জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরল পুরোনো সংকট, অনিশ্চিত জীবনে ৩ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়  © লোগো

কয়েক বছর আগেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে সবচেয়ে বড় সংকট ছিল সেশনজট। চার বছরের স্নাতক শেষ করতে পার হতো ৫ থেকে ৬ বছর। কখনো কখনো সময়সীমা ৭ বছরও হয়ে যেত। ২০১৫ সালের পরবর্তী সময়ে সেই সেশনজট অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছিল বিশ্ববিদ্যালয়টি। তবে ২০২০ সালে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর আবারও সেশনজটে পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়টির ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ৩ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। 

১৯৯২ সালে উচ্চশিক্ষায় সেশনজট নিরসনের কথা বলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছিল। দীর্ঘদিন পর সেশনজট কিছুটা কমলেও ফের দেখা গেছে সেই পুরোনো সংকট। প্রায় ৩ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থীর জীবনে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে হতাশা দেখা গেছে।

জানা গেছে, অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়টির ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে স্নাতক সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষ হতে চললেও ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষার তারিখ এখন পর্যন্ত ঘোষণা হয়নি। শিক্ষার্থীদের ধারণা ২০২৫ সালের জুন মাস নাগাদ পরীক্ষা শুরু হতে পারে। এর ফলে ৪৭তম বিসিএসসহ চাকরির নানা পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হবেন তিন লাখের বেশি শিক্ষার্থী।

তথ্যমতে, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ২০২০ সালে অনার্স প্রথম বর্ষ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ফরম পূরণ করেছিলেন। প্রথম বর্ষ পরীক্ষার জন্য সর্বমোট চার লাখ ৬৭ হাজার ৮৩৫ জন শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন। তাদের মধ্যে নিয়মিত শিক্ষার্থী সংখ্যা ২ লাখ ৯৭ হাজার ৬২৬ জন, অনিয়মিত শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৯ হাজার ৫০ জন। আর মানোন্নয়ন পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৫১ হাজার ১৫৯ জন। এই সেশনে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা সেশনজটের কবলে পড়েছেন।

সরকারি আজিজুল হক কলেজের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী অনিক হাসান বলেন, ‘মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হিসেবে সবারই চাওয়া থাকে দ্রুত পড়ালেখা শেষ করে পরিবারের হাল ধরা। আমরাও সেটাই চাই। আগামী বছর অসংখ্য চাকরির বিজ্ঞপ্তি আসবে। তবে আমাদের এখনো ফাইনাল পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা হয়নি। ফলে আমরা কোনো চাকরির সার্কুলারই পাব না। অথচ ২০২৩ সালে আমাদের অনার্স শেষ হওয়ার কথা ছিল।’

একই কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নুর নবী জানান, আমরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে অপরাধ করেছি কিনা জানি না। আমাদের সহপাঠীরা অনার্স শেষ করে চাকরিতে প্রবেশ করেছে। অথচ আমাদের ফাইনাল পরীক্ষার রুটিনই প্রকাশিত হয়নি। এতে একদিকে যেমন হতাশা তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে ভালো ভালো চাকরির বিজ্ঞপ্তি পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মো. এনামুল করিম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সেশনজট অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছিল। তবে করোনার কারণে আবারও সেশনজটে পড়ে যায় শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে এখনো বের হওয়া সম্ভব হয়নি। এরপর আবার জুলাই আন্দোলন। আন্দোলনের কারণে কয়েকমাস ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ছিল। এসব কারণে ২০১৯-২০ সেশনের ফাইনাল পরীক্ষা এখনো আয়োজন করা সম্ভব হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই না শিক্ষার্থীরা চাকরির কোনো বিজ্ঞপ্তি মিস করুক। এজন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে পরীক্ষা নেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। বিজি প্রেসের মাধ্যমে আমাদের প্রশ্নপত্র ছাপাতে হয়। আমরা তাদের দ্রুত প্রশ্নপত্র ছাপানোর অনুরোধ করলেও তারা তাদের শিডিউল অনুযায়ী প্রশ্ন ছাপায়। নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা না হওয়ার এটিও অন্যতম কারণ। আমরা চেষ্টা করছি আগামী বছরের মার্চের শেষ দিকে অথবা এপ্রিলের শুরু স্নাতকের ফাইনাল পরীক্ষা আয়োজন করার।’


সর্বশেষ সংবাদ