সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রনেতাদের ঈদ ভাবনা
- অপূর্ব চক্রবর্তী
- প্রকাশ: ০১ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩৩ PM , আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩৩ PM

ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। পবিত্র মাহে রমজানের মাসব্যাপী সংযম ও সিয়াম সাধনার পরে আসে ঈদ। নতুন জামা, সেমাই ফিরনিসহ বাহারী খাবার আর পরিবার-প্রিয়জনদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি। তবে এবারের ইদ এসেছে এক নতুন আঙ্গিকে। গত বছরের ৫ই আগস্ট সরকারের পটপরিবর্তনের পর প্রথম ইদ। তাই-তো এখানে আমেজটাও ভিন্নরকম। একেদিকে যেমন আনন্দের বর্ষণধারা অপরদিকে শহিদ পরিবার বা শহিদদের জন্য বেদনার কালো মেঘের ঘনঘটা। এসব কিছু নিয়ে সোহরাওয়ার্দী কলেজের বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের প্রতিবেদক অপূর্ব চক্রবর্তী।
সোহরাওয়ার্দী কলেজের শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রুবেল হোসেন বলেন, ৫ই আগস্টের পর এটি প্রথম ঈদ। তাই এবারের ঈদে যেমন রয়েছে আনন্দের হাসি তেমনি রয়েছে বিষাদের ছায়া। পরিবার পরিজন নিয়ে সবাই ইদ করে আমরাও তার ব্যতিক্রম নয় তবে ক্যাম্পাসের দলীয় কর্মীদের খুব মিস করবো।
তিনি আরও বলেন, পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে আমরা সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ প্রাঙ্গণে সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে সাথে নিয়ে ইফতার ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছি। এছাড়াও ফুটপাতে ভাসমান পথ-শিশুদের ঈদবস্ত্র বিতরণ এবং তাদের কে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা, কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থিত জামে মসজিদে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে কোরআনের আলো শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে ৮৫ টি কুরআনুল কারীম প্রদান করা হয়।
সোহরাওয়ার্দী কলেজ শাখা ছাত্রঅধিকার পরিষদের সভাপতি কাউছার আলী বলেন, ছাত্র জনতার গণ অভ্যুত্থানের পর এটিই প্রথম স্বৈরশাসকমুক্ত ইদ , আমরা জুলাই বিপ্লবের শহীদের হারিয়েছি এবং তাদের রক্তের বিনিময়ে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মানে স্বপ্ন দেখি। নতুন বাংলাদেশে সকলের জন্যে রইলো ঈদের শুভেচ্ছা। দলমত নির্বিশেষে সকলেই আমরা দেশের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবো ইনশাআল্লাহ। আমাদের সকলকে আনন্দের সাথে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যেনো কোন ভাবেই ফ্যাসিবাদী পরাজিত শক্তি নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় থাকুক আমাদের দলমত নির্বিশেষে সকলের মধ্যে।
তাদের কার্যক্রম সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইদে সকলেই যার যার গ্রামের বাড়িতে যায় এবং বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ শাখার সহযোদ্ধাদের ইদ উপলক্ষ্যে যার যার এলাকায় জুলাই বিপ্লবের শহীদদের পরিবারের সার্বিক খোঁজ খবর এবং সহযোগিতার কার্যক্রম রয়েছে। এছাড়াও এলাকায় সকল ভিন্ন মত পথের সকল ছাত্র সংগঠনের দায়িত্বশীলদের সাথে যোগাযোগ সৌজন্য সাক্ষাৎ ইদ উপলক্ষ্যে।
সোহরাওয়ার্দী কলেজ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক লিখন ইসলাম তার অভিব্যক্তি ব্যক্ত করে বলেন, এবারের ঈদ হোক শহীদি পরিবারের সাথে।
এছাড়াও তিনি বলেন, ইদ মানে আনন্দ খুশী! পারিবারিক মিলনমেলা, হারানো বন্ধুত্ব ফিরে পাওয়া কিংবা সময়ের অভাবে দেখা না হওয়া প্রিয়জনের সাথে দেখা হওয়া। তবে এই সকল আশা নিয়ে বসা থাকার পরে-ও ইদের দিন যতো বেশি সামনে আসতেছে ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া পরিবারের সদস্যদের হাসিখুশি মুখগুলো ততো বেশি ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে। দুঃখ কষ্টে হৃদয় ভেঙ্গে চৌচির হয়ে যাচ্ছে।
দীর্ঘ এক মাস কত ত্যাগ স্বীকার এর পরেও তাদের পরিবারের আসবে না এই খুশির দিনটি। ঘরে ঘরে কত আনন্দ আর কত হইচই অথচ শহীদদের পরিবার গুলোতে এই আনন্দ আসবে না বরং তারা নিস্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে, হৃদয় হাহাকার হয়ে উঠতেছে। ভাই-বোন, মা-বাবা, আদরের শিশু হারানো পরিবারের এই আনন্দের দিন, কখনো আমরা ফিরে দিতে পারবো না! তবুও আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং আমার কমিটির সবাই কে নির্দেশ দিয়েছি আমরা সবাই এবারের ঈদ নিকটবর্তী এলাকার শহীদের পরিবারের সাথেই করবো। যাদের জীবনের মূল্য হিসেবে আমরা পেয়েছি ফ্যাসিস্ট মুক্ত বাংলাদেশ, তাদের পরিবারের সাথেই হোক ঈদুল ফিতরের নামাজ।
ইদের দিনের কার্যক্রম সর্ম্পকে জানতে তিনি বলেন, ফজরের নামাজের পারে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে তাদের কবর জিয়ারত করার মাধ্যমেই শুরু হোক ঈদের দিন। সেই সাথে পুরো দেশবাসীকে অনুরোধ করবো এবারের ইদ হোক শহীদি পরিবারের সাথেই। সাংগঠনিক ভাবে আমরা আরও একটা পদক্ষেপ নিয়েছি "আমাদের যে সকল সদস্য ঢাকায় ইদ উদযাপন করবে তারা ফজরের নামাজ শেষে মিরপুর কবরস্থান জিয়ারত করার পারে পথশিশুদের নিয়ে ইদের নামাজ আদায় করবো ইনশাআল্লাহ! সর্বপরি, ইদুল ফিতর কাটুক প্রভুর রহমতে এবং শহিদী পরিবারগুলোকে আপন করে নেওয়ার মাধ্যমে ইদের দিন শেষ হোক এই আশা রাখছি।
সোহরাওয়ার্দী কলেজ ডিবেটিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাবরিনা সুলতানা বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ কর্মব্যস্ততার পর এত বড় একটা ছুটি পেয়েছে সবাই। বেশিরভাগ মানুষই পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন এবং ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত। যার ব্যতিক্রম আমিও নই। তাই ইদের পর আমরা ধাপে ধাপে আমাদের ক্লাবের কার্যক্রমকে সক্রিয় করবো।
রমজান মাসের কার্যক্রম সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই পর্যন্ত আমাদের ক্লাবের পক্ষ থেকে নবীন বরণ, ইফতার মাহফিল কয়েকটি আয়োজন করা হয়েছে এবং আমরা আমাদের পার্শ্ববর্তী কলেজের সাথে একটি প্রীতি বিতর্কে অংশগ্রহণ করেছি। ইদের পরে আমাদের বিতর্ক ক্লাব নতুন উদ্যমে কার্যক্রম শুরু করবে। আমাদের পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে— নতুন সদস্যদের নিয়মিত বিতর্ক প্রশিক্ষণ, কর্মশালা আয়োজন এবং অভিজ্ঞ বিতার্কিক সঙ্গে সেশন করা ইত্যাদি। তাছাড়া পুরাতন বিতর্কিকদের কিভাবে দক্ষ করা যায় এবং নবীন বিতর্কিত কিভাবে গড়ে তোলা যায় সেটা নিয়েও আমরা কাজ করছি।
তিনি তাদের পরিকল্পনার মধ্যে আরও যুক্ত করেছেন, আমরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি এবং আমাদের লক্ষ্য হলো আন্তর্জাতিক মানের বিতর্কিক তৈরি করা। এছাড়া, বিতর্কের মাধ্যমে সমাজে যৌক্তিক চিন্তা ও বিশ্লেষণধর্মী মনোভাব ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন আয়োজন করবো এবং আমাদের এই আয়োজনগুলোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক বিভিন্ন সমস্যা এবং দেশের প্রশাসনিক বিষয়গুলো তারা অবগত হতে পারবে।
এছাড়াও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, সাতটি কলেজের যে ক্যাম্পাস রয়েছে তাদের সাথে মিলে কয়েকটি প্রীতি বিতর্কের আয়োজন করা হবে। কিছু সীমাবদ্ধতা থাকার কারণে আপাতত আমাদের কার্যকলাপ অনলাইন ভিত্তি রয়েছে। এ বছরই প্রথম আমাদের বিতর্ক ক্লাবের পক্ষ থেকে এতো বড় করে নবীন বরণ আয়োজন করা হয়েছে। আমরা আমাদের ক্লাবকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য এবং যোগ্য বিতর্কিক তৈরি করার জন্যই সর্বদা সচেষ্ট রয়েছি।
সোহরাওয়ার্দী কলেজের বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির শাখার সভাপতি নূর নবী বলেন, প্রথমেই প্রিয় শিক্ষক, শিক্ষার্থী সকলকে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ এর পক্ষ থেকে জানাই ঈদের শুভেচ্ছা 'ঈদ মোবারক' ও আসসালামু আলাইকুম।
পবিত্র ঈদুল ফিতর আমাদের জন্য মহান রাব্বুল আলামীনের এক অপার নেয়ামত। এক মাস সিয়াম সাধনার পর ইদ আসে আনন্দ ও ভালোবাসার বার্তা নিয়ে। এটি কেবল উৎসব নয়, বরং ত্যাগ, সংযম ও মানবতার এক অনন্য প্রতিচ্ছবি।
ঈদ আমাদের শিক্ষা দেয় পরস্পরের প্রতি সহমর্মিতা ও ভালোবাসা প্রদর্শনের। সমাজের দরিদ্র ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোই ঈদের প্রকৃত সৌন্দর্য। আসুন, আমরা ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করি, অসহায় ও দুঃস্থদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেই।
ইদ উপলক্ষে তাদের কার্যক্রম সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি জানান, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আমাদের কর্মসূচির মধ্য রয়েছে শহিদ পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ, গরিব শিক্ষার্থীদের মাঝে ঈদ সামগ্রি বিতরন এবং ঈ পুনর্মিলনী। এই বিশেষ দিনে আমি আমাদের কলেজ পরিবারের সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আপনারা সবাই সুস্থ থাকুন, নিরাপদ থাকুন এবং ইদের আনন্দ পরিবারের সঙ্গে উপভোগ করুন।