জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে বর্ষবরণের প্রস্তুতি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি  © টিডিসি ফটো

বছর ঘুরে আবারো আসছে বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই উৎসাহ ও উদ্দীপনায় বরণ করে নেয় পহেলা বৈশাখকে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ও (জবি) এর ব্যাতিক্রম নয়।

বাংলা নববর্ষ-১৪২৬ বরণকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ নানা আয়োজনের কাজ। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও মূল থিমকে কেন্দ্র করেই হচ্ছে সকল আয়োজন। এবারের নববর্ষে জবির থিম হলো ‘নদী’। এবার থাকছে না মুখোশ। মুখোশের পরিবর্তে সবার হাতে থাকবে মাছ।

ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন একাডেমিক ভবনের সামনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কর্মব্যস্ত সময় পার করছেন।

মূল থিম ঠিক করার বিষয়টি নিয়ে জবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এই নদী না বাঁচলে আমরাও বাঁচবো না। আর তাই আমাদের নিজেদের টিকে থাকার স্বার্থে নদীকে রক্ষা করতে হবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকার খাল-বিল, নদ-নদীকে রক্ষার জন্য নানা কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। নদী কমিশনকে শক্তিশালী করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বিচার বিভাগ নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। তাই বঙ্গবন্ধুর বাংলাকে বাঁচানোর জন্য বাঁচাতে হবে নদীকে। এবার পহেলা বৈশাখে আমাদের স্লোগান ‘নদী বাঁচলে বাঁচবে দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ।’

তিনি আরো বলেন, কম খরচে সহজে দূর্ঘটনা ছাড়া সবচেয়ে সহজলভ্য পথ হচ্ছে নদীপথ। দখলের মাধ্যমে হারিয়ে যাচ্ছে নদীপথ। নদীকে জীবন্ত ও সচল করতে পারলে একই সাথে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উপকৃত হব।

প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এবার ব্যাপক পরিসরে আয়োজন করা হবে। এজন্য পুরনো ঢাকার প্রায় ৪০টিরও বেশি শিক্ষা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান এতে অংশগ্রহণ করবে। এতে তিন মাছ, প্লে-কার্ডসহ বাঙালি সাজ-সজ্জার যেসব উপকরণ ব্যবহার করা হয় তার সবই থাকবে।

প্রস্তুতির দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের প্রভাষক মারুফ আদনান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘বর্তমানে নদী দখল স্বাভাবিক হয়ে দাড়িয়েছে, নদীকে দখল থেকে রক্ষা করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। তাছাড়া এবারের বর্ষবরণে রয়েছে ভিন্নতা, মুখোশের পরিবর্তে সকলের হাতে দেখা যাবে মাছ। রয়েছে নৌকাবাইচের অনুষঙ্গ।’

তিনি বলেন, ‘নদীর অনুষঙ্গ হিসেবে থাকবে বজরা, ডিঙ্গি, ময়ূরপঙ্খীসহ বিভিন্ন প্রকরের নৌকা আর বাংলাদেশী শুশুক। তবে সময় স্বল্প হওয়ার মাছ ধরার উপাদানগুলো তুলে ধরা যাচ্ছে না।’

চারুকলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাঈম মৃধা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘প্রতিবছর এই সময় ব্যস্ত থাকি, তবে এবারের উপস্থাপনার বিষয় ভিন্ন ও নতুন হওয়ায় (মুখোশের পরিবর্তে মাছ) সকলের মাঝে বাড়তি উত্তেজনা কাজ করছে। বিষয়টিকে আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। সবাই খুব উপভোগ করছি।’

উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালে সামরিক স্বৈরশাসনের হতাশার দিনগুলোতে তরুণেরা এ মঙ্গল শোভাযাত্রার রীতিটি শুরু করেছিল। শিক্ষার্থীরা অমঙ্গলকে দূর করার জন্য বাঙালির নানা ধরনের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক, প্রাণী প্রতিকৃতি ও মুখোশ নিয়ে শোভাযাত্রা করেছিল। সেই থেকে আজও দেশে ও দেশের বাইরে প্রায় প্রতিটি বাঙালি এমনকি বাংলা অনুরাগী কিছু বিদেশীরাও বেশ আগ্রহ নিয়ে পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা ও অন্যান্য আচার-অনুষ্ঠান নিয়মিত পালন করে আসছেন।


সর্বশেষ সংবাদ