারশিপ ইচ্ছে ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপ। বিভিন্ন দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের ইউরোপের বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার তহবিল জোগাতে ইউরোপীয় কমিশন এ স্কলারশিপ  দেয়।  বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থীরা যে কয়টি মর্যাদাপূর্ণ স্কলারশিপ নিয়ে বাইরে অধ্যায়ন করতে যান তার মধ্যে ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপ অন্যতম। ইরাসমাস মুন্ডাস মাস্টার্স প্রোগ্রামের আওতায় শতাধিক মাস্টার্স প্রোগ্রাম রয়েছে।
 
এই স্কলারশিপ শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতকোত্তর ও জয়েন্ট স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামে অধ্যয়নের সুযোগ দেয় । এই স্কলারশিপের মাধ্যমে তিনশ'র বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ২৮৫টি প্রোগ্রামে ২০ হাজারের মতো শিক্ষার্থী ও ১৫০০ জনের মতো পিএইচডি শিক্ষার্থী প্রতি বছর উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায়।

এই স্কলারশিপের আওতায় যেসকল সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাবেঃ- 
* শতভাগ টিউশন ফি ওয়েভার। 
* ২ বছর প্রতি মাসে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ ইউরো উপবৃত্তি।  
* যাতায়াত ভাতা। 
* সেমিস্টার শেষে এক দেশ থেকে অন্যত্র যাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক বিমানের টিকেট। 

ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপ

কিভাবে নিবেন প্রস্তুতিঃ-  
স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করতে হলে অবশ্যই স্নাতক ডিগ্রি (প্রথম ডিগ্রি) অর্জন করতে হবে বা স্নাতক ডিগ্রির শেষ বছরে থাকতে হবে এবং স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার আগেই গ্র্যাজুয়েট হতে হবে। স্নাতক ডিগ্রি না পেলেও স্নাতক সমতুল্য ডিগ্রির সার্টিফিকেট অর্জন করেও ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপের জন্য আবেদন করা যাবে। তবে সেই প্রোগ্রামটি অধ্যয়নরত দেশের জাতীয় আইন কর্তৃক স্বীকৃত হতে হবে।

প্রথমেই আইএলটিএস পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করতে হবে। সেই সঙ্গে পছন্দের প্রোগ্রামে গবেষণাভিত্তিক কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে প্রার্থীর আবেদন গ্রহণযোগ্যতা পায়, তবে এটি বাধ্যতামূলক নয়। এ ছাড়া নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে কাজের অভিজ্ঞতা সিভিতে যোগ করার জন্য স্নাতক পাশের পূর্বে স্বল্প পরিসরে কাজ করতে পারলে সুবিধা হবে।

যেসব বিষয় জানা প্রয়োজনঃ- 
*. অনার্সের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল না পেলেও আবেদন করা যাবে।
*. জিআরই টেস্ট স্কোর জমা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
*. কোনো অধ্যাপকের সঙ্গে যোগাযোগ না থাকলেও চলবে।
*. কোনো কাজের অভিজ্ঞতা থাকা বাধ্যতামূলক নয়।
*. ১৬ বয়সের পর থেকে আবেদনের জন্য গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে এবং এর পরে বয়সের কোনো বাধানিষেধ নেই।
*. কম সিজিপিএ থাকলেও আবেদন করা যাবে (প্রোগ্রামভেদে পূর্বে ২.৫০ থেকে ৩.০০ পর্যন্ত আবেদন গ্রহণযোগ্য হয়েছে)।

প্রয়োজনীয় নথিপত্রঃ- 
* অফিসিয়াল একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট (উচ্চ মাধ্যমিক ও ব্যাচেলর ডিগ্রি বা সমতুল্য)। 
* লেটার অব মোটিভেশন।
* দুইটি রেকমেন্ডেশন লেটার। 
* পূরণকৃত আবেদনপত্র। 
* সিভি। 
* প্রুফ অব রেসিডেন্স
* পাসপোর্ট বা আইডির স্ক্যান কপি। 
* ইংরেজি ভাষা দক্ষতার সনদ ।  

উপরে বর্ণিত প্রত্যেক নথি সংগ্রহ করে রাখতে হবে এবং প্রোগ্রাম বা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো পরামর্শকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারলে সুবিধা হবে। এসব ছাড়াও আইএলটিএস পরীক্ষায় ন্যূনতম ৬.৫ ব্যান্ড স্কোর অর্জন করতে হবে। বিকল্প হিসেবে, একটি ইংরেজি ভাষা দক্ষতার সার্টিফিকেট বা ডুয়োলিংগো পরীক্ষার ফলাফলও জমা দেয়া যাবে।

আবেদন প্রক্রিয়াঃ- 
ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপে আবেদন করার জন্য প্রথমে অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে ইরাসমাস মুন্ডাস ক্যাটালগে যেতে হবে। সেখানে প্রত্যেক প্রোগ্রামের নাম ও লোকেশন পাওয়া যাবে। তারপর কোর্স, আবেদন প্রক্রিয়া ও স্কলারশিপ সম্পর্কে আরও তথ্য জানার থাকলে সরাসরি কনটাক্ট প্রজেক্ট পারসন বাটন প্রেস করে যোগাযোগ করা যাবে।

চিত্র

আবেদনের সময়ঃ- 
ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপের তিনটিতে আবেদনের সময় তিন রকম। ১. ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট মোবিলিটি (আইসিএম) অ্যাকশন’-এ আবেদনের শেষ সময় আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি, ২. ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ফর হাইয়ার এডুকেশন (সিবিএইচই) অ্যাকশন-এ আবেদনের শেষ সময় ৮ ফেব্রুয়ারি ও ৩. ইরাসমাস মুন্ডাস জয়েন্ট মাস্টার্স (ইএমজেএম) অ্যাকশন-এ আবেদনের শেষ সময় ১৫ ফেব্রুয়ারি।

আরও পড়ুন: স্কলারশিপ নিয়ে ইউরোপের ৩০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটিতে পড়ার সুযোগ

সম্ভাব্য খরচঃ- 
স্কলারশিপ পেলে পরবর্তীতে পড়াশোনাসহ আনুষঙ্গিক খরচের জন্য উপবৃত্তি পাওয়া যায় ঠিকই। তবে স্কলারশিপে আবেদনের জন্য আইএলটিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ, ক্ষেত্রবিশেষে পছন্দকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে ডকুমেন্ট প্রেরণ, পাসপোর্ট, ভিসার জন্য আবেদন, বিমানের টিকেট ইত্যাদির জন্য কমপক্ষে ৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকা খরচ হতে পারে।

এ ক্ষেত্রে বিমানের টিকেট খরচ পরবর্তীতে স্কলারশিপ থেকে রিফান্ড করা হয়। আর পছন্দকৃত দেশের দূতাবাস দেশে না থাকলে পার্শ্ববর্তী দেশে গিয়ে ভিসার আবেদন করতে হতে পারে। স্কলারশিপের মেয়াদ শেষে বিদেশে স্থায়ী বা দেশে ফেরত আসার কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকায়, কেউ চাইলে চাকরির ব্যবস্থা ও ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে বিদেশে অবস্থান করতে পারবে।

যেহেতু ইরাসমাস মুন্ডাস মাস্টার্স স্কলারশিপ খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতা-পূর্ণ, তাই এটার জন্য দীর্ঘ সময় নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। প্রোগ্রামের ওয়েবসাইটে আবেদনকারীদের কোন পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করা হবে সেটা পরিষ্কার বলা থাকে। 'স্টেটমেন্ট অব পারপাস' এর উপর প্রায় সব প্রোগ্রামই জোর দিয়ে থাকে। কাগজপত্রগুলো সংশ্লিষ্ট প্রোগ্রামের চাহিদা মোতাবেক সাজাতে হবে। চমৎকার লেখালেখি আপনাকে অন্য প্রতিযোগীদের থেকে এক কদম এগিয়ে রাখতে সাহায্য করবে। কোন নির্দিষ্ট প্রোগ্রামে আবেদন প্রক্রিয়া সংক্রান্ত কোন প্রশ্ন থাকলে সংশ্লিষ্ট প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটরকে ইমেইল করতে হবে।


সর্বশেষ সংবাদ