দলের নেতাকর্মীদের আচরণ সংযত রাখার নির্দেশ ঢাবি ছাত্রদল সভাপতির
- ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:১২ PM , আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:১২ PM
যতই ইমেজ সংকটে ফেলার চেষ্টা করা হোক না কেন নেতাকর্মীদের আচরণ সংযত রাখার নির্দেশ দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রদলের সভাপতি গণেশচন্দ্র রায় সাহস। আজ রবিবার (১০ নভেম্বর) দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে আয়োজিত এক অবস্থান কর্মসূচিতে এ কথা বলেন তিনি।
গণেশ চন্দ্র নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ফ্যাসিবাদের দোসররা ছাত্রদলের ইমেজকে সংকটে ফেলার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। সে ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না। আপনারা চালচলন ও আচার-আচরণ অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করবেন। কোনোভাবেই ফ্যাসিবাদের দোসরদের সুযোগ দেওয়া যাবে না।’
এর আগে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে হেনস্তাকারী ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী এবং ফ্যাসিবাদী আমলে শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় আসামিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবিতে মিছিল করে ছাত্রদল।
মিছিলটি কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে শুরু হয়ে দোয়েল চত্বর, রাজু ভাস্কর্য, কেন্দ্রীয় মসজিদ, মধুর ক্যান্টিন, ক্যাম্পাস শ্যাডো হয়ে রাজু ভাস্কর্যে এসে শেষ হয়।
গণেশ চন্দ্র আরও বলেন, ‘বিগত দিনগুলোতে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দিয়ে যেভাবে গেস্টরুম-গণরুম সংস্কৃতি কায়েম করে, জোর করে মিছিল-মিটিংয়ে নিয়ে গিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করেছিল; সাধারণ শিক্ষার্থীরা মনে করছে ছাত্রদলও তেমন করবে কী না।’
‘শিক্ষার্থীদের বলতে চাই। ছাত্রদল সবসময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সেন্টিমেন্টকে ধারণ করে রাজনীতি করবে। শিক্ষার্থীদের কোনোপ্রকার বিরক্তি হয়, পড়াশোনায় ব্যঘাত ঘটে, চাল-চলনে আঘাতপ্রাপ্ত হয়, এমন কোনো রাজনীতি ছাত্রদল অতীতেও করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘ছাত্রদলের রাজনীতি করতে হলে শিক্ষার্থীদের সেন্টিমেন্টকে মনে প্রাণে ধারণ করতে হবে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সুবিধা-অসুবিধা দেখতে হবে। এসব দেখে কষ্ট শিকার করে কেউ যদি ছাত্রদলের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হতে চায়, আমরা তাকে স্বাগত জানাব। কিন্তু কেউ যদি মনে করে, পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে ছাত্রদলের পতাকাতলে এসে আরাম-আয়েশে জীবন যাপন করবে, সে বোকার স্বর্গে বাস করছে।’
সম্প্রতি ক্যাম্পাসগুলোতে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ছাত্রদল মেধা, মনন ও সৃজনশীলতাকে ধারণ করে সামনের রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণ করতে চায়। ছাত্রদলের অভিভাবক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি আমাদের সিনিয়র পার্সন। আমরা বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে তারেক রহমানকে অভিহিত করি। সেই কর্মপরিকল্পনা যদি সমসাময়িক প্রেক্ষাপটের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে, তাহলে অনুমতি দেন। সেটা অবশ্যই শিক্ষার্থীবান্ধব হয়।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্রদল সবসময় নিজস্ব শক্তিতে বলীয়ান। তারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত এবং শিক্ষার সামগ্রিক পরিবেশ বিবেচনায় নিয়েই কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত ১৫ বছরে ছাত্রদল জেল-জুলুম, হামলা-মামলাসহ এমন কোনো নির্যাতন নেই, যে সহ্য করেনি। আমরা সে পরিস্থিতিতে এই পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছি। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নির্যাতন নিপীড়ন খুন-গুম ধর্ষণ করেছে, একটি ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করেছিল, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনুন। শেখ হাসিনাকে রেড নোটিশ জারি করে অতিদ্রুত বাংলাদেশের মাটিতে এনে বিচার করুন।’
অবস্থান কর্মসূচিতে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন,‘ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে ছাত্রলীগের দোসররা ছাত্রদল-ছাত্রজনতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তারা হলে হলে সংগঠিত হচ্ছে। ছাত্র রাজনীতিকে কলুষিত করে এখন চাচ্ছে বাংলাদেশে যেন আর কোনো ছাত্র রাজনীতি না হয়। যেহেতু তারা রাজনীতি করতে পারবে না, তাই অন্য কেউ যেন রাজনীতি করতে না পারে।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্রদল অঙ্গীকারবদ্ধ, বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আর কোনো টর্চার সেল হবে না। গণরুম সংস্কৃতি তৈরি হবে না। ক্যাম্পাসে হবে মেধা ও জ্ঞানের চর্চা। ছাত্রদল এই ইতিবাচক চর্চার মধ্যে শিক্ষার্থীদের পক্ষে লড়াই সংগ্রাম জারি রাখবে।’
অবস্থান কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি মাসুম বিল্লাহ, আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন শাওন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম আক্তার শুভ এবং সাংগঠনিক সম্পাদক নূর আলম ভুঁইয়া ইমন।