রাকসু নির্বাচন: প্রাণ ফিরেছে ঝিমিয়ে পড়া ছাত্র রাজনীতিতে
- মেশকাত মিশু, রাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০১৯, ১২:৩৮ PM , আপডেট: ০৯ আগস্ট ২০১৯, ১২:৫৬ PM
শিক্ষার্থীরাই যখন তাদের নেতৃত্ব নির্বাচন করতে পারে নেতারাও বাধ্য হয়ে, হয়ে পড়েন শিক্ষার্থী-মুখী। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে রাকসু না থাকায় ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম একপ্রকার থেমেই গেছে। শাসকদলের একচ্ছত্র আধিপত্যে বাধ্য হয়েই অনেকটা ঝিমিয়ে পড়তে হয়েছে অন্যান্য ছাত্ররাজনীতি চর্চা।
সর্বশেষ ১৯৮৯-৯০ সালে অনুষ্ঠিত হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন। এরপর থেকে রাজনৈতিক নানা অস্থিতরতার অজুহাত তুলে বন্ধ করে দেওয়া হয়। দীর্ঘ ২৯ বছরেও হয়নি ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের এ মহারণ।
এদিকে চলতি বছরের শুরুতে নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হলে নড়েচড়ে বসে ক্যাম্পাসের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলো। নির্বাচনের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এরই মধ্যে রাকসু সংলাপ শেষ করেছে। একই সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে নানা দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।
নির্বাচন ঘিরে দীর্ঘদিন যাবৎ ক্যাম্পাসে সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে না থাকা ছাত্রদল এরই মধ্যে মাঠে নামতে শুরু করেছে। সংলাপে অংশ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্র সংগঠনের কর্মকান্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও দলীয় টেন্ট পুন:নির্মাণের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট দাবি করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়-শিক্ষার্থী স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে প্রশাসনের কাছে স্মারক লিপি দিয়ে অবস্থান জানান দিতে চেষ্টা থাকে নিয়মিত।
গত পাচঁ বছর থেকে সংগঠনটির নতুন কমিটি না থাকলেও হল কমিটি দেওয়া শুরু করেছে। ইতোমধ্যে শহীদ জিয়াউর রহমান হল শাখায় সংগীত বিভাগের জহরুলকে সভাপতি ও ক্রপ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি বিভাগের এস এম আল-আমিনকে সাধারণ সম্পাদক করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের মাঝে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে রীতিমতো ক্যাম্পাসে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন সংগঠনটি।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের সভাপতি ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষেধাজ্ঞা সত্বেও শুধু ছাত্রলীগকে ক্যাম্পাসে অবস্থান করা সুযোগ দিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু অন্য সংগঠনগুলোকে দেয় নি। সম্প্রতি রাকসু নির্বাচনে সহাবস্থানের নিশ্চিতের লক্ষে নিরাপত্তা দেওয়ার আশ্বস্ত করেছে। তারপর থেকেই ক্যাম্পাসে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছি এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম বৃদ্ধিতে হল কমিটি দেওয়া শুরু করেছি। ধারাবাহিকভাবে অন্য হল কমিটি গুলো দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
অন্যদিকে ক্ষমতাশীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের একবছরের কমিটি আড়াই বছর হলেও হল কমিটি দিতে পারে নি। সর্বশেষ ২০১৫ সালে ১৯ জানুয়ারি ৮টি হল মিলে কমিটি ঘোষণা করে তৎকালীন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান ও সম্পাদক খালিদ হাসান বিপ্লব।
হিসাব করে দেখা গেছে, সাড়ে পাঁচ বছর যাবৎ হল কমিটি নেই। হঠাৎ নির্বাচনকে সামনে রেখে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে সম্প্রতি হল কমিটি দেওয়ার প্রস্ততি নিচ্ছে শাখা ছাত্রলীগ। তবে হল কমিটি আদৌও হবে কিনা তা নিয়ে সন্দীহান ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট একাধিক নেতাকর্মী।
তবে হল কমিটির দেয়ার ঘোষণার পর থেকেই ক্যাম্পাসে গুরুত্বপূর্ণ চত্বরগুলোতে বসে অনুসারীদের নিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছে নেতাকর্মীরা। একই সঙ্গে বিভিন্ন মহলেও তদবির করছেন পদপ্রত্যাশীরা।
শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, শিক্ষার্থীদের স্বার্থে ছাত্রলীগ কাজ করে থাকে। এজন্যই শিক্ষার্থী বান্ধব সংগঠন এটি। দীর্ঘদিন থেকে সক্রিয় রয়েছি। এছাড়াও নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে হল কমিটি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সম্মতি পেলেই হল সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে ক্যাম্পাসে রাকসু আলোচনা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্যাম্পাসে আত্নপ্রকাশ করে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন। এর আগে কখনো ধর্মভিত্তিক এ ছাত্র সংগঠনটি কোন কর্মসূচি না করলেও এখন বিভিন্ন কর্মসূচিতে মাঠে দেখা মিলছে তাদের। ১০ মার্চ সর্বহারা পরিচয়ে রাবি শিক্ষকদের হত্যার হুমকি, ক্যাম্পাসে ছিনতাই এর বিচার এবং ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদারের দাবিতে মানববন্ধন করে। এর মাধ্যমে জনসম্মুখে আসে সংগঠনটি। পরে ১৩ এপ্রিল বার্ষিক সম্মেলনও করে সংগঠনটি। এছাড়াও সংগঠনটিকে শিক্ষার্থীদের মাঝে পরিচিত করতে বিভিন্ন পোস্টার, লিফলেটও বিতরণ করছে।
ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন বলেন, পূর্ণ প্যানেলের আমাদের জনশক্তি আছে। এর আগে কখনও প্রকাশ্য ছিলনা সংগঠনটি। রাকসু নির্বাচনকে ঘিরে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছি।
নির্বাচনকে ঘিরে আত্নপ্রকাশ করেছে জাতীয় পার্টির ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্র সমাজ। রাকসু নির্বাচনে অংশ গ্রহণের আশা নিয়ে সংলাপে অংশ গ্রহণ করেছেন। এবং ক্যাম্পাসে অবস্থানরত ক্রিয়াশীল সকল ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
এদিকে দেশের যে কোন ইস্যুতে ভূমিকা রেখে ক্যাম্পাসে সক্রিয় আছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফন্ট, ছাত্র ফেডারেশন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর মতো বাম সংগঠন গুলো।
এ বিষয়ে রাকসু সংলাপ কমিটির সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. লুৎফর রহমান জানান, নির্বাচনকে সামনে রেখে সংগঠনগুলো সক্রিয় হচ্ছে। ক্রিয়াশীল সংগঠনগুলোর সহাবস্থান নিশ্চিত করে রাকসু নির্বাচন দেওয়া হবে। সে লক্ষে হলে পৃথক পৃথক ভাবে আবাসিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করা হয়েছে।