চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

তাপস হত্যার ৪ বছর পরও ধরাছোঁয়ার বাইরে আসামিরা

তাপসের পরিবারকে চাকরি দেয়ার প্রতিশ্রুতিও রাখেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ

চবি শিক্ষার্থী তাপস সরকার
চবি শিক্ষার্থী তাপস সরকার

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সংস্কৃত বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তাপস সরকার হত্যার চার বছরেও হয়নি কোনো সুরাহা। ধরাছোঁয়ার বাইরে হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামিরা। এদিকে তাপস সরকারের পরিবারকে চাকরি দেওয়ার আশ্বাসও রাখেননি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

জানা যায়, তাপস সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম বর্ষ থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত হন। ২০১৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর চবির বুদ্ধিজীবী চত্বরে ফুল দেয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের (ভিএক্স ও সিএফসি) দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তাপস সরকার।

তাপস হত্যার বিচার চেয়ে প্রথমদিকে তার সহপাঠী, বিভাগ এবং ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সরব থাকলেও চার বছরের ব্যবধানে বিলুপ্ত হওয়ার পথে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং সেই সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়বস্তু। এমনকি গত তিন বছর তাপসের স্মরণে ১৪ ডিসেম্বর ছাত্রলীগ স্মরণ সভার আয়োজন করে থাকলেও এ বছর সেটাও হয়নি।

এছাড়াও চার বছর পার হলেও এখনো ধরাছোঁয়ার বাহিরে তাপস হত্যা মামলার চার্জশিট ভুক্ত আসামিরা। গত বছর পিবিআই কর্তৃক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হলেও এখনো পর্যন্ত কাউকে আটক দেখাতে পারেননি প্রশাসন। তাছাড়া একাডেমিকভাবেও আসামিদের বিরুদ্ধে নেয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা।

জানা যায়, মামলার অন্যতম আসামি আশরাফুজ্জামান আশা গত বছরের ৪ অক্টোবর আত্মসমর্পণ করেন। অথচ চলতি বছরের ২ মে চার্জশিট প্রতিবেদনে আশরাফুজ্জামানসহ ১৫ জনকে পলাতক দেখানো হয়েছিল। যাদের অনেকেই এখনো বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথেও সরাসরি জড়িত রয়েছেন।

শুধু তাই নয়, সদ্য বিলুপ্ত কমিটির বিভিন্ন পদেও অধিষ্ঠিত ছিলেন অনেকে। এদের মধ্যে চার্জশিট ভুক্ত সাত নম্বর আসামি রাশেদ হোসাইন ও দশ নম্বর আসামি রেজাউল করিম ছিলেন সহসভাপতির দায়িত্বে। আট নম্বর আসামি মিজানুর রহমান বিপুল (বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী) উপ দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। এই তিন জনই বর্তমানে বগি ভিত্তিক সংগঠন ভিএক্স (ভার্সিটি এক্সপ্রেস) গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন। যারা তৎকালীন সময়ে সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হলেও বর্তমানে তারা সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

এছাড়া চার্জশিট ভুক্ত ১৮ নম্বর আসামি জাহেদুল আউয়ালও ছিলেন সদ্য বিলুপ্ত কমিটির অর্থ সম্পাদকের দায়িত্বে। তিনি মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী বিজয় গ্রুপের নেতা। তবে চার্জশিট ভুক্ত সাত ও দশ নম্বর আসামি বর্তমানে জামিনে রয়েছেন।

এদিকে তাপসের পরিবারের যেকোনো একজন সদস্যকে তৎকালীন উপ-উপাচার্য ও বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড.ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। তবে এরপর থেকে শুধুমাত্র একবার পরিবারের খোঁজ নিয়েছেন বলে জানান তার পরিবার। তার সহপাঠীরা অভিযোগ করে বলেন, তাপসের ভাইকে চাকুরী দেয়ার কথা থাকলেও এখন সেই চাকরী দিচ্ছে একই গ্রুপের ছাত্রলীগের এক নেতার ভাইকে।

এদিকে দারিদ্রপীড়িত পরিবারটি বর্তমানে অর্থনৈতিক বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। পরিবারের একমাত্র সম্ভাবনাময় মেধাবী তাপস সরকারকে এখনো ভুলতে পারেননি তার পরিবার।

এ বিষয়ে তাপসের বড় ভাই আশীষ সরকার বলেন, দলীয় নেতাকর্মীরাও আমাদের আর কোনো খোঁজখবর নেয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিবারের একজনকে চাকরি দেয়ার আশ্বাস দিলেও আজ পর্যন্ত কাউকে চাকরি দেয়া হয়নি। ফলে পারিবারিক প্রতিকূলতাও বেড়েছে অনেক গুণ। মামলার বিষয়ে আর কোনো অগ্রগতিও দেখিনি আমরা।


সর্বশেষ সংবাদ