জাপানের মেক্সট স্কলারশিপের খুঁটিনাটি
- সাগর হোসেন
- প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:০২ AM , আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:০৬ AM
উচ্চশিক্ষায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পছন্দের একটি গন্তব্য হচ্ছে সূর্যোদয়ের দেশ জাপান। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো থেকে প্রতিবছর অনেক শিক্ষার্থী জাপানে পড়ালেখা ও গবেষণার জন্য যেয়ে থাকেন। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি গত কয়েক বছর ধরে সফলতার সঙ্গে পড়াশোনা করছেন জাপানে। জাপানে প্রায় ৭০০ বিশ্ববিদ্যালয় আছে।
এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবং জাপান সরকার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের স্কলারশিপ দেয়। এর মধ্যে অন্যতম একটি স্কলারশিপ হলো মেক্সট স্কলারশিপ। এই স্কলারশিপে আবেদন করতে বা ভর্তি হতেও কোনো ফি লাগে না। বরং মাসিক উপবৃত্তি, বিমানে যাতায়াত খরচসহ নানা সুযোগ-সুবিধা মেলে এই স্কলারশিপ পেলে। বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীরা এ স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারে।
মেক্সট স্কলারশিপ কি?
জাপানে পড়াশোনার জন্য অন্যতম একটি স্কলারশিপ হলো ‘মেক্সট’ (এমইএক্সটি)। শব্দটি প্রকৃতপক্ষে মিনিস্ট্রি অব এডুকেশন, কালচার, স্পোর্টস, সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমইসিএসএসটি)। বড়সড় শব্দটির সংক্ষিপ্ত রূপ হলো মেক্সট। ১৯৫৪ সাল থেকে শুরু করে বিশ্বের ১৬০টির মতো দেশ থেকে আসা ছাত্রদের জন্য এ স্কলারশিপ দেয় জাপান সরকার। জাপান সরকার প্রদত্ত স্কলারশিপগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে খ্যাতনামা আর সবচেয়ে সম্মানিত। এ স্কলারশিপের জন্য ভিসা পেলে ভিসায় লেখা থাকে ‘গভট. স্কলার’। জাপানের গবেষণার মাধ্যমে স্কলারশিপ প্রাপ্তির দেশ এবং জাপানের মধ্যে বন্ধুত্বের সেতু হয়ে ওঠা মানবসম্পদকে উৎসাহিত করা এবং উভয় দেশ ও বৃহত্তর বিশ্বের উন্নয়নে অবদান রাখার লক্ষ্যেই দেওয়া হয় এ স্কলারশিপ।
স্কলারশিপপ্রাপ্তদের নিজ নিজ দেশ থেকে জাপানে আসার জন্য ও ঠিক সময়ে ডিগ্রি শেষে দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য বিমান ভাড়া ‘মেক্সট’ বহন করে থাকে। অন্যান্য অনেক স্কলারশিপে এই সুবিধাটা সচরাচর থাকে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনোরকম টিউশন ফি, পরীক্ষা ফি বা অন্যান্য কোনো ফি দিতে হয় না। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর যাবতীয় ফি মওকুফ আর পাবলিক বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি আর অন্যান্য ব্যয়ভার বহন করে দেশটির শিক্ষা, প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।
মেক্সট স্কলারশিপ এর আওতায় যেসব বিষয় নিয়ে অধ্যায়নের সুযোগ দেওয়া হয়:-
গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, আর্থ সায়েন্স, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, সিস্টেম অ্যান্ড কন্ট্রোল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইকোনমিকস, ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, কেমিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, গণিত ও কম্পিউটিং সায়েন্স, লাইফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি।
সুযোগ-সুবিধাসমূহঃ-
*বৃত্তিপ্রাপ্তদের কোনো টিউশন ফি বা ভর্তি ফি দেওয়া লাগবে না।
*আবেদন করতেও লাগবে না কোনো ফি।
*আসা-যাওয়ার বিমান খরচও মিলবে।
*শিক্ষার্থীদের আইইএলটিএস বা টোয়েফল স্কোর দেখাতে হবে না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা ও পরীক্ষা হয়েছে, সেটির প্রমাণ লাগবে।
যোগ্যতাসমূহঃ-
* বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
* ১৯৮৯ সালের ২ এপ্রিলের পর জন্মগ্রহণকারীরা আবেদনের যোগ্য।
* আবেদনকারীদের প্রাথমিক কিংবা মাধ্যমিক স্কুলে ন্যূনতম ৫ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
* বর্তমানেও প্রাথমিক কিংবা মাধ্যমিক স্কুলে কর্মরত রয়েছেন এমন।
* জাপানি সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার আগ্রহ থাকতে হবে।
* প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফিরে আসার ইচ্ছা থাকতে হবে।
*প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ প্রফিশিয়েন্সির ওপর প্রাধান্য দেওয়া হবে।
*সংশ্লিষ্ট সার্টিফিকেট, নম্বরপত্র, পাসপোর্ট অথবা জাতীয় পরিচয়পত্র, আইইএলটিএস/টোয়েফল স্কোরশিট (যদি থাকে), শিক্ষকতার প্রত্যয়নপত্র ও অভিজ্ঞতার সনদ, অন্যান্য ডকুমেন্টসহ আবেদন করতে হবে।
আরও পড়ুন: আইইএলটিএস ছাড়াই ৭০০টির বেশি বৃত্তি নিয়ে স্নাতকোত্তর করুন সুইডেনে
আবেদনের প্রক্রিয়া:-
সাধারণত প্রতিবছরের শুরুতেই এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু হয়ে থাকে৷ এজন্য আবেদনকারীকে বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে খোঁজ রাখতে হবে। অনলাইনে বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার পরে আবেদনকারীকে সংশ্লিষ্ট সার্টিফিকেট, মার্কসিট, পাসপোর্ট বা জাতীয় পরিচয়পত্র, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, সার্টিফিকেট, জাপানি ভাষার সনদ ও অন্যান্য সব ডকুমেন্টের সত্যায়িত কপিসহ আবেদনের হার্ড কপি সচিবালয়ের ২ নম্বর গেট সংলগ্ন অভ্যর্থনা কক্ষে নির্ধারিত বক্সে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমা দিতে হয়।
মেক্সট স্কলারশিপ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন