কুবিতে মুছে দেওয়া হল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি

পাটাতনের গ্রাফিতি
পাটাতনের গ্রাফিতি  © টিডিসি ফটো

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) সংলগ্ন ছাত্র আন্দোলন চত্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র বুদ্ধিবৃত্তিক সংগঠন ‘পাটাতন’ কর্তৃক অঙ্কিত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের স্মৃতি সম্বলিত গ্রাফিতি রাতের অন্ধকারে মুছে দেয়া হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সকালে এ ব্যাপারে জানা যায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বুধবার (৯ এপ্রিল) রাতেও গ্রাফিতিগুলো রঙিন ছিল। রাতের অন্ধকারে গ্রাফিতির উপর কালো রঙের স্প্রে দিয়ে মুছে দেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চাইলে পাটাতনের সাধারণ সম্পাদক সায়েম মোহাইমিন বলেন‚ ‘গণহত্যার ইতিহাসকে যদি ভুলে যাওয়া হয় তাহলে গণহত্যা বারবার হবে। তাই আমরা পাটাতন থেকে জুলাইয়ের শহীদদের স্মৃতিকে গ্রাফিতি আকারে সংরক্ষণ করার চেষ্টা করেছি। বিশেষ করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলন চত্বর থেকেই এ আন্দোলনের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ তৈরি হয়েছিলো, বাংলা ব্লকেড এখান থেকেই পালন করা শুরু হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখানে এমন ঘৃণ্য কাজ করা কেবল গণহত্যার দোসর নরপিশাচদের দ্বারাই সম্ভব। এ ধরনের কাজের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। প্রশাসনকে এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ করবো। সেই সাথে অনুরোধ করবো জুলাইয়ের স্মৃতিতে ক্যাম্পাসে যেন একটি “স্মৃতি মিনার” তৈরি করা হয়, আর ছাত্র আন্দোলন চত্বরে যেন একটি নামফলক স্থাপন করা হয়। এতে করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে পরবর্তী প্রজন্ম মনে রাখবে।’

এ বিষয়ে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক হান্নান রহিম বলেন‚ ‘গ্রাফিতি মুছে ফেলার মাধ্যমে স্বৈরাচারের দোসররা জুলাইকে মুছতে চায়, ছাত্র আন্দোলন চত্বরকে মুছতে চায়। তারা জানে না যা কিছু রক্ত দিয়া লেখা হয় তা মুছা যায় না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নিবে পাশাপাশি জুলাইকে বাঁচিয়ে রাখতে স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে বিশ্বাস রাখতে চাই।’

কুবি ছাত্রদলের সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান শুভ বলেন‚ ‘জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে দল-মত নির্বিশেষে যৌক্তিক দাবি নিয়ে আমরা সকলে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছিলাম। এ আন্দোলনে আমাদের অনেক ভাই শহীদ হয়েছে। তাদের স্মৃতিতে গ্রাফিতি অঙ্কনের জন্য ‘পাটাতন’ সাধুবাদ পাওয়ার দাবিদার। আমরাও এমন কিছু করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। কিন্তু ষড়যন্ত্র করে যারা এগুলো মুছে দিতে চাইছে হয়ত তারা ক্যাম্পাসের ছাত্রলীগ কিংবা প্রশাসনে থাকা স্বৈরাচারের দোসর।’

শুভ আরও বলেন, ‘এতে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে পতিত স্বৈরাচার এখনো বিদ্যমান। আমরা এসব কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমি সকল সংগঠনকে আহ্বান জানাবো জুলাইয়ের ইতিহাসকে সংরক্ষণে এগিয়ে আসার জন্য। জুলাইয়ের স্মৃতিকে যুগ যুগ ধরে বজায় রাখতে স্থায়ী ভাস্কর্য করার জন্য আলোচনা করতে পারি।’ 

কুবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি ইউসুফ ইসলাহী বলেন, ‘জুলাইতে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার এ দেশের ছাত্র-জনতার ওপর যে নারকীয় তাণ্ডব চালিয়েছে তার স্মরণে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিবৃত্তিক প্ল্যাটফর্ম পাটাতন যে গ্রাফিতি অঙ্কন করেছিলো সেগুলো যারাই মুছে দিয়েছে তারা ফ্যাসিস্টের পদলেহী বলেই আমরা মনে করি। আমি বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ বিষয়ে সোচ্চার ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাই।’

সহকারী প্রক্টর ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুতাসিম বিল্লাহ বলেন‚ ‘প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ ও দাবি আসলে হয়ত প্রশাসন আমলে নিবে। আমি মনে করি জুলাই আন্দোলনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তাই এর স্মৃতিকে সংরক্ষণে দাবি-দাওয়া আমলে নিয়ে প্রশাসনের এগিয়ে আসা উচিত।’

এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. আব্দুল হাকিম এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন‚ ‘আমি এখনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা অবশ্যই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আর জুলাই স্মৃতি মিনার করার ব্যাপারে রেজিস্টারের নিকট লিখিত আবেদন প্রদান করলে আমরা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার চেষ্টা করবো।’


সর্বশেষ সংবাদ