ভাই-ভাগ্নেসহ ১৫ আত্মীয়কে নিয়োগ দিয়েছেন খুুবি ভিসি

খুবি উপাচার্য ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান
খুবি উপাচার্য ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান  © ফাইল ফটো

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামানের বিরুদ্ধে শিক্ষক,  কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনাসহ নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। অবকাঠামো উন্নয়নে নিম্নমানের কাজসহ ঘুষ, দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা ভাগাভাগি ও লোপাটের রেশ কাটতে না কাটতেই তার বিরুদ্ধে নতুন করে নিয়োগ বাণিজ্যের এ অভিযোগ উঠল।

অভিযোগ রয়েছে, অযোগ্যদের ডিন ও বিভাগীয় প্রধান পদেও নিয়োগ দিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান। এমনকি নিজের আত্মীয়স্বজনকে বসিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, সব নিয়োগই স্বচ্ছতার ভিত্তিতে হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র বলছে, আইন অনুষদের বর্তমান ডিন ও প্রধানের নিয়োগ হয়েছে আইন বহির্ভূভাবে। খুবির নিয়োগ বিধিতে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, অধ্যাপক হতে ‘সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে অন্তত ৪ (চার) বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা’ থাকতে হবে। কিন্তু আইন বিভাগের প্রধান ওয়ালিউল হাসনাতের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে অভিজ্ঞতা মাত্র ৩ বছর ৬ মাস ৭ দিন। এর সঙ্গে তার লিয়েন কার্যকালকে (১০ মাস ১৪ দিন) অভিজ্ঞতা হিসেবে গণনা করে মোট অভিজ্ঞতা দেখানো হয়েছে ৪ বছর ৪ মাস ২১ দিন। অথচ খুবিসহ বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে লিয়েনকে চাকরিকালীন বাস্তব অভিজ্ঞতা হিসেবে গণনার বিধান নেই।

পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক নিয়োগের ক্ষেত্রেও ঘটেছে বড় ধরণের অনিয়ম। নিয়ম অনুযায়ী অধ্যাপক হতে মোট ২৫ বছরের শিক্ষকতা অভিজ্ঞতা থাকতে হবে বলে স্পষ্ট উল্লেখ থাকলেও তা নামিয়ে আনা হয়েছে ২০ বছরে। সেই সঙ্গে অধ্যাপক হতে ন্যূনতম ১০টি প্রকাশনার শর্ত থাকলেও এ বিশেষ ক্ষেত্রে চাওয়া হয়েছে মাত্র ৫টি। আর এমন শিথিলকৃত যোগ্যতাতেই নিয়োগ দেয়া হয়েছে পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক উত্তম মজুমদারকে। এত কম যোগ্যতায় খুবির ইতিহাসে আর কেউ অধ্যাপক পদে কখনোই নিয়োগ পাননি।

অন্যদিকে তালিকার ৫৯ নম্বর থেকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ইতিহাস ডিসিপ্লিনের প্রভাষক মো. হাফিজ আহমেদকে। অথচ তার আগে থাকা সব প্রার্থীরই শিক্ষাজীবনের সব পর্বে প্রথম শ্রেণি ছিল। অনেকেই ছিলেন পিএইচডি ডিগ্রিধারী। তাদের বাদ দিয়ে ও মান অবনমন করে এমন নিয়োগও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে বিরল।

শুধু তাই নয়, অনেক ডিসিপ্লিনে শিক্ষকস্বল্পতা থাকলেও বিজ্ঞাপিত পদের চেয়ে কম শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আবার অনেক ডিসিপ্লিনে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বিজ্ঞাপিত পদের চেয়ে অনেক বেশি শিক্ষক। এর মধ্যে রয়েছে পদার্থ বিজ্ঞান, কলা বা চারুকলা অনুষদের ডিসিপ্লিনগুলোতে শিক্ষক সংকট থাকলেও নিয়োগ দেয়া হয়নি, আর দিলেও তা বিজ্ঞাপিত পদের চেয়ে কম। অথচ ফার্মেসি ডিসিপ্লিনে শিক্ষক স্বল্পতা না থাকলেও তিন পদের বিপরীতে নেয়া হয়েছে ৭ জন, আইন ও বিভাগে সাংবাদিকতা এ দুই বিভাগে ৩ পদের বিপরীতে ৫ জন করে।

এছাড়া খুবির বাংলা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী পুজা মিত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুলে ৯ মাস খণ্ডকালীন হিসেবে শিক্ষকতা করার পর তাকে সরিয়ে দিয়ে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ওই বিভাগেরই শিক্ষক মো. দুলাল হোসেনের স্ত্রীকে। অথচ তার স্ত্রীর একাডেমিক যোগ্যতা পুজা মিত্রের সঙ্গে মোটেও তুলনীয় নয়। পুজার অনার্স ও মাস্টার্সের ফলাফল প্রথম দিকে। তিনি মাস্টার্সে থিসিস গ্রুপের শিক্ষার্থী। মেধা তালিকায় তার অবস্থান ৩য়। ইতোমধ্যে তার দুটি গবেষণাগ্রন্থও বের হয়েছে। কিন্তু দুলাল হোসেনের স্ত্রীর ফলাফল পুজার চেয়ে অনেক কম। তিনি নন-থিসিস গ্রুপের শিক্ষার্থী। কোনো লেখাপত্র না থাকলেও কেবল স্বামীর সুবাদে পুজাকে সরিয়ে নিজে জায়গা করে নিয়েছেন।

এছাড়াও খুবিতে বিভিন্ন পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে দেখা গেছে উপাচার্যের উন্মুক্ত স্বজনপ্রীতি। বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত মো. ইউসুফ রায়হান (ভাগ্নে), মো. জামাল মিয়া (ফুপাতো ভাই), মো. আবু সাঈদ (ভাগ্নে), রুবেল হাসান (ভাগ্নে), সৈকত মাহমুদ (ভাইপো), আসাদুর রহমান (মামাতো ভাই), নাজমুল ইসলাম (ভাইপো), মো. সফিকুল ইসলাম (ফুপাতো ভাই), নজরুল ইসলাম (চাচাতো ভাই) উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। তারা ছাড়াও মো. আনিছ, পলাশ, মো. রাজু কাজী, ইব্রাহীম মোল্লা, সুজন খানও তার আত্মীয় বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে ল্যাব সহকারী (উপাচার্যের ভাইপো) সৈকত মাহমুদ চুরি করে ধরাও পড়েছেন।

নিয়োগের ক্ষেত্রে লাগামহীন অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির এমনসব চিত্র প্রকাশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ স্থনীয় শিক্ষাবিদরা গভীরভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. এটিএম গোলাম কুদ্দুস দাবি করেন, সবগুলো নিয়োগই যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়েছে। এখানে কোনো চাতুরির বিষয় নেই, নেই স্বজনপ্রীতিও।


সর্বশেষ সংবাদ