কেন মুসলিমদের ঐক্য অপরিহার্য
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:০০ PM , আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:০০ PM

বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা মুসলিম উম্মাহ এক অটুট বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আহ্বান বহুদিন ধরেই ইসলামের মূল শিক্ষার অংশ। আজকের বৈচিত্র্যপূর্ণ, জটিল ও অনেক সময় বিভাজনপূর্ণ সমাজে মুসলিমদের পারস্পরিক ঐক্য আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই ঐক্য শুধু ধর্মীয় দিক থেকেই নয়, বরং সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকেও মুসলিম সমাজকে শক্তিশালী করতে পারে। বিভাজনের বদলে একতার শক্তিতে এগিয়ে গেলে মুসলিম বিশ্ব আত্মমর্যাদা, ন্যায়বিচার ও শান্তির পথ সুগম করতে সক্ষম হবে।
ঐক্য মানুষকে সুসংহত ও সুসংগঠিত করে। ঐক্যের মাধ্যমেই মানুষ প্রতিকূলতা উতড়িয়ে জীবনকে সহজভাবে উপভোগ করতে পারে। ঐক্যের বিষয়টি শান্তি শৃঙ্খলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মুসলিমদের পারস্পরিক ঐক্যবদ্ধ থাকতে বলেছেন রাসূল সা.। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন—
‘তোমরা সবাই আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো এবং বিভক্ত হয়ো না। আর তোমরা তোমাদের ওপর আল্লাহর নিয়ামতকে স্মরণ করো, যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে। তারপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ভালোবাসার সঞ্চার করেছেন। অতঃপর তাঁর অনুগ্রহে তোমরা ভাই ভাই হয়ে গেলে।’ (সূরা আল ইমরান, আয়াত : ১০৩)
অপর আয়াতে বর্ণিত হয়েছে— ‘নিশ্চয়ই মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপস-মীমাংসা করে দাও। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, আশা করা যায় তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হবে।’(সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত : ১০)
এ আয়াতটি দুনিয়ার সমস্ত মুসলিমকে এক বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে। দুনিয়ার অন্য কোন আদর্শ বা মত ও পথের অনুসারীদের মধ্যে এমন কোন ভ্রাতৃত্ব বন্ধন পাওয়া যায় না যা মুসলিমদের মধ্যে পাওয়া যায়। এটাও এ আয়াতের বরকতে সাধিত হয়েছে।
এ নির্দেশের দাবি ও গুরুত্ব বিভিন্ন হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেছেন। ওই সব হাদিসের আলোকে এ আয়াতের আসল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বোধগম্য হতে পারে।
জারীর ইবন আবদুল্লাহ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার থেকে তিনটি বিষয়ে ‘বাই’আত’ নিয়েছেন। এক, সালাত কায়েম করবো। দুই, জাকাত আদায় করতে থাকবো। তিন, প্রত্যেক মুসলমানের কল্যাণ কামনা করবো। (বুখারি, হাদিস : ৫৫)
অন্য হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসেকী এবং তার সাথে লড়াই করা কুফারী। (বুখারি, হাদিস : ৬০৪৪, মুসলিম, হাদিস : ৬৩)
অপর হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অপর মুসলমানের জান, মাল ও ইজ্জত হারাম। (মুসলিম, হাদিস : ২৫৬৪,তিরমিজি, হাদিস : ১৯২৭)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, এক মুসলিম আরেক মুসলমানের ভাই। সে তার ওপরে জুলুম করে না, তাকে সহযোগিতা করা পরিত্যাগ করে না এবং তাকে লাঞ্ছিত ও হেয় করে না। কোন ব্যক্তির জন্য তার কোন মুসলিম ভাইকে হেয় ও ক্ষুদ্র জ্ঞান করার মত অপকৰ্ম আর নাই। (মুসনাদে আহমাদ: ১৬/২৯৭, ৭৭৫৬)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, ঈমানদারদের সাথে একজন ঈমানদারের সম্পর্ক ঠিক তেমন যেমন দেহের সাথে মাথার সম্পর্ক। সে ঈমানদারদের প্রতিটি দুঃখ-কষ্ট ঠিক অনুভব করে যেমন মাথা দেহের প্রতিটি অংশের ব্যথা অনুভব করে। (মুসনাদে আহমাদ: ৫/৩৪০)
অপর একটি হাদিসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, পারস্পরিক ভালবাসা, সুসম্পর্ক এবং একে অপরের দয়ামায়া ও স্নেহের ব্যাপারে মুমিনগণ একটি দেহের মত। দেহের যে অংগেই কষ্ট হোক না কেন তাতে গোটা দেহ জ্বর ও অনিদ্রায় ভুগতে থাকে ৷ (বুখারি, হাদিস : ৬০১১, মুসলিম, হাদিস : ২৫৮৬)